পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sukhibhava

‘দীর্ঘ কোভিড’ : কিছু কিছু মানুষ কেন সুস্থ হয়ে উঠছেন না ?

ডা. AK অরুণ MD (হোমিওপ্যাথি), দিল্লিতে প্রাকটিসকারী হোমিওপ্যাথ, গবেষক এবং গর্ভমেন্ট অফ NCT, দিল্লির বোর্ড অফ হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অফ মেডিসিনের চেয়ারম্যান । তিনি কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য দিয়েছেন ।

Long COVID
Long COVID

By

Published : Nov 4, 2020, 2:19 AM IST

এখন কোরোনাকাল চলছে । একজন চিকিৎসক তথা হোমিওপ্যাথ হিসাবে আমি আমার ক্লিনিকে অনেক নতুন কিছুর সাক্ষী থাকছি । 1 মাসেরও বেশি সময় আগে আমার এক রোগী কোরোনা পরীক্ষায় পজ়িটিভ হন । এই অবস্থাকে বলা হয় ‘লং কোভিড’ তথা ‘দীর্ঘ কোভিড’ । এটা মানুষের জীবনে একটি দুর্বল প্রভাব ফেলে । আক্রান্ত ব্যক্তির এমনও অভিযোগ, তিনি অল্প সময় হেঁটেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন । এখনও পর্যন্ত প্যানডেমিকে লক্ষ্য ছিল, যত বেশি সম্ভব মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে । কিন্তু এখন এটা ক্রমবর্ধমানভাবে চিহ্নিত যে মানুষ কোভিড-19 সংক্রমণের ফলে দীর্ঘমেয়াদী ফল ভোগ করতে শুরু করেছে ।

লং কোভিড কী ?

এমনিতে ‘লং কোভিড’ বা ‘দীর্ঘ কোভিড’ বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কোনও সংজ্ঞা নেই । কিন্তু এর সবচেয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল রীতিমতো পঙ্গু করে দেওয়ার মতো ক্লান্তি । বাকি লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, এমন কাশি যা সহজে ঠিক হয় না, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, কানে শোনা এবং চোখে দেখার সমস্যা, মাথাব্যথা, নতুন করে স্বাদ এবং গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং এরই পাশাপাশি হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, বৃক্ক এবং অন্ত্রের ক্ষতি হয় ।

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কথাও জানা গিয়েছে ৷ যেমন অবসাদ, উদ্বেগ, মৃত্যু ভয়, একাকীত্ব এবং স্পষ্টভাবে ভাবনাচিন্তা করতে না পারার সমস্যা । এই সব কিছুই মানুষের জীবনধারণের মান নষ্ট করে দিতে পারে । আমার পেশেন্ট মি. সিংঘল (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, “আমি এমন ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেছিলাম, যা আগে কখনও অনুভব করিনি ।”

দীর্ঘ কোভিড এমন কোনও রোগ নয়, যা কেবল ইনটেনসিভ কেয়ারে থেকে সেরে উঠতে সময় বেশি নিচ্ছে । বরং যে সব মানুষের সংক্রমণ স্বল্প, তাদেরও স্থায়ী এবং প্রকট স্বাস্থ্য সমস্যার কথা জানা গিয়েছে । তিন সপ্তাহ পরও প্রতি 10 জন মানুষের মধ্যে একজনের শরীরে কোভিড-19 এর উপসর্গ রয়েই গিয়েছে ।

ব্রিটেনে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেখানকার অন্তত 4 মিলিয়ন মানুষের মধ্যে 12 শতাংশের মধ্যে 30 দিন পরই উপসর্গ থেকে গিয়েছে । এর সাম্প্রতিক এবং অপ্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আবার প্রতি 50 জন কোভিড আক্রান্তের মধ্যে অন্তত একজনের ক্ষেত্রে ‘দীর্ঘ কোভিড'এর উপসর্গ 90 দিন পরও থেকে গিয়েছে ।

এই ভাইরাস লং কোভিড কীভাবে ছড়ায় ?

এই ভাইরাস হয়তো বেশিরভাগেরই শরীর থেকে চলে গিয়েছে কিন্তু এখনও স্বল্পভাবে হলেও কোনও না কোনওভাবে থেকেই গিয়েছে । কিংস কলেজ, লন্ডনের তরফে অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেছেন, “ডায়েরিয়া যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে অন্ত্রে ভাইরাস রয়ে গিয়েছে । যদি গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়, বুঝতে হবে স্নায়ুতে কোনওভাবে সমস্যা হচ্ছে ।” কোরোনা ভাইরাস দেহের মধ্যে একাধিক কোষে সরাসরি সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং অতি প্রতিক্রিয়াশীল ইমিউন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে গোটা শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে, কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে যে সুদূরপ্রসারী প্রদাহ দেখা দেয়, তার ফলে অনেক ছোট বয়সেই মানুষের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

আমি কী করব যদি আমার মনে হয়, আমার দীর্ঘ কোভিড আছে ?

উদ্যম সঞ্চয় করার জন্য ‘3 টি পি’ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে ।

  • পেস ইওরসেলফ : নিজেকে সংযত রাখুন । যাতে জোর করে নিজেকে কোনও কিছু করতে বাধ্য না করতে হয় । আর নিশ্চিত করুন, যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান ।
  • প্ল্যান : কবে, কী করবেন, পরিকল্পনা করে রাখুন যাতে সবচেয়ে ক্লান্তিকর কাজকর্ম কোনও একদিনে না পড়ে, সপ্তাহব্যাপী ছড়িয়ে থাকে ।
  • প্রায়োরিটিজ : কী করা দরকার আর কোনটা না করলেও চলে, তা নিয়ে চিন্তা করুন ।

এক্ষেত্রে পরামর্শ হল, যদি যত তাড়াতাড়ি হওয়া উচিত, তত তাড়াতাড়ি সুস্থ না হয়ে ওঠেন বলে মনে হয়, তাহলে হয় হাসপাতাল আর নয় নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ।

দীর্ঘ কোভিডের সঙ্গে বসবাস

কোভিড-19 এর মৃদু লক্ষণ যে সব আক্রান্তের মধ্যে দেখা গিয়েছে, তারা মোটামুটি 2 সপ্তাহের মধ্যে সেরে উঠবেন বলে আশা করা যায় । কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ দাবি করছেন, প্রাথমিক অসুস্থতা যত দিনে কেটে যাওয়ার কথা, সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও তারা কিছু কিছু উপসর্গ অনুভব করেই চলেছেন । এই অনুভূতিকেই ‘লং কোভিড’ বলা হচ্ছে, যা বিজ্ঞানীদের ক্রমশ বিভ্রান্ত করে তুলছে এবং যারা এতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অসহায় এবং ধকলের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে ।

হোমিওপ্যাথি সাহায্য করছে

আমার প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দিনে এক থেকে দু’জন কোভিড-19 পজ়িটিভ সাব্যস্ত হওয়ার তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে দীর্ঘ অসুস্থতা রয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করছি এবং ভাল প্রতিক্রিয়াই পেয়েছি । এককভাবে রোগীর পরিস্থিতি বুঝে যে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তা হল আর্সেনিকাম অ্যালবাম, অ্যাসিড সারকোল্যাকটিটাম, বেলেডোনা ব্রায়োনিয়া, ক্যামফোরা, অকিলোকোসিনাম প্রভৃতি । ( লক্ষ্য রাখবেন, কোনও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়া উচিত ।)

ABOUT THE AUTHOR

...view details