পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sukhibhava

2020: কোভিড 19 ডায়েরি

কোভিড 19 এবং তার প্রভাবে মোটামুটিভাবে শরীরের সর্বত্রই গুরুতর সংকট দেখা গিয়েছে । তা সে শ্বাসযন্ত্র হোক, পরিপাকতন্ত্র হোক বা স্নায়ুতন্ত্র, সব কিছুই বেশ গভীরভাবে ভাইরাসের কোপে পড়েছে ।

2020-a-covid-19-diary
2020-a-covid-19-diary

By

Published : Dec 25, 2020, 1:23 PM IST

ভারতে প্রথম যখন কোভিড 19 সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, তার অন্তত এক বছর হতে চলেছে ৷ কিন্তু এখনও মানুষের মনে, ভাইরাসের আতঙ্ক গেঁড়ে বসে আছে । আগে সংক্রমণে বিপজ্জনক হারে মানুষের মৃতু্য হচ্ছিল কিন্তু এখন চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছেন কীভাবে এই ব্যধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, যদিও করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর যে সব উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে, তা চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে । যদিও ইতিমধে্যই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে যে, খুব শীঘ্রই কোভিড 19-এর প্রতিষেধক বাজারে চলে আসবে ৷ তবু ভাইরাসের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্টে্যর জন্য, উপসর্গের তারতমে্যর জন্য এবং শরীরে এর প্রভাবের কারণে মানুষ ভ্যাকসিনের সক্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করে দিয়েছেন ।

কোভিড 19 এবং তার প্রভাবে মোটামুটিভাবে শরীরের সর্বত্রই গুরুতর সংকট দেখা গিয়েছে । তা সে শ্বাসযন্ত্র হোক, পরিপাকতন্ত্র হোক বা স্নায়ুতন্ত্র, সব কিছুই বেশ গভীরভাবে ভাইরাসের কোপে পড়েছে । যদিও উপসর্গ ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হয়েছে । সুতরাং, 2020 সালের কোভিজ 19 ডায়েরিতে আমরা, ইটিভি সুখীভব-র টিম, এই মারণ ব্যধি এবং তার প্রভাব সম্পর্কে আহরিত তথ্যের সংক্ষিপ্ত পুনরাবৃত্তি করছি ।

কোভিড 19 : প্যানডেমিক

কোভিড 19-এর প্রথম ঘটনা ঘটেছিল চিনের ইউহানে । সেখান থেকে সংক্রমণ ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে লাগল যত মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলেন ৷ আর এইভাবেই কয়েক মাসের মধে্য বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় নেমে এল । এই ব্যধিকে আগে নাম দেওয়া হয়েছিল সার্স-কোভ- । পরে পরিবর্তিত হয়ে হল কোভিড 19 (কোভিড-12480019), যা কোরোনা ভাইরাস ডিজ়িজ় 2019-এর সংক্ষিপ্ত নাম । আগে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা এবং তীব্র জ্বরকেই কোরোনার উপসর্গ হিসাবে গণ্য করা হত । কিন্তু ব্যধি যত ছড়াতে লাগল, তত উপসর্গের পরিবর্তন হতে থাকল এবং শ্বাসকষ্ট, ঘ্রাণ ও স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়াও তালিকাভুক্ত হল । তালিকা যত দীর্ঘ হতে থাকল, ততই তার মধে্য ঢুকল ডায়েরিয়া, মাথা ও গায়ে ব্যথা, প্রচণ্ড ক্লান্তি আর দুর্বলতা । এই বছর প্রচুর মানুষের জীবনহানি হয়েছে কোরোনার জন্য এবং একে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর মহামরি বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে । এই ব্যধি মানুষের জীবনযাত্রার সম্পূর্ণরূপে বদল ঘটিয়ে ফেলেছে এবং মানসিকভাবে হোক বা শারীরিকভাবে, এই ভাইরাস পৃথিবীর প্রতে্যক প্রান্তে থাকা মানুষকে বড়মাত্রায় প্রভাবিত করেছে । শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়াও মাস্ক পড়া এবং হাতের পাশাপাশি যে কোনও জিনিসকে বার বার স্যানিটাইজ করা, সকলের জন্যই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ।

আরও পড়ুন: কোরোনা মুক্ত হওয়ার পর কীভাবে সুস্থ থাকবেন, জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

কো-মরবিড রোগ রয়েছে, এমন মানুষের উপর কোভিড 19-এর প্রভাব

মরবিড ব্যধিসমূহে যাঁরা আক্রান্ত, যেমন হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্যানসার প্রভৃতি, তাঁদের স্বাস্থে্যর উপর এই সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে । তাছাড়াও যাঁরা এই ধরনের স্বাস্থ্যসংকটে আক্রান্ত, তাঁরা এমনিতেই ইমিউনো-কম্প্রোমাইসড এবং তার থেকেও খারাপ যেটা, সেটা হল কোরোনা ভাইরাস সরাসরি তাঁদের ইমিউন সিস্টেমে আঘাত করছে যাতে এরা এই সংক্রমণের প্রতি আরও বেশি ঝঁকুপূর্ণ হয়ে পড়ছেন । হার্টের রোগীদের কথা নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে পরিসংখ্যান অনুসারে 2020 হার্টের রোগও আগের থেকে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে গত 20 বছরের মধে্য এই বছরই বিশ্বব্যপী সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে হার্ট অ্যাটাকের ফলে । পরিসংখ্যান অনুসারে, মৃতু্যর 16 শতাংশই হয়েছে হার্টের রোগে ।

ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রভাব

গোড়া থেকেই কোরোনাকে শ্বাসযন্ত্র এবং ফুসফুসের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যধি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে ৷ কারণ এর উপসর্গগুলি ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার মতো । আর একবার কেউ এতে আক্রান্ত হলে তাঁর ফুসফুসের উপরই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে । বেশিরভাগ মানুষই অভিযোগ করেছেন, এর জেরে তাঁদের প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং অনেক কোরোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের গুরুতর রোগের কথাও জানা গিয়েছে । এর ফলে আক্রান্তের ফুসফুস ভেন্টিলেশনের প্রক্রিয়া এবং গ্যাস বিনিময়ের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় । তাঁদের তখন অতিরিক্ত অক্সিজেন দিতে হয় । শুধু তাই নয় । কোরোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও মানুষের শ্বাসযন্ত্রের উপর গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেখা গিয়েছে যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

পরিপাকতন্ত্র এবং অগ্ন্যাশয়ের উপর প্রভাব

শুধুমাত্র ফুসফুসই নয় । কোভিড 19 অনেকেরই খিদের উপরও প্রভাব ফেলেছে । ইমিউনিটি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিপাকতন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং লিভার ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে । এর ফলে পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, স্বাদের ক্ষমতা কমে যাওয়া প্রভৃতি রোগও হচ্ছে । চিকিৎসকদের মতে, গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল ট্র‌্যাক্টের সমস্যা এবং হজমের সমস্যায় যাঁরা আক্রান্ত, এই ভাইরাস সংক্রমণে তাঁদের সেই সমস্যাও বেড়ে গিয়েছে । এই সব কিছুর ফলে অনেক রোগীরই খিদে কমে গিয়েছে এবং অনেকের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা গিয়েছে ।

মস্ত্রিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব

কোভিডের অন্যতম প্রধান উপসর্গ ছিল এই ভাইরাসের আমাদের মস্তিষ্ক এবং নার্ভাস সিস্টেমের উপর প্রভাবের ফল ৷ যাতে স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তির হ্রাস পায় । এর সঙ্গে আবার এর জেরে নার্ভে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্ত জমে যাওয়া, টানা অথবা প্রচণ্ড মাথাব্যথা প্রভৃতিও দেখা গিয়েছে । পাশাপাশি মানুষ এও অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অনেকের মাইগ্রেনের মতো মাথাব্যথা হয়েছে । এছাড়াও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোভিড 19 থেকে সেরে ওঠা বহু সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সেই অংশে তাঁরা স্থায়ী ক্ষতি প্রত্যক্ষ করেছেন, যা আমাদের স্বাদ এবং গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

আরও পড়ুন: 2020-তে মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে

কিডনির রোগের বাড়বাড়ন্ত

কোভিড 19-এ আক্রান্ত অনেক মানুষের কিডনির ক্ষতি হয়েছে এবং তা নষ্টও হয়ে গিয়েছে যার জন্য তাঁদের ডায়ালিসিসের সাহায্য নিতে হয়েছে । চিকিৎসকদের মতে, যখনই কোনও সংক্রমণের জেরে কিডনি প্রভাবিত হয়েছে অথবা ডায়ালিসিস জরুরি হয়ে পড়েছে, তখন সেখানে 3 দিন থেকে 3 সপ্তাহের মধে্য তা সেরে ওঠার সুযোগও থাকে । কিন্তু কোভিড 19 সংক্রমণের ক্ষেত্রে, রোগীদের কিডনির অনেকটাই ক্ষতি হচ্ছে এবং তা দ্রুত সেরে উঠছে না । আরও উদ্বেগের বিষয় হল, ডাক্তাররা মনে করছেন, কোভিড 19-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে রোগীদের সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী "ক্রনিক" ডায়ালিসিস করানোর দরকার পড়বে এবং ভবিষ্যতে হয়তো কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টও করাতে হতে পারে ।

সারা বছর ধরে মানসিক সমস্যা

গোড়া থেকেই কোরোনা ভাইরাস মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক করেছে । কেবল রোগ হিসাবে নয় । এর ফলে হওয়া আর্থিক অস্থিতাবস্থা, বেকারত্ব, ভবিষ্যতের চিন্তা, শিক্ষা কিংবা মৃতু্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মানুষই উদ্বিগ্ন এবং তার জেরে মানসিক চাপ, অবসাদ আর আতঙ্কে ভুগেছেন সারা বছর ধরে । সেলিব্রিটিই হোন বা সাধারণ মানুষ, এই বছরে প্রচুর মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, নিজেদের মেরে ফেলেছেন । এই তালিকায় বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক, প্রবীণ এবং সমাজের প্রতিটি শ্রেণি তথা লিঙ্গের মানুষজন আছেন । এই সংখ্যা এতটাই বেশি যে এটা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ বহু সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের তরফে এদের অনলাইনে সাহায্য করা হচ্ছে মনোবিদের পরামর্শ প্রদান করতে । অনলাইন কাউন্সিলিং সেশন বিশেষজ্ঞরাই আয়োজন করছেন । 2020 সালে যত সংখ্যক মানুষ মনোবিদের সাহায্য নিয়েছেন, সেই সংখ্যা চারগুণ বেড়ে গিয়েছে ।

সুতরাং, চলতি বছরটা এককথায় খুবই কঠিন ছিল এবং প্রায় প্রতে্যককেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল । অনেকেই তাঁদের প্রিয় জনেদের হারিয়েছেন, অনেকে কাজ হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন । আমরা আশা করি, আগামী বছর, 2021 সাল হাসিখুশি আর আনন্দে ভরে উঠবে । যদিও প্রতে্যকের টিকাকরণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষকে সতর্ক থাকতেই হবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details