করোনার নতুন ঢেউ শুধু বড়দেরই নয়, শিশুদেরও আক্রান্ত করছে । এবার তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলেও, তা বড়দের তুলনায় কম গুরুতর । তারা আরও দ্রুত সেরে ওঠে । কিন্তু কয়েকজন শিশুর মধ্যে করোনা থেকে সেরে ওঠার সময় মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম (এমআইএস-সি) নামে একটি বিষয় লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকরা । এনিয়ে ইটিভি ভারত সুখীভব টিম কথা বলেছিল হায়দ্রাবাদের রেনবো চিলড্রেন্স হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বিজয়ানন্দ জামালপুরীর সঙ্গে । তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি ঘটতে পারে আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর । এর কারণ, শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় ইনফ্লেমেশনের জন্ম দেয় ।”
সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে "হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, কিডনি, মস্তিষ্ক, ত্বক, চোখ বা পাচনক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গগুলিতে ইনফ্লেমেশন হয় । এমআইএস-সি হলে শিশুদের মধ্যে নানা উপসর্গ দেখা যায় ৷ যেমন পেটে যন্ত্রণা, বমি, ডায়রিয়া, ঘাড়ে ব্যাথা, রাশ, লাল চোখ বা অতিরিক্ত ক্লান্তি ।"
এই সমস্যা নির্ণয় করতে উপসর্গ অনুযায়ী রক্ত বা মূত্রপরীক্ষা, স্ক্যান এবং অন্যান্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় । রোগনির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় চিকিৎসা । সুতরাং আপনার শিশুর যদি কোভিড থেকে সেরে ওঠার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর প্রবল জ্বর হতে থাকে (প্রায় 103 ), সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
এমআইএস-সি ছাড়াও, শিশুদের মধ্যে পোস্ট-ভাইরাল ক্লান্তি থাকতে পারে বহু সপ্তাহ ধরে, তবে বড়দের তুলনায় সেটা তেমন কিছু নয় ।
কীভাবে আটকানো যায়?
আমরা সবসময়ই বলি, "উপশমের থেকে প্রতিরোধই শ্রেয় ৷" তাই শিশুদের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন । এনিয়ে কয়েকটি পদক্ষেপের বিষয়ে জানালেন ড. বিজয়ানন্দ ।
- যেহেতু বড়রাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে বাইরে যান ৷ সেজন্য তাঁদের অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে ।
- এখন 18 বছরের উপরে হলেই ভ্যাকসিন নেওয়া যাচ্ছে । স্লট পেলেই ভ্যাকসিন নিয়ে নিন ৷ যাতে আপনি আক্রান্ত হয়ে বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়ান ।
- শিশুদেরও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার হাত ধোওয়া এবং রেসপিরেটরি হাইজিন মেনে চলতে হবে । দুই বছরের উপরে সমস্ত শিশুকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে সিডিসি ।
- জমায়েত, বার্থ ডে পার্টি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে ।
- এই পরিস্থিতিতে বাবা-মাকে সতর্ক নজর রাখতে হবে । শিশুদের মৃদু সংক্রমণ হলেও যথাযথ যত্ন নিতেই হবে, কারণ তারা ভাইরাসের বাহক হয়ে পরিবারের অন্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে ।
শিশু যদি করোনা পজ়িটিভ হয়
যদি আপনি মনে করেন যে আপনার সন্তান ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে থাকতে পারে, অথবা তার জ্বর, গলা ব্যাথা, কাশি বা বমি-ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাহলে করোনা পরীক্ষা করান । যদি তারা পজ়িটিভ হয়, অথবা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও একইরকমের উপসর্গ রয়েছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন । মৃদু উপসর্গের ক্ষেত্রে ভিডিয়ো বা টেলি কনসাল্টেশন নেওয়া যেতে পারে । শিশুর খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর রাখুন । নিশ্চিত করুন তারা যেন স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করে এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় খায় । পাশাপাশি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাও চলবে । বড়দের আর ছোটদের ওষুধ একধরনের নয় । তাই শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য আপনার চিকিৎসক বা পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ নিন । নিয়মিত তাদের শরীরের তাপমাত্রা এবং অক্সিজেন লেভেল চেক করুন আর চিকিৎসককে তার আপডেট দিতে থাকুন । যদি শিশুর তিনদিনের বেশি জ্বর থাকে, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, শ্বাস নিতে সমস্যা, ক্লান্তি আসে, ডায়রিয়া হয় বা অক্সিজেন লেভেল 95 শতাংশের নিচে নেমে যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে কি না । দ্রুত পদক্ষেপ করতেই হবে । চিকিৎসায় একমুহূর্ত বিলম্ব করবেন না ।