পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বন্ধ কোটি টাকার চারাগাছের রফতানি, বাংলাদেশের প্রভাব বলাগড়ের নার্সারি ইন্ডাস্ট্রিতে

বাংলাদেশের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শীতের মরশুমের ব্যবসা নিয়ে চিন্তায় বলাগড়ের নার্সারির ব্যবসায়ীরা ৷ এমনকি বাংলাদেশের বাজারে আটকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকাও ৷

Balagarh Nursery Business
বাংলাদেশের প্রভাব বলাগড়ের নার্সারি ইন্ডাস্ট্রিতে ৷ (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 6 hours ago

বলাগড়, 10 ডিসেম্বর: সারা বছর ফুল, ফল ও বাহারি গাছ বিক্রি করে একটা বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে হুগলির বলাগড়ের নার্সারি ব্যবসায়ীরা ৷ এবার সেই আয়ের একটা অংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ৷

বলাগড়, জিরাট ও খামগাছি এলাকার 2 হাজার নার্সারি থেকে কোটি-কোটি টাকার গাছ বাংলাদেশে যায় ৷ বাহারি গাছ ও নানান রকম ফুল, ফলের গাছ রফতানি করা হয় ৷ কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে চারাগাছের ট্রাক আটকে থাকছে দিনের পর দিন ৷ এর ফলে গাছ বাংলাদেশে পৌঁছলেও, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা গাছের টাকাও দিতে রাজি হচ্ছেন না ৷

বাংলাদেশের ভারত বিরোধিতার প্রভাব বলাগড়ের নার্সারি ইন্ডাস্ট্রিতে ৷ (ইটিভি ভারত)

এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার আগে ও পরে ৷ আর বর্তমানে কোনও গাড়িই সীমান্তের ওপারে পাঠানো হচ্ছে না ৷ এর ফলে বিরাট অংকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা জানেন না ব্যবসায়ীরা ৷ তবে, বর্তমানে বাংলাদেশে গাছ না-পাঠালেও আগের পাঠানো গাছের টাকা বহু নার্সারি ব্যবসায়ী পাননি ৷

তাই এই মুহূর্তে নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড-সহ অন্যান্য বিদেশি বাজারের উপর ভরসা করতে হচ্ছে বলাগড়, জিরাট ও খামগাছির ব্যবসায়ীদের ৷ সঙ্গে রয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বাজার ৷ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্রের পুনে-সহ একাধিক শহরে এইসব নার্সারি থেকে গাছ রফতানি করা হয় ৷ এটা শীতকালীন মরশুমি ফুলের সময় ৷ তাই সেইরকম ফুলের চারাগাছ নার্সারিতে তৈরি করা হচ্ছে ৷ কিন্তু, বাংলাদেশ হুগলি জেলার এই নার্সারিগুলির একটা বড় বাজার ছিল ৷ কিন্তু, সেই বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন গাছের বিক্রি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা ৷

বলাগড়ের নার্সারিতে বাহারি গাছের চারা ৷ (নিজস্ব চিত্র)

খামারগাছির নার্সারি ব্যবসায়ী গৌতম অধিকারী দেশ-বিদেশে গাছ পাঠান। তিনি বলেন, "ভারতের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতের একাধিক শহরে বিভিন্ন ধরনের গাছ পাঠাই ৷ দেশের বাইরে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশে ফুল, ফল ও বাহারি পাতার গাছের ট্রাক পাঠানো হয় ৷ অর্ডার অনুযায়ী গাছ পাঠিয়ে দিলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসে ৷ সারা বছরে আমারই প্রায় 30-35টি ট্রাক করে গাছ যায় ৷ বাংলাদেশের সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যেই বর্ডারে গিয়ে গাছ বোঝাই গাড়ি আটকে থাকছে ৷ তার ফলে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ টাকাও দিতে চাইছেন না ওখানকার ব্যবসায়ীরা ৷ আমার সারা বছরে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয় ৷ আমার মতো আরও ব্যবসায়ী আছেন ৷’’

নার্সারি ব্যবসায়ী নকুল সরকার শীতের মরশুমে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশে বহু অংশে ফুল ও ফলের চারা গাছ রফতানি করেন ৷ তিনি বলেন, "বর্তমানে বাংলাদেশে যাচ্ছে না কোনও গাড়ি ৷ আমাদের ব্যবসাও সেভাবে হচ্ছে না ৷ আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা ও অংসখ্য ফুল ও বাহারি পাতার ইন্ডোর প্লান্ট আমরা রফতানি করি ৷ এখন নেপাল, ভুটান আর ভারতের বিভিন্ন শহরে গাছ যাচ্ছে ৷"

বাহারি ইন্ডোর প্ল্যান্টের পসরা নার্সারিতে ৷ (নিজস্ব চিত্র)

তবে, এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিকাঠামো ৷ ভালো মানের মাটি না-পাওয়া, উর্বর জমির অভাব দেখা দিচ্ছে ৷ ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, যে মাটি তাঁরা নার্সারির গাছ তৈরির জন্য পান, তা ঊর্বর নয় ৷ মাটিকে ঊর্বর করে তারপর চারাগাছ তৈরি করা বেশ খরচ সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায় ৷ সেখানেই বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বর্তমানে বাংলাদেশের মতো নার্সারির গাছের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details