অটিজম হল একটি মানসিক সমস্যা, যা দেখা দেয় জীবনের প্রথম তিন বছরের মধ্যে । এক্ষেত্রে যা দেখা যায়, তা হল সামাজিক মেলামেশায় অস্বাভাবিকত্ব বা বাধা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় উদ্দেশ্যহীন অতি-সক্রিয়তা এবং কোনও কিছুতে আগ্রহের অভাব । মুম্বইয়ের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সমীর চৌকার, যিনি দীর্ঘসময় ধরে কাজ করেছেন অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে, এব্যাপারে কথা বললেন ইটিভি ভারত সুখীভবর সঙ্গে ।
হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে এইধরণের সমস্যাকে চিকিৎসাবিদ্যার দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি, হোমিওপ্যাথিক ইন্ডিভিজুয়ালাইজেশনের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে হবে ।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডারের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরণ দেখতে পাই:
1. অতিরিক্ত অস্থিরতা, আবেগপ্রবণতা
2. স্নায়বিক সমস্যা, যেমন স্পর্শ বা শব্দের ক্ষেত্রে অতি সংবেদনশীলতা ।
3. অস্বস্তিকর নানা দিক ৷ যেমন যখন-তখন মলমূত্র ত্যাগ, নোংরা খাওয়া ইত্যাদি ৷
বিভিন্ন অবস্থার সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তার প্রতিকার:
1) সেন্সরি প্যাটার্ন
স্পর্শ, শব্দ, গন্ধ, দৃষ্টির মতো অনুভূতিগুলো গ্রহণ ও অনুধাবন করায় সমস্যা দেখা যায় । ইন্দ্রিয় সংবেদনশীলতায় অনেক সময় অস্বাভাবিকতা দেখা যায় । বাবা-মায়েরা বলেন, যে সন্তান হঠাৎ শব্দে চমকে উঠে কানে হাতচাপা দেয় । এগুলো অটিজ়মেরই একটা দিক এবং বিভিন্ন উপসর্গ ও অবস্থার জন্ম দেয় । একইরকম ভাবে আমাদের মেটিরিয়া মেডিকা এবং রেপার্টরিতে এ নিয়ে প্রচুর তথ্য রয়েছে । ইন্দ্রিয়সংবেদশীলতা বেশি হলে বোরাক্স, স্ট্র্যামোনিয়াম, অ্যাসেরাম, থেরিডিয়ন, কারসিনোসাইনাম, নাক্সভমিকা, ওপিয়াম, চায়না ইত্যাদি ব্যবহারের কথা ভাবা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: অটিজ়ম থাকা শিশুদের মেনে নেওয়া বাবা-মায়ের পক্ষে কঠিন
2) কাইনেটিক স্টেট
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার রয়েছে, এমন বেশিরভাগ শিশুই অতিসক্রিয় হয়। তাদের মধ্যে প্রবল আবেগপ্রবণতা দেখা যায় । দুটি সাব-গ্রুপ দেখা যায়: একটি ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক মনোভাব ও হিংসার প্রবণতা দেখা যায় আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তা থাকে না । এক্ষেত্রে ওষুধ হল টারেনটুলা, স্ট্র্যামোনিয়াম, টিউবারকুলিনাম, মেডোরিনাম, নাক্স ভমিকা ইত্যাদি।
যদি নিজেকে আহত করার প্রবণতা থাকে, তখন লাইসিনাম, স্ট্র্যামোনিয়াম, ট্যারেনটুলা, টাব, বেল ইত্যাদির কথা ভাবা যেতে পারে ।
3) রিগ্রেসিভ স্টেট
যে শিশুদের স্ফিংটার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়, যার জেরে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মলমূত্র ত্যাগ করে ফেলে ৷ তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় হস্তমৈথুনের প্রবণতা, নোংরা জিনিস খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় । এক্ষেত্রে হায়োসাইমাস, বুফো, ব্যারিটা কার্বোনিকার মতো ওষুধের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে ।
হোমিওপ্যাথি কীভাবে অটিজ়মে সাহায্য করে:
হোমিওপ্যাথি ওষুধের কোনও নির্দিষ্ট একটি অঙ্গেই শুধু কাজ করে না, এর একটা সার্বিক গভীর প্রভাবও থাকে। সেজন্য অটিজমের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তা গভীরভাবে কাজ করে ।
অটিজমের ক্ষেত্রে আমরা ইন্দ্রিয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন খামতি দেখতে পাই । যেমন কিছু বাচ্চা আলো, শব্দ, স্পর্শের ক্ষেত্রে অতিসংবেদনশীল হয়। কেউ কেউ জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা বেশি পছন্দ করে ৷ কেউ আবার একেবারেই করে না । এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হোমিওপ্যাথি ভালোভাবেই কাজ করে ।
স্কিলের উন্নতি করে মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ । অতিসক্রিয়তা, মেজাজ হারানো, নিজেকে আঘাত করা বা ধ্বংসাত্মক মনোভাব নিয়ন্ত্রণে এই ছোট্ট ছোট্ট বড়িগুলো দুর্দান্ত কাজ করে ।
অটিজমের বিরুদ্ধে লড়তে ডাক্তার, মনোবিদ, শিক্ষক, থেরাপিস্ট ও বাবা মায়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার । প্রত্যেকেরই এক্ষেত্রে নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে ।
যখন কোনও শিশু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সাড়া দেয়, তখন প্রথমবার তার প্রভাব সার্বিকভাবেই চোখে পড়ে । সে আরও শান্ত হয়, ঘুম, খিদে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে থাকে ।
এরপর দেখা যায় আচরণের উন্নতি । অতিসক্রিয়তা, অস্থিরতা, হিংসাত্মক মনোভাব কমে আসে । সাড়া দেওয়া এবং চোখের দিকে তাকানোর ক্ষেত্রে বদল আসে । শিশু আস্তে আস্তে ইঙ্গিত করতে শুরু করে এবং শব্দ উচ্চারণ শেখেও । তবে এক্ষেত্রে অনেকটা দীর্ঘ সময় লেগে যায় । আস্তে আস্তে শিশুর মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয় । এর কারণ, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ইমিউনো-মডিউলেটর হিসেবেও কাজ করে।
তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করলেই সবথেকে ভালো ফল পাওয়া যায় । অটিজম কতটা রয়েছে, হালকা, মাঝারি, নাকি গুরুতর– তার ওপর নির্ভর করছে উন্নতি । মৃগী, জিনগত সমস্যার মতো বিষয়ও চিকিৎসার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ।