হায়দরাবাদ: যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছি ৷ তা সে কর্মক্ষেত্র হোক, বা ব্যক্তিগত জীবনে ৷ বিশেষত কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ কাজের চাপ সামলে আর শরীরচর্চা করে ওঠা হয় না, তাতেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে ৷ তারপর যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে তো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ৷ বিশেষত যাঁরা সকাল 9টা থেকে বিকাল 5টা পর্যন্ত একটানা অফিসে বসে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায় ৷ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়ে ৷ যা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷
স্ট্রোক কী ?
মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত প্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হয় তখনই স্ট্রোক হয় । প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের হয় ৷ প্রথমটি হল ইস্কেমিক স্ট্রোক, যা সবচেয়ে সাধারণ ৷ রক্ত জমাট বাঁধা ধমনী থেকে সৃষ্ট । এখানে, মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছতে বাধা পায় ।
হেমোরেজিক স্ট্রোক মস্তিস্কের রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে । উচ্চ রক্তচাপের কারণে সাধারণত এই স্ট্রেক হয় ৷
তৃতীয়ত হল ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ যাকে ‘মিনি স্ট্রোক’ও বলা হয় । এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কিছুক্ষণের জন্য বাধা দেয় । আবারও ঠিক তা ঠিক হয়ে যায় ৷ তবে এটি স্ট্রোকের পূর্বাভাস বলেলেও ভুল হয় না ৷
সম্প্রতি একটি সমীক্ষার করেন কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনির্ভাসিটির (কেজিএমঅউ) নিউরোলজির বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আরকে গর্গ ৷ সেই রিপোর্টে তিনি বলেন, "45 বছরের কম বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়েছে ৷ যার সাধারণ কারণ হল রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা । 40-50 বছরের মধ্যে যাদের বয়স তাঁরা কর্মক্ষেত্রে সব থেকে বেশি চাপের মধ্যে থাকেন ৷ অনিয়মিত খাদ্যাভাস, শারিরীক পরিশ্রম না-করার কারণেই বাড়ছে ডায়াবেটিস ৷ যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷" প্রফেসর গর্গ আরও জানান, স্ট্রোকের বেশ কয়েকটি লক্ষণ থাকে ৷ সেইগুলি অবহেলা করলেই বিপদ ৷ অনেক সময়েই স্ট্রোকের আগে বেশ কয়েক'f লক্ষণ দেখা যায় ৷ অনেকেই কাজের চাপে এড়িয়ে যান লক্ষণগুলি ৷ তাতেই বাড়ে বিপদ ৷
স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ কী ?সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অধ্যাপক গর্গ ৷ তিনি বলেন"মুখ, হাত বা পা বিশেষত শরীরের একপাশ হঠাৎ অসাড় বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে । কখনও কখনও কথা বলতে বা কথা জড়িয়ে যাওয়ার সমস্যা হয় ৷ দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়, হাঁটতে সমস্যা, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা ৷ এই সবই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ ৷"
এই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি মেম্বার প্রফেসর কাউসার উসমান জানান, কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ কাজের চাপও উচ্চরক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ৷ তাঁর কথার রেশটেনেই এসসি ত্রিবেদী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হাসপাতালের সিনিয়র স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতা শুক্লা বলেন, "গর্ভবতী মহিলারাও উচ্চরক্তচাপ এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভোগেন। যা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের (haemorrhagic stroke) সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয় ৷" তাই চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে সেগুলি অবহেলা না-করা শ্রেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