কালিয়াগঞ্জ, 27 এপ্রিল: কালিয়াগঞ্জে যুবকের মৃত্যুতে পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগ এখনই মানতে নারাজ রায়গঞ্জের পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার ৷ মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি ৷ এ দিকে, এরই মধ্যে পুলিশের কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷
আনন্দের রেশ মুহূর্তে বদলে গিয়েছে বিষাদে ৷ গত পরশু গ্রামে বিয়ে ছিল ৷ সেই আনন্দেই মাতোয়ারা ছিল গোটা গ্রাম ৷ এর মধ্যেই কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুন জ্বলে ৷ আক্রান্ত হয় পুলিশ ৷ জানা যাচ্ছে, সে দিন পুলিশের একটি টিয়ার গ্যাস গান খোয়া যায় ৷ সেই গান উদ্ধারেই বুধবার মাঝরাতে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁও গ্রামে হানা দেয় পুলিশ ৷ ধরপাকড় শুরু হয় ৷ অভিযোগ, গ্রামবাসীদের পুলিশ বেধড়ক মারধরও করে ৷ একাধিক গ্রামবাসীকে গাড়িতে তোলা হয় ৷ তাতে বাধা দিতে গেলে মৃত্যুঞ্জয় বর্মন নামে 33 বছরের এক যুবককে পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে বলে অভিযোগ ৷ পুলিশের কার্তুজের খোল ইতিমধ্যে উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷ যদিও রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার অভিযোগ স্বীকার করতে নারাজ ৷
জনৈক গ্রামবাসী মহেন্দ্র বর্মন জানিয়েছেন, গতকাল গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মনকে ধরতে আসে ৷ সেই সময় বিষ্ণু বাড়িতে ছিল না ৷ পুলিশ বিষ্ণুর বৃদ্ধ বাবা আর জামাইকে মারতে মারতে গাড়িতে তোলে ৷ ওদের বাড়ির মহিলাদের চিৎকারে গ্রামের সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ৷ সবাই ঘর থেকে বেরিয়েই দেখেন গ্রামে প্রচুর পুলিশ ৷ কী হয়েছে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সবাইকে মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ আরও অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত বাড়ির গেটের সামনে পুলিশ মৃত্যুঞ্জয়কে লক্ষ্য করে দুটো গুলি ছোড়ে ৷
মৃত্যুঞ্জয় শিলিগুড়ির নির্মাণ সংস্থার ম্যানেজার ৷ ভাইপোর বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি ৷ তিনি নাকি শুধু পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কী কারণে তারা বিষ্ণুকে খুঁজছে ৷ গুলি করার পরই পুলিশ গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওই গ্রামবাসীর ৷ স্থানীয়রাই মৃত্যুঞ্জয়কে কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ তবে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷
বিষ্ণু বর্মনের জামাই সুব্রত বর্মন বলেছেন, "রাত দুটো নাগাদ পুলিশ প্রথমে জানালায় টোকা দেয় ৷ প্রথমে আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কে ৷ পুলিশ শুনে দরজা খুলতেই প্রশ্ন, বিষ্ণু বর্মন কোথায় ? আমি জানাই, তিনি অন্য একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন ৷ পুলিশ আমার কথা বিশ্বাস করেনি ৷ এরপর পুলিশ আমাকে আর আমার শ্বশুরমশাইকে হেঁচড়ে গাড়িতে নিয়ে যেতে শুরু করে ৷ শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির বাধায় পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয় ৷ তবে দাদুকে নিয়ে চলে যায় ৷ মৃত্যুঞ্জয় শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, দাদুকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ প্রশ্ন শুনেই পিস্তল তাক করে পুলিশ ৷ ও সরে আসে ৷ এরপরেই পুলিশ হঠাৎ দৌড়োদৌড়ি শুরু করে ৷ হঠাৎ গুলির আওয়াজ পাই ৷ দু'রাউন্ড গুলি চালিয়েছে পুলিশ ৷ সেই গুলিতেই মৃত্যুঞ্জয় মারা গিয়েছে ৷"
কথা বলার মতো অবস্থায় নেই মৃত্যুঞ্জয়ের মা ৷ তিনি শুধু বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা আত্মীয়ের বাড়িতেই শুয়ে ছিলেন ৷ পুলিশ তাঁর নতুন নাতজামাই আর ভাসুরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ৷ ছেলে জ্যেঠুকে বাঁচাতে গিয়েছিল ৷ তখনই পুলিশ তাঁকে গুলি করে বলে অভিযোগ তাঁর ৷