রায়গঞ্জ, 9 আগস্ট : কিডনির রোগে জর্জরিত দম্পতির একমাত্র ছেলে মামার বাড়ি ঘুরতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন বাংলাদেশে । কোরোনা ভাইরাসের জেরে লকডাউন ৷ আর সেই লকডাউনের ফলে আটকে পড়েছেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে পুত্র ৷ বর্তমানে রায়গঞ্জের গোয়ালপাড়ায় মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে আছেন ওই দম্পতি ।
ছেলেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছেন বৃদ্ধ দম্পতি । এদিকে দীর্ঘ পাঁচ মাস বাংলাদেশে আটকে পড়ে চরম দুঃসহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের যুবক শ্যামল পাল । ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে সরকারের কাছে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার কাতর আবেদন করছেন ৷ এদিকে বৃদ্ধ দম্পতি দুবেলা দুমুঠো ভাত পেলেও ছেলের চিন্তায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ।
1 মার্চ বাংলাদেশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান শ্যামল পাল । এপ্রিল মাসেই তাঁর দেশে ফেরার কথা । আচমকা কোরোনার কারণে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন । বন্ধ হয়ে যায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা । বাংলাদেশেই আটকে পড়েন শ্যামল ।
এদিকে তাঁর বৃদ্ধ বাবা মা হরিরামপুরে নিজেদের বাড়িঘর তালাবন্ধ করে চলে আসেন রায়গঞ্জের গোয়ালপাড়ায় মেয়ের বাড়িতে । সেই থেকে ওই বৃদ্ধ দম্পতির আশ্রয়স্থল মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি । জামাইয়ের বাড়িতে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড় হলেও তাঁদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না । সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ শিরীষ পাল ও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না দেবী দুজনেই কিডনির রোগে আক্রান্ত । তাঁদের একমাত্র রোজগেরে ছেলে লকডাউনে বাংলাদেশে আটকে পড়ায় চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন তাঁরা ।
অসহায়ভাবে দিন কাটছে দম্পতির মেয়ে জামাইয়ের আর্থিক অবস্থাও সেরকম নয়, যে তাঁদের চিকিৎসার খরচ জোগাবেন । তাই সজল চোখে বৃদ্ধ দম্পতির কাতর আর্তি, ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুক সরকার । এদিকে বাংলাদেশে আটকে পড়ে একই অবস্থা ছেলে শ্যামলের । বাংলাদেশে তাঁর আত্মীয়ের অবস্থাও খুব ভালো নয় ৷ তাঁর উপর বাবা-মার চিন্তায় অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে তাঁর ৷ দেশে থাকা বৃদ্ধ বাবা মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বাংলাদেশের ভারতীয় হাই কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৷ কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি ।
শিরীষবাবু বলেন, ‘‘আমি এবং আমার স্ত্রী কিডনির রোগে আক্রান্ত ৷ আমাদের একমাত্র ছেলে বাংলাদেশের ঘুরতে গিয়ে আটকে গিয়েছে । যার ফলে আমরা চরম সমস্যায় পড়েছি । কোনওভাবে বাংলাদেশ থেকে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা গেলে আমরা উপকৃত হই ।’’
একই সুরে তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না পাল বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে কোনওভাবে আপনারা নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করুন । ওকে ছাড়া আমরা কী করে বাঁচব? খুব চিন্তায় রয়েছি ।’’