কোভিড-19 মহামারি চলাকালীন সদ্যোজাত সন্তানকে মায়ের থেকে আলাদা করার ঝুঁকি নিয়ে গবেষণাপত্রে যে যে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে –
1. ল্যানসেট ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন - এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় সদ্যোজাত সন্তানকে জন্মের পর তার বাবা-মায়ের কাছে রাখার গুরুত্বের দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে । বিশেষ করে যে সন্তানগুলি আকার-আয়তনে খুবই ছোট (কম ওজন নিয়ে জন্মেছে) বা নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মেছে ।
2. যদিও অনেক দেশে, যদি কোভিড সংক্রমণ নিশ্চিত থাকে বা সংক্রামিত সন্দেহ থাকে, সেক্ষেত্রে সদ্যজাত সন্তানদের রুটিনমাফিকভাবে তাদের মায়েদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, যা আজীবন স্বাস্থ্য সংকটের ঝুঁকি ছাড়াও মৃত্যুরও বড় ঝুঁকির মুখে তাদের ফেলে দেয় ।
3. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি শিশুর অপরিণত অবস্থায় জন্মের পর মৃত্যু কিংবা শিশুকালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
4. রিপোর্ট অনুসারে, মায়ের শিশুকে জড়িয়ে থাকা ‘ক্যাংগারু-সুলভ’ শারীরিক যত্নে (মায়ের সদ্যোজাত সন্তানকে জড়িয়ে থাকা) ব্যাঘাত ঘটলে ঝুঁকি আরও বাড়ে।
5. সম্পূর্ণ ‘ক্যাংগারু-যত্নে’ অন্তত 125000 টি শিশুর প্রাণ বাঁচতে পারে ।
6. সময়ের আগে জন্মানো কিংবা কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে মায়েদের ‘ক্যাংগারু-যত্ন’ (মায়ের ত্বকের সঙ্গে সন্তানের ত্বকের স্পর্শ এবং স্তন্যপান করানো) একান্তই আবশ্যিক ।
7. সময়ের আগে জন্ম নেওয়া বা কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের ‘ক্যাংগারু যত্ন’-এ শিশুমৃত্যুর হার অন্তত 40 শতাংশ কম হয় । হাইপোথ্যামিয়া 70 শতাংশেরও বেশি হ্রাস পায় আর গুরুতর সংক্রমণ কম হয় 65 শতাংশ পর্যন্ত ।
8. কোভিড-19 এর সময় অত্যাবশকীয় স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটার জেরে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব সংক্রান্ত পরিষেবার গুণাগুণ অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছে । আর এই তালিকায় জন্মের পরই অভিভাবকদের সান্নিধ্যে থাকার অধিকার শিশুদেরও রয়েছে । এমনই জানিয়েছেন হু-র ম্যাটারনাল, নিউবর্ন, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ অ্যান্ড এজিং-এর অধিকর্তা অংশু ব্যানার্জি ।
আরও পড়ুন : ‘গিফটেড চাইল্ড’–দের জন্য পুষ্টি
9. সদ্যোজাত শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংক্রান্ত এক বিশ্বব্যাপী সমীক্ষার ফল ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল (বিএমজে) গ্লোবাল হেলথ-এর একটি পেপারে প্রকাশিত হয়েছে । আর তা অনুযায়ী, 62টি দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই-তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন যে তারা, মায়েদের কোভিড আক্রান্ত সন্দেহ করলে বা কোনওভাবে সংক্রমণ নিশ্চিত হলেই মায়ের সঙ্গে সদ্যোজাতের ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শ হতে দেন না । আর এক চতুর্থাংশ কর্মীরা শিশুর স্তন্যপানেও বাধা দেন, সংক্রমণহীন কেয়ারগিভারদের দ্বারাও ।
10. সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, কোভিড সংক্রামিত সদ্যোজাতদের শরীরে সাধারণত কোনও সংক্রমণই থাকে না বা খুবই সাধারণ রোগব্যাধি থাকে, যার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে । এই নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, সদ্যোজাতদের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি এমনিতেই কম থাকে ।
11. সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, কোভিড আক্রান্ত সদ্যোজাতদের উপসর্গ প্রায় থাকেই না, রোগও খুবই সাধারণ থাকতে পারে, যার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকিও অল্পই থাকে । এই সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, সদ্যোজাতদের কোভিড সংক্রমণের ফলে মৃত্যু 2000-এরও কম ।
12. সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা 15 মিলিয়ন (37 সপ্তাহের আগে যাদের জন্ম হয়) আর কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর সংখ্যা 21 মিলিয়ন (2.5 কেজির কম ওজন) । এই শিশুদের স্বাস্থ্যের সংকট প্রচুর যেমন নানাবিধ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, বিকাশে দেরি, সংক্রমণের শঙ্কা, অপরিণত গঠন সংক্রান্ত জটিলতা প্রভৃতি । আর এই সব কিছুই হল সদ্যোজাত এবং 5 বছরের নিচে বয়স যাদের, তাদের মৃত্যুর মুখ্য কারণ ।
হু-র পরামর্শ, মায়েরা সন্তানের জন্মের পর থেকেই তাদের সন্তানের সঙ্গে এক ঘরে থাকুন, তাদের স্তন্যপান করান, ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংস্পর্শ করান আর যদি কোভিড সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ হয় বা তা পরীক্ষায় নিশ্চিতও হয়, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় শিশুদের সংক্রমণ প্রতিরোধক যথাযথ ব্যবস্থা নিন ।