হায়দরাবাদ: অক্টোবর মাস জুড়ে চলতে থাকে ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা তাই অক্টোবরকে বলা হয় স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস ৷ ক্যানসার নামটা শুনলেই মনে-প্রাণে ভয় ধরা দেয় সকলের ৷ পুরুষদের তুলনায় মহিলারা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন বেশি ৷ বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসায় স্তন ক্যানসার থেকে মুক্তির উপায় সহজেই পাওয়া যায় ৷ কিন্তু শরীরে এই মারণ রোগের প্রত্যাবর্তনের ঝুঁকিও থাকে প্রবল ৷ তাহলে উপায়?
অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি ক্যানসার চিকিৎসায় বর্তমানে পথ দেখাচ্ছে হোমিওপ্যাথিও ৷ কীভাবে? জানিয়েছেন হোমিওপ্যাথ বিশেষজ্ঞ তথা চিকিৎসক সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় ৷ চিকিৎসক বলেন, "যেহেতু স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস চলছে তাই আজ এই বিষয়ে মানুষের সজাগ হওয়া উচিত ৷ আসলে ভারতে যত ধরনের ক্যানসার রয়েছে তার মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৷ এক লক্ষ মানুষের মধ্যে 25 জন এই রোগে আক্রান্ত ৷ শুধু তাই নয়, আক্রান্তের অর্ধেকেরই ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৷ ফলে সত্যিই এটা চিন্তা বাড়াচ্ছে ৷ ছেলে-মেয়ে উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ৷ তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগ খুব কমন ৷"
সত্যিই কি হোমিওপ্যাথ চিকিৎসায় স্তন ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব? তিনি বলেন, "ক্যানসার নিয়ে রিসার্চ বিশ্বব্যাপী চলছে ৷ যদি এমন হতো অ্যালোপ্যাথি সব রকমের ক্যানসার সেরে যেত, তাহলে তো কোনও চিন্তা ছিল না ৷ কিন্তু হয় না বলেই এর অলটারনেটিভ কী হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চলতেই থাকে ৷ কারও যদি ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে প্রথম পর্যায়ে, তাহলে হোমিওপ্যাথিতে নিরাময় সম্ভব ৷ যদি লাম্ফ ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে তা অপারেশনের মাধ্যমে কেটে বাদ দেওয়াই শ্রেষ্ঠ ৷ কিন্তু এমন জায়গায় ছড়াল যেখান থেকে অপারেশন করে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, তখন ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয় ৷ সেক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি-হোমিওপ্যাথি মিলিয়ে একটা কম্বাইন থেরাপি যাকে 'থিয়েটার থেরাপি' বলা হয়, তা করা ভালো ৷"
তিনি বলেন, "ক্যানসারের অনেকগুলো টাইপ রয়েছে ৷ তার উপর নির্ভর করে কোন ওষুধ কাজ করবে, কোনটা করবে না ৷ স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে একবার অপারেশন করে সেরে উঠলেও পুনরায় তা ফিরে আসার প্রবল সম্ভাবনা থাকে ৷ সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি খুব ভালো কাজ করতে পারে ৷"
এই বিষয়ে চিকিৎসকের কাছে এক রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর এক আত্মীয়ের পিত্তথলিতে ক্যানসার ধরা পড়ে ৷ অপারেশন,কেমোথেরাপির পর তিনি সেরেও ওঠেন ৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর ক্যানসার বুকে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তারপর টানা চারবছর সেই রোগী হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে চলেছেন ৷ বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ৷
