আপনার শরীর যেধরনের খাবারকে সহ্য করে এবং পুষ্টিকে ব্যবহার করে, তার উপর প্রভাব বিস্তার করে ক্যানসার ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার খাওয়াদাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে । পুষ্টি শিক্ষায় 21 বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নিউট্রিশনিস্ট রোহিনী ডিনিজের সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলেছিল ETV ভারত সুখীভব ।
চিকিৎসার আগে, চিকিৎসা চলাকালীন ও চিকিৎসার পর সঠিক খাদ্যগ্রহণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি একজন ব্যক্তি আরও ভালো এবং উজ্জীবিত অনুভব করেন, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ফের তৈরি হয়, সঠিক ওজন বজায় থাকে বা হারানো ওজন ফেরত পাওয়া যায়, চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোকে সামাল দিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায় ।
ভালোভাবে খাওয়ার অর্থ বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানীয় খাওয়া, যা আপনার শরীরকে রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে । সঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করলে রোগীদের ভালভাবে জীবনধারণ করা সক্ষম ।
যখন একজন সুস্থ রয়েছেন, তখন প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ক্যালোরির জন্য পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়া করাটা সমস্যা নয় । কিন্তু যখন ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়, তখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে বা অসুস্থ অনুভব করলে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করা কঠিন হয়ে পড়ে । ক্যান্সার চিকিৎসার সময় শরীরে শক্তি আনতে এবং রোগ ও তার চিকিৎসার প্রভাব সহ্য করতে খাওয়াদাওয়া বদলাতেও হতে পারে । এর অর্থ সেইসব জিনিস খাওয়াও, সুস্থ থাকলে যেগুলো সচরাচর খেতে বলা হয় না ।
শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য প্রাথমিক শক্তির উৎস কার্বোহাইড্রেট যা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে । মাটির নিচে জন্মানো শ্বেতসারযুক্ত সবজি ও গোটা শস্য এক্ষেত্রে ভালো । পরিশোধিত চিনি এড়িয়ে চলা উচিত এবং সামান্য পরিমাণে গুড় বা মধু ব্যবহার করা যেতে পারে অতিরিক্ত ক্যালোরি ও স্বাদের জন্য । এটা করা যেতে পারে বিশেষ করে তখন, যখন খিদে নেই বা বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া যাচ্ছে না ।
অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের কোষ ও টিস্যুর মেরামতির ও বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য বেশি প্রোটিন প্রয়োজন হয় । প্রোটিন অপর্যাপ্ত হলে ওজন কমা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার জন্য সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে । প্রোটিনের ভালো উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ, ডিম, মটরশুঁটি, ডাল, বাদাম, পিনাট বাটার, ও তাহিনি (তিল বীজের মাখন) । দুগ্ধজাত দ্রব্য, রেড মিট ও চিকেন এড়িয়ে চলুন ।
ফ্যাটও পুষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ তারা শক্তির উৎস, টিস্যুগুলোকে মেরামতি করে এবং রক্তের মাধ্যমে ভিটামিন A, D, E ও ভিটামিন-K শোষণ ও পরিবহণে সাহায্য করে ।
সঠিকভাবে কাজ করতে কোষগুলির প্রয়োজন সামান্য পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ । ভিটামিন A, C, ও E এবং সেলেনিয়াম, ও জিঙ্কের মতো খনিজ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে এবং ফ্রি ব়্যাডিক্যালসের ক্ষতির হাত থেকে কোষকে রক্ষা করে । পুষ্টিগুণ এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট – উভয়েরই ভাল উৎস হল ফল ও সবজি । ক্যানসার চিকিৎসা চলাকালীন এদের খাবারের তালিকায় যোগ করা উচিত ।
জল ও তরল পদার্থও স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় এবং কোষের সক্রিয়তার জন্যও এদের দরকার । কম জল খাওয়া বা বমি ও ডায়রিয়ার মাধ্যমে শরীরের জল বেরিয়ে গেলে ডিহাইড্রেশন হয়, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে । ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন সারাদিনে অন্যান্য পানীয়ে সঙ্গে সাত-আট গ্লাস জল খাওয়াটাও নিশ্চিত করতে হবে । ক্যানসার চিকিৎসা চলাকালীন বমি বা ডায়রিয়া হলে শরীরে অতিরিক্ত জলের জোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।