রায়গঞ্জ, 25 জুলাই : মাটির উনুন । তাতেই রান্না হচ্ছে । পটল ভাজছে । ওই দিয়েই দুপুরের খাওয়াটা হবে । রাতে কী খাবে ! আদৌ খাওয়া হবে কি না, জানা নেই । মাসখানেক আগেও ওঁদের অবস্থাটা এমন ছিল না । মোটামোটি স্বচ্ছলভাবেই দিন কাটত । কেউ থাকতেন দিল্লিতে, কেউ হরিয়ানায় । কাজ করতেন সেখানেই । কিন্তু বাধ সাধল কোরোনা । কোরোনার আতঙ্কে যেটুকু যা সঞ্চয় ছিল, তা দিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছেন । 10 হাজার, কেউ 7 হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছেন ।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলায় ফিরতে শুরু করেছিলেন ভিন রাজ্য কর্মরত বহু মানুষ । গোটা জেলা মিলিয়ে 1 লাখ 23 হাজারেরও বেশি মানুষ ফিরেছেন । তাঁদের মধ্যে রায়গঞ্জ মহকুমায় শ্রমিকের সংখ্যাটা প্রায় 30 হাজার । শ্রমিক স্পেশালে ফিরেছেন 17 হাজারেরও বেশি মানুষ । আর একেবারে নিজস্ব খরচে ফিরেছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ ।
সরকারের তরফে শ্রমিক স্পেশাল চালু করা হয়েছিল বটে । কিন্তু তারপরেও নিজেদের জমানো টাকার প্রায় সবটুকু খরচ করে বাড়ি ফিরেছিলেন একাধিক শ্রমিক । রায়গঞ্জ শহরে দিল্লি থেকে 11 টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন এসেছিল । বিভিন্ন রাজ্য থেকে কমবেশি প্রায় তিনশোটি বাস ঢুকেছে রায়গঞ্জে । তবে বাড়ি ফিরেও কাজ নেই । শুধুমাত্র হতাশাই জুটেছে ভাগ্যে ।
রায়গঞ্জ ব্লকের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রারিয়া গ্রাম থেকে বরাবরই ভিন রাজ্যে গিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করে থাকেন । কেউ রাজমিস্ত্রির জোগান দেওয়ার কাজ করেন । আবার কেউ গ্রিল ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন । কেউ বাড়ি পরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন । আবার কেউ হাউসকিপিংয়ের কাজে অল্পস্বল্প অর্থ উপার্জন করেছিলেন । দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন তাঁরা । চেয়েছিলেন পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে ।
তবে কোরোনা এত লহমায় সব চিন্তাভাবনা উলটে পালটে তছনছ করে দিয়েছে । দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি করে বছরের পর বছর অল্প অল্প করে সঞ্চয় করেছিলেন পরিবার পরিজনদের জন্য । উদ্ভুত কোরোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউন শুরু হতেই চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করতে শুরু করেছিলেন তাঁরা । নানা মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা শুরু হওয়ার পর সত্যিই খানিকটা ভয় পেয়ে গেছিলেন ভিন রাজ্যে কর্মরত ওই শ্রমিকেরা । ট্রেন বন্ধ । আন্তঃরাজ্য সড়ক পরিবহনও বন্ধ । তাও লকডাউনকে ফাঁকি দিয়ে যেসব বাস-লরি-ট্রাক চলাচল করেছে, তাতেই রাজ্যে ফিরেছেন ওঁরা । যে যা পেয়েছেন তাতেই ফিরে এসেছেন বাড়ির পথে । কোনওভাবে লকডাউন পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য শেষ হয়েছে সম্পূর্ণ সঞ্চয় ।
আর এই সময়ে বাস - লরি চালকরাও পুরো সুযোগ নিয়েছেন । কখনও সাত হাজার, কখনও দশ হাজার, কখনও বা বারো হাজার । যে যেমন পেরেছে লুঠে নিয়েছে । জমানো সবটুকু টাকা খুইয়ে রাজ্যে ফিরেছেন তাঁরা । কিন্তু রাজ্যে ফিরেও কাজ পাচ্ছেন না সেভাবে । অভিযোগ রয়েছে, সরকারি সাহায্য ঠিকভাবে মিলছে না । চাল-ডাল অবশ্য পেয়েছেন তাঁরা । তবে নেই কোনও কর্মসংস্থান । খুব স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত রায়গঞ্জ ব্লকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকেরা । এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেও ভয় লাগে ওঁদের । কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যদি তাঁদের কর্মসংস্থানের কিছু একটা ব্যবস্থা করে, তবে ফের বাঁচার আশা পায় ওঁরা ।