সকলেই এই বিষয়ে সচেতন যে স্বাস্থ্যই সম্পদ ৷ নীতি আয়োগ তার সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছে যে , ভারত বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের খাতে দারুণ অগ্রগতি অর্জন করবে ৷ এর কারণ, এই ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলিতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ তৈরি হতে চলেছে ৷ এমন একটা সময় যখন দেশ প্যানডেমিকের কবলে রয়েছে ৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংক্রামক ও অ-সংক্রামক রোগও ৷ সেই সময় এই ধরনের একটি রিপোর্ট বেশ অবাক করে দিয়েছে ৷
নীতি আয়োগ জানিয়েছে যে , দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের 80 শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে হাসপাতাল শিল্পের ৷ এই শিল্প প্রতি বছর 16 থেকে 17 শতাংশ বৃদ্ধি করছে ৷ ওই রিপোর্টে জোর দিয়ে জানানো হয়েছে যে , স্বাস্থ্যক্ষেত্র আগামী দুই বছরে 13 হাজার 200 কোটি ডলারের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে ৷ নীতি আয়োগ জানিয়েছে, যদি ফার্মা ও চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুত সংক্রান্ত ক্ষেত্রের বৃদ্ধিকেও এর মধ্যে ধরা হয়, তাহলে আগামী বছরের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্র 27 লক্ষ কোটি টাকার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে ৷ নীতি আয়োগ আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে এই ক্ষেত্র সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য একটি ইতিবাচক ছবি তুলে ধরবে ৷ এই আয়োগ জানিয়েছে যে স্বাস্থ্য বিমা, স্বাস্থ্য পর্যটন, টেলি-মেডিসিন, প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা পরিষেবা এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ক্ষেত্রও একসঙ্গে বৃদ্ধি পাবে ৷ আর 2017 থেকে 2022 সালের মধ্যে 27 লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে ৷
সারা দেশে হাসাপাতালের বেডের সংখ্যার 65 শতাংশ কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৷ নীতি আয়োগ মনে করে যে বাকি রাজ্যগুলিতে হাসপাতালের বেডের সংখ্যা কমপক্ষে 30 শতাংশ বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে ৷
আরও পড়ুন :যক্ষ্মা রোগীদের প্যানডেমিকের সময় বেশি যত্নের প্রয়োজন
আমাদের দেশ এমন একটি দেশ যেখানে হাসপাতালের প্রচুর পরিমাণের বিল দিতে গিয়ে 6 কোটি মানুষ প্রতি বছর দারিদ্র্য সীমার মধ্যে চলে যাচ্ছে ৷ এই ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ স্মরণ করা উচিত ৷ যেখানে তারা জানিয়েছিল যে , 90 শতাংশ রোগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যর ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা এবং তা নিরাময় করা যায় ৷ কিন্তু এটা দুর্ভাগ্য যে বুদ্ধিমান পরামর্শ সবসময় উপেক্ষিতই থেকে যায় ৷ এর ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে ৷
কোভিডের মতো মারাত্মক রোগ যেহেতু ভয়ংকর ভাবে ছড়াচ্ছে, তাই সরকারের উচিত সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া ৷ তবে এই সংকটের সময় শাসকের মানসিকতাকে একটা ধাক্কা দিতে হবে ৷
যে কোনও জাতির অগ্রগতির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ খুবই প্রয়োজনীয় ৷ প্রত্যেক ব্যক্তিকে কার্যকরী সম্পদের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে গেলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় ৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে , উদারীকরণ সংক্রান্ত যত পথই খুলে যাক না কেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবাকে সব সময় সরকারি ক্ষেত্রের অধীনে রাখা উচিত ৷ তাঁর এই বুদ্ধিদীপ্ত কথাগুলি কেবল মাত্র বধিরদের কানেই পড়েছে ৷
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবার ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা জায়গাগুলি হল কানাডা, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া ৷ যে দেশ খুব শীঘ্রই বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশে পরিণত হবে, সেই ভারতের পরিস্থিতি এখনও খুবই করুণ পর্যায়ে রয়েছে ৷ এখানে কেবলমাত্র মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়া যেতে পারে ৷
আরও পড়ুন :কোভিড ভ্যাকসিন সবার কাছে পৌঁছনো উচিত
নীতি আয়োগ জানিয়েছে যে , দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলিতে বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য 2.3 লক্ষ কোটি টাকার 600 টি সুযোগ অপেক্ষায় রয়েছে ৷ এই আয়োগ জানিয়েছে যে 7.3 কোটি মধ্যবিত্তের সম্ভাব্য বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক কারণ হতে পারে ৷ আয়োগ আরও বলেছে যে উচ্চতর কোলেস্টেরল, রক্তচাপ এবং স্থুলত্বের সমস্যার মতো জীবনযাত্রা সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রোগগুলি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ কারণ, মদ্যপানের অভ্যাস ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ তাই এই রোগগুলির চিকিৎসার চাহিদাও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে ৷
কারও অনুশাসনকে নিজের উপকারে পরিণত করার প্রয়াস তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ৷ জনগণের দুরবস্থাকে সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে ৷ এমন সময়ে যখন কোটি কোটি মানুষ তাঁদের নিজস্ব দুর্ভাগ্য নিয়ে ডুবে গিয়েছে, তখন সরকারি ক্ষেত্রের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা সম্প্রসারণ করতে পারলে, সেটাই সঠিক হবে ৷ কিন্তু এর বদলে মানুষের দুর্দশাকে একটি সুযোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে ৷ এটা সত্যিই এক দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা ?
সুপ্রিম কোর্ট দৃঢ় ভাবে জানিয়েছিল যে স্বাস্থ্যের অধিকারের মধ্যে কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ৷ সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত নীতিও একই লাইনে থাকা উচিত ৷ সরকারের উচিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষেত্রকে নতুন করে গড়ে তোলা ৷ এমন একটি ব্যবস্থা তৈরির দিকে নজর দিতে হবে, যেখানে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী এবং ফার্মা খাতে বিদেশি বিনিয়োগের দিকে দেশকে নজর দিতে হবে ৷