আসানসোল, 25 এপ্রিল:কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে দামোদর । ওপারে ধূসর বিহারীনাথ পাহাড় । আর দামোদরের দুইপাড়কে জুড়েছে একটি বাঁশের সেতু । ঠিক যেন ছবির মতোই সুন্দর । কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেও এই নড়বড়ে বাঁশের সেতু নিয়ে রয়েছে তিন জেলার মানুষের দুর্দশার গল্প । গত 50 বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রান্তিক এলাকার মানুষদের দাবি, দামোদরের উপরে এইস্থানে একটি পাকা সেতু নির্মিত হোক । প্রতিবারই ভোট এলে প্রতিশ্রুতি মেলে ঝুরঝুরি । কিন্তু ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পর আর কিছুই হয় না । নড়বড়ে বাঁশ-কাঠের সেতু দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয় তিন জেলার মানুষকে ।
এপারে পশ্চিম বর্ধমান আর ওই পারে বাঁকুড়া । ওই পথ দিয়েই সহজে যাওয়া যায় পুরুলিয়া জেলাতেও । যোগাযোগের মাধ্যম নড়বড়ে একটি বাঁশের সেতু । না-হলে ঘুরপথে প্রায় 30 থেকে 40 কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে আসা যাওয়া করতে হয় । বাঁকুড়ার শালতোড়া বিধানসভার প্রায় 30টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দার ভরসা এই সেতু । প্রতিদিনই তাঁদের দিনমজুরি করতে, সবজি বিক্রি করতে, ইস্কোতে চাকরি করতে এই পারে পশ্চিম বর্ধমানে আসতে হয় । এই বাঁশের নড়বড়ে সেতুই তাঁদের যোগাযোগ ও উপার্জনের মাধ্যম ।
বর্ষাকালে সেতু ভেঙে যায় । তখন নৌকাতে চড়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দামোদর পেরোতে হয় । আবার সন্ধের আগেই ফিরতে হয় বাড়ি । একটু রাত হয়ে গেলে সেই যোগাযোগের মাধ্যমও আর থাকে না ।
শুধু তাই নয়, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার এই প্রান্তিক অঞ্চলগুলির থেকে বাঁকুড়া কিংবা পুরুলিয়া সরকারি জেলা হাসপাতাল অনেক দূর । সেই তুলনায় মাত্র 10 কিলোমিটারের মধ্যেই আসানসোল জেলা হাসপাতাল । ফলে সহজেই বাসিন্দারা পৌঁছতে পারেন আসানসোলে । কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই বাঁশের সেতু । সকালে কোনওমতে চারচাকা গাড়ি পার করা গেলেও রাতবিরেতে আর কেউ ঝুঁকি নেন না । অতীতে এই বাঁশের সেতু থেকে গাড়ি পড়ে দামোদরে ভেসে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ।
তিন জেলার বাসিন্দাদের দাবি একটি পাকা সেতু হোক । কারণ এই স্থানে সেতু হলে তিন জেলার মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা আরও অনেক বেড়ে যাবে । উন্নতি হবে তিন জেলারই । এই দাবি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, ধরনা অবস্থান হয়েছে । আশ্বাস মিলেছে । কিন্তু অভিযোগ, কেউ করেনি কিছুই । না কেন্দ্র, না রাজ্য।