পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

আছে বেদি, নরবলির স্বপ্নাদেশে আজও সেখানে বন্ধ পুজো ! - durgapuja

1962 সালের কথা ৷ বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিলেন দুর্গাপুজোর ৷ আশপাশের 10-12 গ্রামের মধ্যে ওই একটিই স্কুল ৷ প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে সেখানে । কথিত আছে, প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী ভবানী স্বপ্নাদেশ দেন, "এখানে পুজো করলে দিতে হবে নরবলি ৷ নাহলে পুজো হবে না ৷" এরপর থেকে আর ওই এলাকায় পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ ৷

ভবানীর বেদী

By

Published : Sep 26, 2019, 2:58 PM IST

Updated : Sep 28, 2019, 8:01 PM IST

রায়গঞ্জ, 26 সেপ্টেম্বর : 57 বছর আগেকার কথা ৷ এলাকায় দুর্গাপুজো শুরু করলেন রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ এখানে দুর্গাপুজো করলে নরবলি দিতে হবে ৷ কথিত আছে, এই স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা ৷ প্রথম বছর পুজো করার পর আর পরেরবার থেকে সেখানে পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বেশ কয়েক বছর বন্ধও থাকে পুজো ৷ পরে স্থান পরিবর্তন করা হয় ৷ বর্তমানে হাটখোলায় হয় বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজো ৷ তবে সেই ইতিহাস আজ বয়ে চলেছে ৷ এখনও স্কুল চত্বরে থাকা পুরোনো সেই ভবানীর বেদিতে আগে পুজো দেওয়া হয় ৷ তারপরেই শুরু হয় হাটখোলা মন্দিরে দুর্গাপুজো ৷ শুধু তাই নয়, কারোর বাড়িতে পুজো হলেও আগে ওই বেদিতে পুজো করে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা ৷ তারপরেই শুরু করেন বাড়ির পুজো ৷

বামুহার দুর্গা প্রতিমা

1962 সালের কথা ৷ বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিলেন দুর্গাপুজোর ৷ আশপাশের 10-12 গ্রামের মধ্যে ওই একটিই স্কুল ৷ প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে সেখানে । কথিত আছে, প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী ভবানী স্বপ্নাদেশ দেন, "এখানে পুজো করলে দিতে হবে নরবলি ৷ নাহলে পুজো হবে না ৷" এরপর থেকে আর ওই এলাকায় পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ ৷ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সত্যেন হালদার বলেন, "প্রথমবার পুজো করেই বামুহা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের ওই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয় । বেশ কয়েক বছর পুজো বন্ধ থাকার পর বামুহা গ্রামের হাটখোলায় আবার পুজো শুরু করা হয় । কিন্তু সেখানে পুজো শুরুর আগে বিদ্যালয় চত্বরে থাকা ভবানীর বেদিতে আগে পুজো করা হয় । শুধু তাই নয়, দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে বেদির সামনে প্রতিমা নিয়ে আসি ৷ বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর প্রচলিত এই রীতি ও নিয়ম বহু বছর ধরেই চলে আসছে । অন্যথা হয়নি কোনও বছর ৷" গ্রামবাসীদের ধারণা, নিয়মের অন্যথা হলে বিপদ অনিবার্য ৷ এমন কী, জঙ্গলাকীর্ণ ওই বেদির কোনও গাছে হাত দেওয়ারও সাহস পান না কেউ ৷ কথিত আছে, একবার গ্রামের এক বাসিন্দা বেদি এলাকার আগাছা পরিষ্কার করতে গেছিলেন ৷ একবার কোদাল চালাতেই তাঁর ছেলের মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে শুরু করে । সে মারা যায় । সেই থেকে এলাকার কেউই বেদি ও বেদি সংলগ্ন এলাকায় গাছের পাতাতেও হাত দেন না ৷

দেখুন ভিডিয়ো

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিবাকর ঘোষ জানান, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি এখানকার দুর্গাপুজো নিয়ে এই কাহিনী শুনে এসেছেন । এখন বামুহা গ্রামের দুর্গাপুজো করা হয় বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে হাটখোলা এলাকায় । সেখানে নির্মিত হয়েছে দুর্গা মন্দির । তবে জঙ্গলাকীর্ণ হলেও বিদ্যালয় চত্বরে থাকা দেবী ভবানীর বেদি ঘিরে বিশ্বাস, ভয়, ভক্তি আজও রয়ে গেছে বামুহার বাসিন্দাদের মনে ।

হাটখোলা এলাকার পুজো
Last Updated : Sep 28, 2019, 8:01 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details