শাসকের গোষ্ঠী সংঘর্ষে সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যুতে অবরোধ ও বাজার বন্ধ ইসলামপুর (উত্তর দিনাজপুর), 9 মার্চ: তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যুর পর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় মাটিকুণ্ডা বাজার এলাকায় (North Dinajpur News)। বৃহস্পতিবার মাটিকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কর্মীরা 31 নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে সকাল থেকে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করার পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মেহেবুব আলম ও ব্লক সভাপতি জাকির হুসেনকে গ্রেফতারির দাবি জানান ৷ থমথমে হয়ে যায় গোটা এলাকা । বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকানপাট ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়ন করা হয় পুলিশ বাহিনী । মাটিকুণ্ডা বাজার এলাকার তৃণমূলপন্থী-সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান ও ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তাঁরা দোকানপাট খুলবেন না ৷ কারণ বোমা ও গুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যুতে সকলেই আতঙ্কিত (Civic Volunteer Death Due to TMC Inner Clash)৷
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার মাটিকুণ্ডা 1 নং গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি শাহনাওয়াজ আলমের সঙ্গে পুরনো শত্রুতার জেরে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে । গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মেহেবুব আলমের লোকজন শাহনাওয়াজ আলমের বাড়িতে চড়াও হন । এদিকে শাহনাওয়াজের ভাই সাকিব আক্তার পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার । রাতে ডিউটি সেরে বাড়িতে খেতে বসেছিল । সেই সময় আচমকাই তাঁদের বাড়ি লক্ষ করে এলোপাথারি বোমা, গুলি ছুড়তে থাকে । সেই সময় ছাদে উঠলে সাকিবের মাথায় বোমা বা গুলি কিছু একটা লাগতেই সেখানে লুটিয়ে পড়ে সাকিব । রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
এই খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে । পুলিশ অভিযুক্ত মেহেবুব আলম-সহ দুইজনকে আটক করে । এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় । বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অঞ্চল সভাপতি শাহনাওয়াজ আলমের অনুগামীরা থানা ঘেরাও এবং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে । পরের দিকে ইসলামপুরের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ইসলামপুর থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয় । প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে চলে এই থানা ঘেরাও কর্মসূচি ৷
জানা গিয়েছে, মাটিকুণ্ডা 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মেহেবুব আলম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির অনুগামী হিসেবে পরিচিত । অন্যদিকে ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি শাহনাওয়াজ আলম । এই বিষয়ে করিম চৌধুরীর অনুগামী আকবর আলি বলেন, "ইসলামপুরে যা ঘটনা ঘটছে সবই ব্লক সভাপতি জাকির হুসেনের নেতৃত্বে । উনি একজন সমাজবিরোধী । দল তাকে গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে কিন্তু বিধায়ককে গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷ এই ঘটনার পরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন তাকে ব্লক সভাপতি পদে রেখেছেন ? আমরা আতঙ্কে আছি । পুলিশকে বারবার বলার পরেও কোনও কাজ হচ্ছে না । বাড়ি যাওয়ার চেয়ে এখানে আমাদের আত্মহত্যা করা ভালো ।" অন্যদিকে, ব্লক সভাপতি জাকির হুসেন টেলিফোনে বলেন, "সমস্ত মৃত্যুই দুঃখজনক । ইসলামপুরে যা ঘটনা ঘটে সবেতেই বিধায়ক আমার উপর আঙুল তোলেন । এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই ।"
আরও পড়ুন : বোমের আঘাতে উড়ল মুখের একাংশ, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে মৃত্যু সিভিক ভলান্টিয়ারের