পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sukhibhava

অটিজ়ম থাকা শিশুদের মেনে নেওয়া বাবা-মায়ের পক্ষে কঠিন

প্রতিটি পরিবার তাদের নিজেদের মতো করে এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন, দুঃখকে নিয়ন্ত্রণ করেন । তাই মানিয়ে নেওয়ার সময়টুকু নিজেকে দিন । প্রত্যেকের যাত্রাপথ আলাদা, তাই অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে কষ্টই বাড়বে ।

অটিজ়ম থাকা শিশু
অটিজ়ম থাকা শিশু

By

Published : Apr 3, 2021, 6:51 AM IST

হঠাৎ করে কোনও উদ্বেগের বিষয় ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, সেব্যাপারে আমাদের শিক্ষা বা সমাজ কিছুই শেখায় না । আমাদের মস্তিষ্ক দুশ্চিন্তাকে অনুভব করে এবং তার থেকে আবেগের জন্ম হয় । আমরা প্রত্যেকেই মনের গভীরে সেই ধারণাটা নিয়েই বড় হই, যে আমাদের সম্পর্কগুলো ঠিক কেমন হওয়া উচিত । আর ঠিক তেমনটাই ঘটে যখন পরিবারকে একটি অটিজ়ম আক্রান্ত শিশুকে আপন করে নিতে হয় । তাঁরা এই অবস্থা নির্ণয় করাতেই চান না । বাবা-মার মনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় । কেমন সন্তান তাঁরা চেয়েছিলেন এবং কেমনভাবে সন্তানকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন, সেই ভাবনায় শোকে মুহ্যমান থাকেন তাঁরা ।

ইটিভি ভারত সুখীভব এনিয়ে কথা বলেছিল সম্রুদ্ধি পাটকরের সঙ্গে, যিনি একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট এবং অটিজ়ম আক্রান্ত শিশুদের থেরাপি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন । সম্রুদ্ধি মুম্বইয়ের বোরিভলিতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন ।

পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়ার প্রথম ধাপ হল, সত্যিটা থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখার বদলে তাকে মেনে নেওয়া । প্রত্যেক মানুষই অপ্রত্যাশিত, যন্ত্রণাদায়ক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় একটা শোকের পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যান । যে মানুষগুলো আপনাকে সাহায্য করবে, তাদের কাছে আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করাটা গুরুত্বপূর্ণ । এর ফলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে । আর তখন একজন মানুষ স্নায়বিক বৈচিত্র্যকে মেনে নিতে শেখেন এবং মেডিকেল তকমা সরিয়ে সেই শিশুকে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে দেখা শুরু করেন ।

আরও পড়ুন : অটিজম থাকা শিশুদের খাওয়ানোর চ্যালেঞ্জ

বাবা-মায়েরা শোকের নিম্নলিখিত পর্যায়গুলোর মধ্যে দিয়ে যান :

  • শক এবং অস্বীকার করা : এক্ষেত্রে অবস্থা নির্ণয় নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয় ৷ কারণ, নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন ব্যাপার । কেউ কেউ আবার একের পর এক চিকিৎসক দেখিয়ে বেড়ান এই আশায়, যদি কেউ অন্যকিছু বলেন ।
  • অপরাধবোধ : বাবা-মা, বিশেষ করে মায়েরা স্বাভাবিক সন্তান না হওয়ার জন্য নিজেদের দায়ী করতে থাকেন এবং ভাবতে থাকেন যে তাঁদের কোনও কাজের জেরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুটি জন্মাল ।
  • রাগ : বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির জন্ম হয় এবং বিশেষ করে নিজের প্রতি, সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি, চিকিৎসক এবং সার্বিকভাবে সমাজের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয় । এই রাগকে চেপে রাখার বদলে প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ । এই রাগের পিছনে লুকিয়ে থাকে মানসিক যন্ত্রণা আর সব হারানোর অনুভূতি । বাবা-মায়েদের মনে থাকে একটাই প্রশ্ন – ‘আমরাই কেন?’
  • বিষাদ : গভীরে থাকে দুঃখ, একাকীত্ব এবং আপনি যেমন শিশু চেয়েছিলেন, তাঁকে না পাওয়ার যন্ত্রণা । এই কষ্ট স্বাভাবিক এবং এখান থেকেই সান্ত্বনার পথে অগ্রসর হওয়া শুরু হয় ।
  • মেনে নেওয়া : যাই ঘটুক, তা নিয়ে সবসময় সদর্থক চিন্তা রাখতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই । কিন্তু সত্যিটাকেই মেনে নেওয়াই উচিত । বাবা-মায়েরা নতুন দায়িত্ব নেওয়া শেখেন । পেশাদারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সন্তানের জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেন । যা তাঁরা বদলাতে পারবেন না, তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা তাঁরা ছেড়ে দেন । খুঁজে নেন সেইসব মানুষদের যাঁরা এই সময়ে তাঁদের সহায়তা করবে । এই পর্যায়ে পৌঁছাতে শোক ও অন্যান্য মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রতিটি পরিবার তাদের নিজেদের মতো করে এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন, দুঃখকে নিয়ন্ত্রণ করেন । তাই মানিয়ে নেওয়ার সময়টুকু নিজেকে দিন । প্রত্যেকের যাত্রাপথ আলাদা, তাই অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে কষ্টই বাড়বে ।

রিল্যাক্স করার সময় নিন, সেইসব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, যাদের সাহায্য অন্যান্য বাবা-মায়েরা একই পরিস্থিতি কাটিয়েছেন । নিজের জন্য সময় রাখুন এবং প্রতিটা দিনকে আলাদাভাবে দেখুন ।

আরও জানতে যোগাযোগ - samrudhi.bambolkar@gmail.com

ABOUT THE AUTHOR

...view details