মস্তিষ্ক হল আমাদের দেহের সবথেকে জটিল অঙ্গ ৷ আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অজস্র স্নায়ু একসঙ্গে কাজ করে । পাশাপাশি, এই বিশ্বে প্রতিটি খুঁটিনাটি জিনিসের খেয়াল রাখা একটা চ্যালেঞ্জ । কিন্তু কোনও কিছু খেয়াল করে, পরে তা মনে করতে না পারাটা বেশ কষ্টদায়ক । তাই আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে, আমরা কথা বলেছিলাম আয়ুর্বেদের ইতিহাসে ডক্টরেট, পি ভি রঙ্গনায়কুলুর সঙ্গে । তিনি আমাদের কিছু স্মৃতিশক্তিবর্ধক খাবারের কথা জানালেন এবং কয়েকটি টিপসও দিলেন ।
তিনি বুঝিয়ে বলেন যে আমাদের স্মৃতিশক্তি তিনটি ‘আর’-এর ভিত্তিতে কাজ করে – রিসেপশন, রেজিস্ট্রেশন এবং রিকল । প্রথমত, আমরা যখন কোনও তথ্য গ্রহণ করছি, তখন সেটা হতে হবে খুবই স্পষ্ট । তারপর সেই তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে নথিবদ্ধ হয়ে যায় । আর একবার ভালভাবে তা মাথায় ঢুকে গেলে, পরে মনে করাটা খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং হয় না । এই বিষয়গুলো যদি ধাপে ধাপে না ঘটতে থাকে, তাহলে আমরা স্মৃতি হারিয়ে ফেলব এবং প্রয়োজনে তা মনে করতে পারব না । ঠিক সময় ঠিক জিনিসটা মনে করাই হল ভাল স্মৃতিশক্তির নমুনা ।
কী খাবেন ?
ড. রঙ্গনায়কুলু উল্লেখ করেন, যে গরুর দুধের ঘি-কে “মেধ্যা” বলা হয়, অর্থাৎ এতে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ে এবং একেই প্রাথমিক উপাদান হিসেবে মনে করা যেতে পারে । ঘি সাধারণত ভারতের প্রত্যেক বাড়ির রান্নাঘরেই ব্যবহার হয়, এবং তরকারি, ডাল, রুটি, খিচুড়ি – আমরা যা কিছুই খাই, তাতেই দেওয়া যায় । কয়েকটি গাছগাছড়া, যেমন ব্রাহ্মী, শঙ্খপুষ্পি এবং মালকাঙ্গানি স্মৃতিশক্তি ও আইকিউ বাড়াবার জন্য পরিচিত । বচ হল আরও একটি স্মৃতিবর্ধক এবং কথা বলা সংক্রান্ত সমস্যাতেও কার্যকরী । এছাড়াও যা কিছুই শরীরের ওজন, বিশেষ করে কফ বাড়ায়, তা স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সহায়ক হয় । হলুদেরও স্মৃতিবর্ধক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়, যদিও সেটা এখনও প্রমাণিত নয় ।
- রোজকার খাবার থেকে পরিশুদ্ধ চিনি ও কার্বোহাইড্রেট কমাতে হবে । গবেষকরা দেখিয়েছেন, যে খাবারে অতিরিক্তি চিনি দুর্বল স্মৃতিশক্তি এবং ব্রেন ভলিউম কমার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেটা অ্যালঝাইমারেরও পূর্বলক্ষণ ।
- ভালো ঘুমেও কাজ হয় । গবেষণায় এও দেখা গেছে যে ঘুম না হওয়া মানুষদের স্মৃতিশক্তির উপরেও প্রভাব পড়ে । সুতরাং 7-9 ঘণ্টা ভালভাবে ঘুমোলে স্মৃতিশক্তি আরও ভাল হয় ।
- প্রত্যেকদিন শরীরচর্চা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো । নিয়মিত ব্যায়াম করলে পরিণত বয়সে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে ।
- খাবারে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যোগ করলে তা বয়সজনিত ক্ষয় থেকে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে বাঁচাতে পারে । অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর ফল ও সবজি খেলে স্মৃতিশক্তি ক্ষয় আটকাতে পারে ।
- ধ্যান বিভিন্ন ভাবে আমাদের শরীর ও মনের উপর সদর্থক প্রভাব ফেলে । এতে মন শান্ত হয়, স্ট্রেস লেভেল কমে, এমনকী স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয় । স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী – দুধরনের স্মৃতির জন্যই এটা কার্যকর ।
- শারীরিক কসরতের পাশাপাশি মনের ব্যায়ামেরও চেষ্টা করুন । ক্রসওয়ার্জ, পাজল এবং অন্যান্য মেমোরি গেম হল মস্তিষ্ককে চাঙ্গা করার দারুণ উপায় ।ধূমপান সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর এবং এতে স্মৃতিহ্রাসও ঘটতে পারে ।
ডট রঙ্গনায়কুলু জোর দিয়ে বলেন যে অলসভাবে সময় কাটানোর থেকে আরও বেশি বই পড়া উচিত । চেষ্টা করতে হবে যাতে স্ট্রেসমুক্ত জীবনযাপন করা যায়, কারণ “সাধারণত শান্ত মনের স্মৃতিশক্তিই উন্নত হতে পারে । ”