সোশাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছে রায়গঞ্জের একদল শিক্ষক
লকডাউনের জেরে বন্ধ সমস্ত স্কুল-কলেজ ৷ বর্তমানে আক্ষরিক অর্থে পড়াশোনার ক্ষতির মুখে পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। অভিভাবকরাও যথেষ্ট চিন্তিত । এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের খানিকটা পড়াশোনায় এগিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নিতে এগিয়ে এল রায়গঞ্জের একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা।
রায়গঞ্জ, 9 এপ্রিল: লকডাউনের শুরু থেকেই সমস্ত স্কুল-কলেজ ছুটি দিয়েছে সরকার । বর্তমানে আক্ষরিক অর্থে পড়াশোনার ক্ষতির মুখে পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। অভিভাবকরাও যথেষ্ট চিন্তিত । এই অনির্দিষ্ট সময় কবে কাটবে কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়েও দ্বন্দ্বে অভিবাবকরা । পড়াশোনা কবে থেকে ফের স্বাভাবিক হবে তা জানা নেই কারও। এই অসময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় এগিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নিল রায়গঞ্জের একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা। অনলাইনে ভিডিয়ো আপলোড করে দিয়ে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার কাজ চালাচ্ছে তারা। রীতিমতো পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা খানিকটা হলেও কমছে রায়গঞ্জে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এই পরিষেবা দিয়ে চলেছে রায়গঞ্জের একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা।
রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় থাকা নানান শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করানোর জন্য অনলাইন ব্যবস্থাকেই বেছে নিয়েছে একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাড়িতে ডিজিটাল মাধ্যমে রেকর্ড করা ভিডিয়ো আপলোড করা হচ্ছে ইউটিউবে। সেই লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে । ছাত্র-ছাত্রীদের ওই লিঙ্ক দেখে পড়াশোনা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা হলেই চটজলদি ফোনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর একই সমস্যা থাকলে ফের ভিডিয়ো তৈরি করে তা আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে ইউটিউবে এবং লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। যার ফলে সেখানকার সমস্ত সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারছেন শিক্ষকরা। বিভিন্ন বিষয়ে মূলত বিজ্ঞান বিভাগ, ইতিহাস , ভূগোল পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। একেকটি করে অধ্যায় শেষ হতেই নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা । অভিভাবকদের বলা হয়েছে, পরীক্ষার সময় যেন একজন শিক্ষকের মতোই তাঁদের ছেলে মেয়েদের উপর নজর রাখেন তাঁরা। এরপর পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেলে সেই খাতাপত্র ভিডিয়ো করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আপলোড করতে হচ্ছে । সেগুলি কতটা সঠিক হয়েছে তা খতিয়ে দেখে দেওয়া হচ্ছে । তার পর দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট নম্বর । এক কথায় অনলাইনে কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন রায়গঞ্জের বেশকিছু গৃহশিক্ষক । যার ফলে ছাত্রছাত্রীরা এই মুহূর্তে এগিয়ে যাচ্ছে অনেকটাই । শিক্ষকদের এই উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি রায়গঞ্জের অভিভাবক মহলের একাংশ।
এই বিষয়ে এক ছাত্র অঙ্কিত সরকার বলে, "আমাদের শিক্ষকরা প্রতিদিনই নতুন নতুন ভিডিয়ো করে তা ইউটিউবের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমাদের বাড়িতে থাকা স্মার্ট টিভি বা মোবাইল ফোনে সেই লিঙ্ক খুলে আমরা পড়াশোনা করছি। কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত শিক্ষকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করছি। তিনি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। খুবই ভালো লাগছে।"
আরো এক ছাত্র দীপায়ন সিংহ বলে, "আমরা যথেষ্ট ভালোভাবে বুঝতে পারছি । কোথাও কোন প্রশ্ন থাকলে শিক্ষকরা দ্রুত সাহায্য করছেন । এইভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা করতে আমাদের যথেষ্ট ভালো লাগছে ।"
রায়গঞ্জের এক অভিভাবক অমিত সরকার বলেন , "এটা আমাদের ছেলেমেয়েদের এবং আমাদের নিজেদের কাছে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। লকডাউনের মতো এমন এক পরিস্থিতিতে এইভাবে পড়াশোনার কাজটা শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন দেখে অত্যন্ত ভালো লাগছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই পরিষেবা তাঁরা দিয়ে চলেছেন। লকডাউনের সময় পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষকদের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।"