18 জুলাই কেরালার কন্নড়ে মাঙ্কিপক্সের দ্বিতীয় কেসের সন্ধান মেলার পর থেকে এই রোগ নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করেছে ৷ 31 বছরের এই ব্যক্তি এখন হাসপাতালে ভর্তি ৷ সাধারণত আফ্রিকার বাইরে কিন্তু এই রোগের প্রাদুর্ভাব সেভাবে চোখে পড়ে না ৷ কিন্তু এইবার সাম্প্রতিককালে আফ্রিকায় যাননি এমন বেশ কিছু ব্যক্তির মধ্যেও এই রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে ৷ যার জেরে বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন ৷ আসুন মাঙ্কিপক্স যা যা জেনে নেওয়া দরকার তা দেখে নেওয়া যাক ৷
যদিও ভারতে দুটি কেস সামনে আসার পর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যেই তবে কিছু নিয়ম মানলে এই রোগকে দূরে রাখা কোনও বড় ব্যাপার নয় (Monkeypox precaution tips) ৷
মাঙ্কিপক্স কী (what is Monkeypox ):
মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস যা ইঁদুর এবং প্রাইমেট জাতীয় বন্য প্রাণীর থেকে মানুষের মধ্য়ে ছড়িয়ে পড়ে ৷ এই রোগটির মূল জন্মস্থান আফ্রিকা ধরা যেতে পারে ৷ মধ্য় এবং পশ্চিম আফ্রিকাতেই বেশিরভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন ৷ 1958 সালে বিজ্ঞানীরা এই রোগটি প্রথম শনাক্ত করেন ৷ বানরদের মধ্য়ে পক্সের মত একটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখে তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তাঁরা ৷ এই জন্যই রোগটির নাম দেওয়া হয় মাঙ্কিপক্স ৷ 1970 সালে প্রথম মানুষের দেহে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায় ৷ কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে 9 বছরের একটি বাচ্চা প্রথম এই রোগে আক্রান্ত হয় ৷
এর উপসর্গ এবং চিকিৎসা (what are the symptoms of Monkeypox ):
মাঙ্কিপক্স গুটিবসন্তের মতই একই ভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত ৷ এক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীই জ্বর, গা হাত পায়ে ব্যথাভাব এবং ক্লান্তি অনুভব করেন ৷ রোগের প্রভাব গুরুতর হলে রোগীর মুখে, হাতে ফুসকুড়ি এবং পরবর্তীক্ষেত্রে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে ৷ প্রায় পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কষ্ট পেতে হয় রোগীদের । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না ৷ দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই রোগী সেরে ওঠেন ৷ দশ জনের মধ্যে একজনের জন্যই মারাত্মক হতে পারে মাঙ্কিপক্স ৷
তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুবই ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে ৷ এইমসের মেডিসিন বিভাগের ডাঃ পীযূষ রঞ্জনের মতে, "মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি একেবারেই গুটিবসন্ত এবং চিকেনপক্সের মতো । শুরুতে, রোগীদের জ্বর হবে এবং লিম্ফ নোড বৃদ্ধি পাবে । 1-5 দিন পরে রোগীর মুখে, হাতের তালুতে বা তলদেশে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে । তাদের কর্নিয়ায় ফুসকুড়ি হতে পারে যা অন্ধত্বের দিকে পরিচালিত করে ।"
ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের প্রায়শই কয়েকটি গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া হয় ৷ মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও এই টিকার ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে । বর্তমানে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য় অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধও তৈরি করা হচ্ছে । বৃহস্পতিবার, ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের তরফে সুপারিশ করা হয়েছে এবার থেকে সমস্ত সন্দেহভাজন কেসকে আলাদা করা হবে ৷ যাঁদের ঝুঁকি বেশি রয়েছে তাঁদের স্মলপক্স ভ্যাকসিনও দেওয়া হবে।
কাদের জন্য ঝুঁকি রয়েছে:
রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সঙ্গম করলে তাদের ঝুঁকি বাড়তে পারে ৷ এছাড়া রোগটি ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত প্রাণীদের থেকেও ৷
শিশুদের ঝুঁকি কতখানি :
ডাঃ পীযূষ রঞ্জনের মতে,"মাঙ্কিপক্সের সংক্রামণ এমনিতে কম, তবে শিশুদের মধ্যে এটি মারাত্মক হতে পারে । কোভিড-19 এর ক্ষেত্রে সংক্রমণ দ্রুত হয় ৷ তবে এক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শে থাকার পরেই মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটে । তাই কোভিড-এ সংক্রমণের হার খুব বেশি এবং একটি সংক্রমিত ব্যক্তি অনেককে সংক্রামিত করতে পারে । কিন্তু, মাঙ্কিপক্স কম সংক্রামক ।"
- মাঙ্কিপক্সের ঝুঁকি কমাতে যে যে বিষয় গুলি মনে রাখা প্রয়োজন (Monkeypox precaution tips):
- এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া যাদের মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা কিংবা যাঁরা এই রোগ ধরা পড়েছে ৷
- শুধু ব্যক্তি নয় প্রাণীদের থেকেও এই রোগ ছড়ায় তাই এই বিষয়ে সংক্রমিত প্রাণীদের থেকেও সাবধানে থাকতে হবে ৷
- দূষিত পরিবেশ এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখা এবং জীবাণুমুক্ত করা ।
- কোনও লক্ষণ দেখা দিলে বা ফুসকুড়ি দেখা গিলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।