হায়দরাবাদ: হেপাটাইটিস হল লিভারের সংক্রমণ যার ফলে প্রদাহ হয় ৷ হেপাটাইটিস-কে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় ৷ যেমন হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। সময়মতো সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে হেপাটাইটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে লিভারকে দুর্বল করে দেয় এবং একটা সময়ের যকৃত বা লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয় ৷ প্রতি বছর 28শে জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয় ৷ 2023 সালে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস 'এক জীবন, এক লিভার' থিম হিসাবে পালন করা হচ্ছে।
আগে থেকে লিভারের যত্ন না নিলে পরবর্তী সময় তা আরও ক্ষতির দিকে যেতে পারে ৷ বিশেষ করে যদি হেপাটাইটিস বি এবং সি সময়মতো শনাক্ত না করা হয় এবং সঠিকভাবে চিকিত্সা করা না হয় তবে এটি লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, লিভারের সংক্রমণ যা ছয় মাসেরও কম সময় ধরে থাকে তাকে তীব্র বলে ধরা হয় এবং ছয় মাসের বেশি স্থায়ী সংক্রমণকে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বলে ধরা হয়।
হেপাটাইটিস এ এবং ই: দূষিত পানীয় জল এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ। হেপাটাইটিস এ এবং ই হেপাটাইটিস বি এবং সি থেকে, কম লিভারের ক্ষতি করে। সুষম খাদ্য এবং সঠিক চিকিত্সা অনুসরণ করলেই এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
হেপাটাইটিস বি এবং সি: হেপাটাইটিস বি এবং সি লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস যেমন, টুথব্রাশ এবং রেজার ইত্যাদির ব্যবহার অপর কোনও ব্যক্তি করলে, তাঁর শরীরেও এই রোগ বাসা বাঁধতে পারে ৷ এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তদান করলেও সেই রোগ অপর ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে যেতে পারে ৷ অন্যদিকে, যারা ইনজেকশনের মাধ্য মাদক সেবন করেন বা অরক্ষিত যৌন সঙ্গম করেন তাঁদের হেপাটাইটিস বি এবং সি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
হেপাটাইটিস ডি: সাধারণত, একজন ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি এবং সি দ্বারা আক্রান্ত হলে হেপাটাইটিস ডি হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। হেপাটাইটিস ডি-এর ক্ষেত্রে লিভারে প্রদাহ দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিসের গুরুতর লক্ষণ, যা প্রায় একই রকম:
- পেটে ব্যথা।
- ঘন ঘন বদহজম এবং ডায়রিয়া।
- জন্ডিস, ত্বক, নখ ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব এবং বমি ৷
- খিদে কমে যাওয়া এবং ক্রমাগত ওজন হ্রাস।
- জ্বর ৷
- শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রম ছাড়াই ক্লান্তি অনুভব করা।
- গাঢ়-হলুদ রঙের প্রস্রাব।
- জয়েন্টে ব্যথা ৷
আপনি যদি উপরের উপসর্গগুলির মধ্যে কোনওটি অনুভব করেন তবে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। হেপাটাইটিস এ এবং ই শনাক্ত করতে একটি আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সনাক্ত করতে ডিএনএ-স্তর পরীক্ষা করা হয়। সুতরাং, হেপাটাইটিস সি-এর জন্য আরএনএ পরীক্ষা এবং জিনোটাইপিং পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়াও লিভার ফাংশন টেস্ট, সিবিসি এবং কিডনি ফাংশন পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিসের বিভাগগুলির জন্য চিকিত্সার প্রকারগুলি হল
- হেপাটাইটিস এ এবং ই: হেপাটাইটিস এ- রোগের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ে শরীর নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যায় ৷ তবে রোগীর উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, রোগীদের অবিরাম বমি এবং ডায়রিয়া বা অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। হেপাটাইটিস ই-এর চিকিত্সা হেপাটাইটিস এ-এর মতোই, তবে গর্ভবতী মহিলাদের হেপাটাইটিস ই-এর ঝুঁকি বেশি।
- হেপাটাইটিস বি: এই ভাইরাসের সংক্রমণও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে, সমস্যা সারাজীবন চলতে পারে। হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ যদি 6 মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে একে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি বলা হয়। এই সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ইনজেকশন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। তা সত্ত্বেও, হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার হার খুবই কম। রোগীকে প্রতি তিন মাস পরপর পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং তাঁদের আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। হেপাটাইটিস বি-এর কারণে লিভার ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিস হতে পারে ৷ তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
- হেপাটাইটিস সি: নতুন ওষুধের সহজলভ্যতার সঙ্গে এখন হেপাটাইটিস সি-এর চিকিৎসা করা সম্ভব। এই ওষুধগুলির সাফল্যের হার প্রায় 98 শতাংশ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম।
- হেপাটাইটিস ডি: দেশে হেপাটাইটিস ডি-এর খুব রোগী খুব কম দেখা যায়। হেপাটাইটিস ডি-এর চিকিৎসার জন্য ওষুধ পাওয়া যায় ৷