প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়ের মৃত্যু নিয়ে আরও রহস্য রায়গঞ্জ, 14 মে: দেখতে দেখতে পাঁচ-পাঁচটি বছর কেটে গেলেও শিক্ষক রাজকুমার রায়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত এখনও হয়নি বলে দাবি তাঁর স্ত্রী অর্পিতা বর্মন রায়ের । রাজকুমার রায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর কিনারা করতে পারেনি সিআইডি । তাই স্বামীর মৃত্যুর ন্যায়বিচারের আশায় এখনও অপেক্ষা করছেন অর্পিতাদেবী ৷
2018 সালের 13 মে রাজ্যে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। আর পাঁচজন শিক্ষকদের মতো ভোটকর্মী হিসেবে ডাক পড়েছিল উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি ব্লকের দোমহনা হাইমাদ্রাসা স্কুলের সহ-শিক্ষক রাজকুমার রায়ের। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়ে তিনি জেলা নির্বাচন দফতরে হাজির হয়েছিলেন । তাঁকে ইটাহার ব্লকের সোনাপুর এফপি স্কুলের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । নির্বাচনের সমস্ত কাগজপত্র বুঝে নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন রাজকুমারবাবু ।
অভিযোগ, সকালে ঠিকভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়তেই শাসক দলের নেতারা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। রাজকুমারবাবু তাদের বাধা দেন ৷ অভিযোগ, এর কিছু সময় পরেই রাজকুমারবাবু আচমকাই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে অন্য একজনকে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দিয়ে ভোটপর্ব সম্পন্ন হয়েছিল। বাকি অধ্যায়টা মর্মান্তিক।
ওই বছর 15 মে তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন মৃতদেহ রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় । অভিযোগ, একজন প্রিসাইডিং অফিসার নিখোঁজ হবার পর তাঁকে উদ্ধারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তথা জেলা পুলিশ প্রশাসনের যে তৎপরতা থাকা উচিত ছিল সেইদিন তা চোখে পড়েনি ৷ এরপর নিখোঁজ রাজকুমার রায়কে অবিলম্বে উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন নির্বাচনের কাজে যাওয়া কর্মীরা । রায়গঞ্জ ঘড়ি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা ৷ তৎকালীন মহকুমা শাসক হাজির হয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। তার উপর গিয়ে পড়েছিল নির্বাচনের কাজে যুক্ত থাকা কর্মীদের ভোট ৷ মহকুমা শাসককে শারীরিকভাবে হেনস্তার ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় ৷
পুলিশ এসসি, এসটি অ্যাট্রোসিটি ধারায় মামলা ঋজু করেছিল । গ্রেফতার হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক । ভোটের একদিন পর রায়গঞ্জ শহর থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে সোনাডাঙ্গি এলাকার রেললাইনের ধার থেকে রাজকুমার বাবুর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল । এই ঘটনার পর উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি ৷ রাজকুমার রায়ের রহস্য মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল সিআইডি ৷ তৈরি হয়েছিল 'রাজকুমার রায় হত্যার বিচার চাই' নামে একটি মঞ্চও ।
আরও পড়ুন:আগে এসটি, পরে ভোট - এই দেওয়াল লিখন করে বিক্ষোভ কুড়মিদের
এরপর 2018 সালের 16 জুলাই রাজ্য সরকারের তরফে প্রয়াত রাজকুমার রায়ের স্ত্রী অর্পিতা বর্মন রায়কে উত্তর দিনাজপুর জেলা শাসক দফতরে চাকরি দেওয়া হয় ৷ কিন্তু এরপরেও রাজকুমার রায় হত্যা বিচার চাই মঞ্চ আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি । আইনি প্রক্রিয়া-সহ নানা বিষয়ে রাজকুমারের পরিবারকে সাহায্য করা হয় এই মঞ্চের তরফে ৷ কিন্তু, পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও রাজকুমার রায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর কিনারা হয়নি । পাঁচ বছর স্বামীর মৃত্যু রহস্য অধরা থেকে যাওয়ায় স্বামীর ছবি বুকে আঁকড়ে এখনও কাঁদছেন অর্পিতাদেবী ও তাঁর সন্তানরা ।
সিআইডি তদন্তে ভরসা হারিয়েছে 'রাজকুমার রায় হত্যার বিচার চাই' নামক মঞ্চটিও। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ভোটকর্মীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তার দাবিতে সরব হয়েছে মঞ্চটি ৷ রাজকুমারবাবুর স্ত্রী'র মুখেও শোনা গিয়েছে একই কথা ৷ তিনি জানিয়েছেন, এই ভোটের নামে প্রহসন তিনি আর দেখতে চান না । তাঁর স্বামীর মতো আর কারও যেন মৃত্যু না হয় ৷স্বামীর মৃত্যুর পর সরকার তাঁকে চাকরি দিয়েছেন। মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ লক্ষ টাকা পেয়েছেন তিনি । কিন্তু ফিরে পাননি স্বামীকে, সন্তানরা পায়নি তাদের বাবাকে। রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে অর্পিতাদেবী এবং প্রয়াত রাজকুমার বাবুর মা আদালতে দ্বারস্থ হয়েছেন । আদালত কবে এই মামলার নিষ্পত্তি করবে ও মৃত্যুরহসের সমাধান হবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে পরিবারটি ৷