পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কাকা মুখে বালিশ চেপে ধরায় মরার ভান করেছিলাম, দাবি ট্যাংরা-কাণ্ডে অসুস্থ নাবালকের - TANGRA TRIPLE MURDER CASE

শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন নাবালক তাঁকে জানায়, সে পড়াশোনায় ভালো ছিল । সে দাবা খেলত । দাবাকেই সে তার ভবিষ্যৎ করতে চেয়েছিল ।

tangra triple murder case
শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে বিস্ফোরক দাবি নাবালকের (ফাইল ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 27, 2025, 4:37 PM IST

কলকাতা, 27 ফেব্রুয়ারি:ট্যাংরা খুন-কাণ্ডে ফের বিস্ফোরক নাবালক । বৃহস্পতিবার পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কাছে ওই নাবালক দাবি করেছে, সে নিয়মিত যোগা ও ব্যায়াম করত । তাই পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খেয়েও তার শরীরে কোনও অসুবিধা বা ঝিমুনি ভাব আসেনি । সে নাকি মরার অভিনয় করেছিল !

15 বছরের ওই কিশোর আরও দাবি করে, তার কাকা (প্রসূন দে) তার মুখে বালিশ চেপে ধরেছিলেন । সেই সময় সে মৃত্যুর অভিনয় করে নিজের শ্বাস চেপে ধরে রেখেছিল । পরে তার মৃত্যু হয়েছে এই ভেবে কাকা সেখান থেকে চলে যায় ৷ পরে সে উপরে গিয়ে দেখে, কাকা মা-কাকিমা ও বোনকে খুন করেছে ৷

ট্যাংরা খুন-কাণ্ড (ফাইল ছবি)

ওই নাবালক জানায়, এরপর কাকা তাকে দেখে নেয় ৷ সে বেঁচে আছে জানাজানি হওয়ার পর তার বাবা প্রণয় ও কাকা প্রসূন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে ওই রাতে ট্যাংরার বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৷ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এরপর প্রণয় ও প্রসূন দে তাকে নিয়ে গড়ফায় যান এবং সেখানে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মেরে নিজেদের জীবন শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ ওই নাবালকের থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই ঘটনা ঘটার আগেই ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিল সে । তবে তাতে তার কোনও সমস্যা হয়নি ।

ট্যাংরায় একই পরিবারের তিনজন খুনের ঘটনায় শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা নাবালককে হোমে পাঠাতে চাইছেন না । তাঁরা দে পরিবারের কোনও আত্মীয়ের কাছেই তাকে রাখতে চাইছেন । এই বিষয়ে পুলিশ ওই কিশোরের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেছে ৷ তবে দে পরিবারের আত্মীয়দের তরফ থেকে ইচিবাচক কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি । অর্থাৎ কেউ ওই নাবালককে নিজের কাছে রাখতে রাজি হচ্ছে না ৷

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটিকে তার দাদু-দিদার কাছে রাখতে চায় শিশু সুরক্ষা কমিশন । সেই বিষয়ে তার দাদু-দিদার সঙ্গে কমিশনের সদস্যরা কথা বলবেন । ছেলেটি যতদিন না সাবালক হচ্ছে, ততদিন সরকারি স্কিমে মাসে মাসে মাসোহারা পাবেন তাঁরা । যদি তাঁরা নাবালককে রাখতে শেষ পর্যন্ত রাজি না হন, কিশোরকে সেক্ষেত্রে একটি পরিবারের কাছে রাখা হবে ৷ ওই পরিবার নাবালকের ভরণপোষণের করতে রাজি রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী ।

শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে ওই নাবালক আরও দাবি করেছে, মাসখানেক আগে থেকে সে বুঝতে পেরেছিল পরিবারে টাকা পয়সার টান পড়েছে । ব্যবসা আর সেই ভাবে চলছে না । এই নিয়ে দে পরিবারে একাধিকবার মিটিং হয়েছিল । সেই মিটিংয়ে পরিবারের সকল সদস্যরা থাকলেও তাকে ও তার বোনকে থাকতে দেওয়া হয়নি । ওই নাবালক জানিয়েছে, যদি সে ওই মিটিংয়ে থাকত, তাহলে পরিবারের বাকি সদস্যদের বিকল্প কোনও পথ বা পরিকল্পনা দিতে পারত যে ব্যবসার ক্ষতি সামলে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তা নিয়ে ৷

শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, "নাবালকের গায়ে জোর ছিল তাই পায়েস খেয়েও তার কিছু হয়নি । ও এখনও বুঝতে পারছে না যে ওর পরিবারটা পুরো শেষ হয়ে গিয়েছে । কিন্তু পরে বুঝতে পারলে ওর মধ্যে একটা খারাপ লাগা কাজ করতে পারে । পরীক্ষাটা দিতে পারল না সে ৷ নাবালকের আক্ষেপ যে তার বাবা-কাকার ব্যবসাটা চলছিল না । সে তার পরিবারকে সাহায্য করতে চেয়েছিল । কিন্তু সে পারেনি ।"

তাঁর কথায়, "আমরা নাবালকের দাদু-দিদার সঙ্গে কথা বলব ৷ যাতে তাকে তারা নিজেদের কাছে রাখেন । কারণ, এখন ওই নাবালকের একটি ঘর লাগবে । তাকে আমরা হোমে পাঠাতে চাই না । সে পড়াশোনায় ভালো ছিল । সে দাবা খেলত । ভালোই খেলত । দাবাকেই তার ভবিষ্যৎ করতে চেয়েছিল । তবে সেটা হল না । যদি ওই নাবালকের দায়িত্ব কেউ না নেয়, তাহলে একজন দম্পতি রয়েছে । তারা তার দায়িত্ব নেবে ।" ট্যাংরা-কাণ্ডে কিশোর এখন এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৷ সেখানে তার সঙ্গে কথা বলতে যান শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন ও পুলিশ ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details