পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

তৃণমূল নয়, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষালের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে - Lok Sabha Election 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

Lok Sabha Election 2024: বিজেপির গড় বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র ৷ এই আসনে বামেরা ভরসা রেখেছে প্রাক্তন অধ্যক্ষের উপর ৷ কেন শিক্ষাবিদ হয়ে রাজনীতিতে ? কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাঁর সামনে ৷ ইটিভি ভারতের কাছে অকপট সুকৃতি ঘোষাল ৷

Lok Sabha Election 2024
Lok Sabha Election 2024

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 22, 2024, 5:25 PM IST

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল

দুর্গাপুর, 22 এপ্রিল: একসময় লালদুর্গ বলে পরিচিত ছিল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র ৷ 2014 সালের আগে পর্যন্ত সিপিএম রাজ করেছে এখানে ৷ তবে 2014 সালে পরিবর্তন ঘটে ৷ বামেদের দুর্গে প্রবেশ ঘটে তৃণমূলের ৷ লোকসভা নির্বাচনের জয়লাভ করে এই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে ঘাসফুল শিবির ৷ তাদের রাজত্বকাল বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ৷ পরের নির্বাচনে অর্থাৎ 2019 সালে আবার তৃণমূলকে সরিয়ে বাগডোর আসে বিজেপির হাতে ৷ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে গেরুয়া শিবিরের টিকিটে জয়ী হন ৷

এবারের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল ৷ একদিকে দিলীপ ঘোষ ও অপরদিকে রয়েছেন 1983 বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ ৷ 10 বছর পর আবারও নিজেদের দুর্গ ফিরে পেতে সিপিএম ময়দানে নামিয়েছেন অত্যন্ত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত ড: সুকৃতি ঘোষালকে ৷ বর্ধমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তিনি ৷

রাস্তায় নেমে রাজনীতি না করলেও বাম আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত এই প্রার্থী ৷ বামেদের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গেও সখ্যতা রয়েছে তাঁর ৷ বর্ধমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন সুকৃতি ঘোষাল ৷ এই জেলাতেই নিজের হাতে গড়েছেন প্রচুর ছাত্রীকে ৷ তাঁদের সামনেই আজ তিনি দাঁড়িয়ে প্রার্থী হয়ে ৷ ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে সিপিএম প্রার্থী জানালেন এবারের নির্বাচনে লড়াইটা প্রধান কার বিরুদ্ধে ৷

তিনি বলেন, "ভারতীয় জনতা পার্টিকে জিজ্ঞাসা করুন তাদের মূল শত্রু কে? দেখুন তারা বলবেন বামেরাই তাদের প্রধান শত্রু । সুতরাং আমাদের মূল লড়াইটা বিজেপির বিরুদ্ধেই। তবে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে আমরা আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারছি না । এর কারণ আমি ব্যাখ্যা করছি না ৷ তবে তা সকলেই ভালো করে জানেন। পাঁচিল টপকে আজকে যিনি বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাচ্ছেন বা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাচ্ছেন, তারা দলবদল করেই টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন। দল ভাঙিয়ে একে অপরকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে । কয়েকদিন আগে বাইরন বিশ্বাসের ঘটনাও আপনারা দেখলেন । তবে আমাদের ডাক বিজেপিকে আটকাতে হবে ।"

একদিকে মোদির গ্যারান্টি, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ারেন্টি, তাহলে বামেদের প্রচারের মূল ইস্যু কী?

এই শিক্ষাবিদের কথায়, "2019 সালে মোদি গ্যারান্টি দিয়েছিলেন সারদা-সহ চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি দেবে। কিন্তু তা হয়নি। অন্যদিকে 2011 সালের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ক্ষমতায় আসেন তখন একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল 'শিক্ষা ক্ষেত্রে অনীলায়ন'। আমি জানি না অনিলায়ন শব্দের অর্থ কী? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোখার তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটা কি হয়েছে? আজ দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দলীয় সভা করছেন ৷ আবার সেটা নিয়ে রাজ্যপাল দেখছি উপাচার্য অপসারণ করছেন । তাহলে সর্বক্ষেত্রে আমরা দেখছি কী গ্যারান্টি কী ওয়ারেন্টি দুটোই একই ব্যাপার । আসলে এগুলো হচ্ছে জুমলা । আচ্ছে দিন যেমন একটা জুমলা, এটাও সেই জুমলা ।"

কী চ্যালেঞ্জ নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছেন ?

সিপিআইএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল জানান, "মানুষের মানসিকতাকে বদলানোই চ্যালেঞ্জ তাঁদের কাছে । তিনি বলেন, "আমার রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচুর আছে । কিন্তু সেই বক্তব্যকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা এটাই চ্যালেঞ্জ । কেউ একটা ওখানে রাম মন্দির করছে বলে আমরা এখানে একটা জগন্নাথ মন্দির করব এরকম প্রতিযোগিতামূলক ধর্মীয় সুড়সুড়িতে আমরা নেই । আমরা মানুষের রুটি-রুজি, আবাসন, শিক্ষা, দারিদ্রতা, বৈষম্য এইসব বিষয়গুলো তুলে ধরব । এগুলো সব জলজ্যান্ত ইস্যু। এর সমাধান কারা করতে পারে? কাদেরকে বিশ্বাস করা উচিত? এ নিয়ে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত আছে । কেউ মনে করেন এগুলো করতে পারে তৃণমূল, কেউ মনে করেন করতে পারে বিজেপি ৷ প্রকৃত বিকল্প হিসাবে এই সমস্যার সমাধান করতে যে সক্ষম এবং দায়বদ্ধ, তা মানুষের মনে আনাটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ।"

শিক্ষিত মানুষের আজ অনেকেই রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন ৷ সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে শিক্ষাবিদ সুকৃতি ঘোষাল লোকসভার প্রার্থী । কেন রাজনীতিতে আজ মাফিয়া গুন্ডাদের দাপাদাপি?

উত্তরে প্রার্থী বলেন, "বহুদিন আগে দার্শনিক প্লেটোর একটা উক্তি পড়েছিলাম । তিনি বলেছিলেন, যদি আপনি রাজনীতি না-করেন তাহলে আপনি অন্যের দ্বারা শাসিত হবেন। অর্থাৎ যদি শিক্ষিত মানুষেরা রাজনীতিতে না আসেন, তাহলে স্থান শূন্য থেকে যাবে না। সেই জায়গায় মাফিয়া, গুন্ডা ও অযোগ্য ব্যক্তিরা এসে রাজত্ব করবে । তাদের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে । যারা যোগ্য তারা মুখ ফিরিয়ে শুধু চলে যাবেন তাহলে অযোগ্যরা সেই জায়গাটা কেন ছেড়ে দেবেন?"

আগামিদিনে সুকৃতি ঘোষালের লক্ষ্য কী ?

এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, "মগজে শান দেওয়ার জন্য লেখাপড়া যেমন করেছি, তার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিও করেছি । বহুদিন আমি পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম । আমার কাছে রাজনীতি মানে কোন কিছু পাওয়া নয়। সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে পারা, অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করা। গোটা বিশ্বের জঞ্জাল সাফ করতে না-পারলেও, আমার সামান্য বাগানটুকুও যদি পরিষ্কার রাখতে পারি, সেটাই আমার সার্থকতা ।"

আরও পড়ুন:

  1. রাজ্যের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে বিজেপি-গড়ে ঘাসফুল ফোটানোর চ্যালেঞ্জ প্রকাশের
  2. ছাব্বিশের ইউএসপি! বালুরঘাটের কুর্সি কি ফের পদ্মের, নাকি জমি ঘাসফুলের ?
  3. দার্জিলিংয়ে রাজু বিস্তা, মুনিষ তামাং ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী গোপাল লামাও কোটিপতি

ABOUT THE AUTHOR

...view details