করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বহু মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরছেন । অনেকে আবার বাড়িতে থেকেই সফলভাবে রোগ সারাচ্ছেন । তবে করোনা থেকে সেরে উঠলেও কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে ৷ যার একটা হল দুর্বলতা । মানুষ বলছেন যে, তাঁদের সারাদিন ধরে ঝিমুনি, ক্লান্তি ও দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে । এই সমস্যা এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আরও জানতে ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলেছে ইন্দোরের অ্যাপল হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক সঞ্জয় কে জৈনের সঙ্গে ।
সেরে ওঠার পর কেন দুর্বলতা থাকছে ?
সঞ্জয় বলেন, যে দুর্বলতার নানা কারণ থাকতে পারে । তার কয়েকটি হল:
সমস্ত ভাইরাল অসুখের ক্ষেত্রেই কিছুটা দুর্বলতা থাকে । কিন্তু করোনার জন্য দায়ী সার্স-কোভ-2 খুবই সংক্রামক হওয়ায় তা মানুষকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করছে এবং দুর্বলতাকে দীর্ঘায়িত করছে ।
যেহেতু আক্রান্তদের, বিশেষ করে যাঁদের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়েছে, তাঁদের কড়া অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ, এমনকি স্টেরয়েডও দেওয়া হচ্ছে । সুতরাং এতগুলো ওষুধের প্রভাবও রোগীর মধ্যে থাকছে ।
চিকিৎসা চলাকালীন আক্রান্ত ব্যক্তির খিদে কমে যায় এবং কখনও কখনও স্বাদও চলে যায় । এর ফলে তাঁদের বেশি খেতে ইচ্ছে করে না । সেরে ওঠার পরেও স্বাভাবিক খিদে ফিরে আসতে 4-6 সপ্তাহও লেগে যেতে পারে ।
কখনও কখনও কোভিডের সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও দুর্বলতার কারণ হতে পারে । এক্ষেত্রে হেপাটাইটিস, ওষুধের জেরে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার অথবা আগে থেকে হওয়া ডায়াবিটিস অনেকটা বেড়ে যেতে পারে ৷ যার ফলে রোগীর আরও বেশি ডোজ়ের ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় ।
ভাইরাস প্রবেশ করলেই আমাদের শরীর সমস্তরকমভাবে তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে ৷ যা ক্লান্তিকর । এবং ভাইরাস আমাদের শরীরে এতটাই প্রভাব ফেলে, যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ।
আরও পড়ুন,করোনায় সামান্য স্বস্তি ; দেশে দৈনিক সংক্রমণ কমে 3.43 লাখ, মৃত 4000
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবও শরীরের উপর পড়ে । নতুন স্ট্রেন অনেকটা আতঙ্ক আর উদ্বেগ সঙ্গে করে এনেছে । পরিসংখ্যান আতঙ্কের জন্ম দিতে পারে আর এমন অসুখ থেকে সেরে ওঠাও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে । এতে দুর্বলতা আরও বাড়ে ।
- এর মোকাবিলা কীভাবে করা যায়?
আমরা বলছি যে করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে দুর্বলতাটা দীর্ঘায়িত হয় । 14 দিনে সেরে ওঠার পরও এটা থাকতে পারে । এর মোকাবিলায় সঞ্জয় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:
- সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল রোগীকে চাঙ্গা রাখা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা । ড. সঞ্জয়ের কথায়, “যখনই আমি রোগীদের দেখতে যাই, আমি তাঁদের মনে করিয়ে দিই যে তাঁরা ভাল আছেন এবং দ্রুত সেরে উঠবেন । আমি চাই না যে রোগটা রোগীর মনের মধ্যেও ঢুকে পড়ুক।” সুতরাং রোগীকে আশ্বস্ত করা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতেই হবে ।
- সেরে ওঠার পর স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া শুরু করা উচিত । দেখতে হবে যাতে হাই-প্রোটিন ডায়েট হয়, যাতে ফুসফুসের টিস্যুর ক্ষতি মেরামত হয় । সুতরাং রুটিন খাওয়াদাওয়ার বাইরে দুধ, পনির, বাদাম ইত্যাদি দেওয়া হয় । এছাড়াও রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ভিটামিন আর জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টও দেওয়া যেতে পারে ।
- ব্যায়ামও গুরুত্বপূর্ণ । স্পাইরোমিটার যন্ত্র (যাতে তিনটি বল থাকে) ব্যবহার এবং প্রাণায়ামের মাধ্যমেও ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে ।
- নেগেটিভিটি থেকে দূরে থাকুন । কিছুদিনের জন্য খবরের কাগজ পড়া বা খবরের চ্যানেল দেখা বন্ধ রাখুন । সোশাল মিডিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করুন । তার বদলে সিনেমা বা টিভি সিরিজ় দেখুন, বই পড়ুন, যাতে আপনার মন শান্ত ও পজ়িটিভ থাকে । রোগীদের সঙ্গে দুঃখজনক বা অবসাদমূলক কোনওকিছু নিয়ে আলোচনা করবেন না । এতে তাঁদের সেরে ওঠায় বাধা সৃষ্টি হয় ।