কিন্তু ধারণা রয়েছে অনেকের হোমিওপ্যাথি খুব ধীরে ধীরে কাজ করে ৷ সেক্ষেত্রে ক্যানসার চিকিৎসায় তা কী করে সম্ভব? চিকিৎসক সৌমাল্য বলেন, "মানুষের এই ধারণাটা বদলাতে হবে ৷ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে অনেকের সঠিক ধারণা এখনও পর্যন্ত নেই ৷ সেই ধারণা বদলাতে হবে ৷ আসলে ক্রনিক ডিজিজ কোনওদিন সারে না ৷ জেনেটিক কারণেও যদি কারও সর্দি-কাশি হয় তা সারে না ৷ তাই চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য থাকে, তা পুরোপুরি না-সারলেও দমিয়ে রাখা বা কমিয়ে রাখা ৷ তার জন্য ওষুধ খেয়ে যেতে হয় ৷ দীর্ঘদিন খেতে হয় ৷ কিন্তু ক্যানসার ক্রনিক ডিজিজ নয় ৷ তাই ক্যানসার সারার হলে সারবে আর যদি না সারার হয়, তাহলে তা কোনও ওষুধেই সারবে না ৷ তবে হোমিওপ্যাথির গুণ হচ্ছে, ক্যানসারের লক্ষণ প্রথম দিকে ধরা পড়লেই হোমিওপ্যাথিতে নিরাময় সম্ভব ৷ তবে সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় না ৷ তাই ক্যানসার হলে সারাজীবন ওষুধ খেতে হবে সেই ধারণা ভুল ৷"
ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ কী? ক্যানসার হলে সবার আগে একটা লাম্ফ বা ফোলাভাব ধরা পড়বে ৷ ব্রেস্ট ভারী হয়ে যেতে পারে, ব্রেস্টের শেপ ও সাইজে পরিবর্তন হতে পারে, ব্রেস্টের উপরের রঙ পরিবর্তন হতে পারে, নিপলে ঘা হতে পারে, অনেক সময় নিপল ভিতর দিকে ঢুকে যেতে পারে ৷ এই রকম নানা পরিবর্তন নজরে আসলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত ৷ এছাড়া ব্রেস্টে বার্নিং সেনসেশন অনুভব হতে পারে ৷ কিন্তু আসল বিষয় নজরে রাখতে হবে তা শেপ এবং সাইজ ৷ আবার ঘরে বিশেষ একটা উপায়েও নিজের ব্রেস্টের পরীক্ষা নিজেই করতে পারে ৷ জিলিপি যেমন ভাজা হয় সেন্টার থেকে পেরিফিরি এর ঠিক উলটোটা করতে হবে ৷ পেরিফেরি থেকে সেন্টারে তর্জনী দিয়ে ব্রেস্ট চেক করতে হবে ৷ অর্থাৎ পেরিফেরি থেকে সেন্টার আবার সেন্টার থেকে পেরিফের ৷ হাতে যদি কিছু ঠেকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷
কোন স্টেজ পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্ভব? প্রাইমারি স্টেজে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যানসার নিরাময়ের হাই চান্স থাকে ৷ সেকেন্ডারি স্টেজ হয়ে গেলে বা লাম্ফ হয়ে গেলে সার্জারি করা প্রয়োজন হয় ৷ যে কোনও ক্যানসারের ক্ষেত্রে যদি সার্জারির বিষয় থাকে তাহলে অবশ্যই তা করতে হবে ৷ তার পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা হিসাবে হোমিওপ্যাথির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে ৷ অর্থাৎ, পরবর্তী সময়ে এই যে রেকারেন্স হয় বা ক্যানসার পুনরায় ছড়িয়ে পরার যে আশঙ্কা থাকে, তা সফলতার সঙ্গে মুক্তি দিতে পারে হোমিওপ্যাথি ৷
চিকিৎসক জানিয়েছেন, আর একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত যে টাইট অন্তর্বাস বা পোশাক পরলে বুকে ব্যাথা হয় অনেক মহিলার ৷ কিন্তু তা কোনওভাবেই ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় ৷ বরং অন্তর্বাস সব সময় পরে থাকাই উচিত ৷ ব্রেস্টের যে আকার তাতে ফ্যাট পুরোটাই, মাসল কম ৷ ফলে ব্রেস্ট ঝুলে থাকে ৷ যে কারণে সেখানকার রক্তনালী অনেক সময় সরু হয়ে যেতে থাকে ৷ ফলে অ্যাঞ্জিও সারকোমা অফ ব্রেস্ট হওয়ার প্রবল প্রবণতা থাকে ৷ তাই যাঁদের হেভি ব্রেস্ট তাঁদের রাত্রে শোয়া ছাড়া সবসময় অন্তর্বাস পড়ে থাকা উচিত ৷
আরও পড়ুন:ঋতুকালীন সময় পরিবর্তনে ওষুধের ব্যবহার অজান্তেই ডেকে আনছে বিপদ, জানালেন বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট