পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বাড়ির ছাদেই নার্সারি, রং-বেরঙের অর্কিড - Rooftop nursery in Raiganj

বাড়ির ছাদটাই আস্ত একটা নার্সারি । রয়েছে নানা রঙের অর্কিড । বিভিন্ন পতঙ্গভুক গাছও রয়েছে ।

Orchid saplings
বাড়ির ছাদে নার্সারি

By

Published : Jul 29, 2020, 8:50 PM IST

রায়গঞ্জ, 26 জুলাই : বাড়ির ছাদটা যেন আস্ত একটা নার্সারি । চারিদিকে জাল দিয়ে ঘেরা । সারি সারি টব । তার মধ্যে রং-বেরঙের অর্কিডের চারা । 2013 সাল থেকে অর্কিডের চাষ শুরু করেন রায়গঞ্জের রুমকি মোদক । নিজেই নিয়মিত পরিচর্যা করেন চারাগুলির । এ যেন এক অন্য নেশা ।

বর্তমানে তাঁর বাড়ির ছাদে প্রায় হাজার প্রজাতির অর্কিড রয়েছে । তা দেশ-বিদেশে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে বিক্রি করে যথেষ্ট নামও কামিয়েছেন তিনি । তবে লকডাউনের মধ্যে পুরোপুরি নতুন ধরনের উদ্ভিদ চাষে মন দিয়েছেন রুমকিদেবী । শুরু করেছেন পতঙ্গভুক উদ্ভিদের চাষ । সূর্যশিশির, কলসপত্রী-সহ একাধিক পতঙ্গভুক উদ্ভিদ চাষ করে তা নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করছেন তিনি । সোশাল মিডিয়ার ফলোয়ারও রয়েছে অনেক । টেলিফোনের মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন রুমকিদেবীর কাছ থেকে । আগামী দিনে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে । তাঁর কথায়, বাড়িতে তৈরি নার্সারির মাধ্যমে অনেকটাই স্বাবলম্বী হবেন মহিলারা ।

অনলাইনেই চলে গাছের চারা বিক্রির কাজ

বছর দশেক আগে মধুচন্দ্রিমায় পাহাড়ে গিয়ে প্রথম অর্কিডের প্রেমে পড়েছিলেন রুমকিদেবী । স্বামী মৃণালকান্তি সিংহ পেশায় স্কুলশিক্ষক ৷ রুমকিদেবী বারবার মৃণালবাবুর কাছে এই অর্কিড নিয়ে কিছু একটা কাজ করার কথা বলতে থাকেন । প্রথম দিকটায় খুব একটা আমল না দিলেও পরে তাইওয়ান ও ব্যাঙ্কক থেকে গাছের চারা নিয়ে আসতে সাহায্য করতেন মৃণালবাবু । এরপর ধীরে ধীরে ছাদে তৈরি করেন গ্রিন হাউজ় । সেখানেই বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের চাষ শুরু করেন । এরপরই নিজেদের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে এই সকল গাছের ছবি তুলে পোস্ট করতে থাকেন স্বামী-স্ত্রী । তাঁদের পোস্টগুলি দেখার পর দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘর সাজানোর জন্য অর্কিডের অর্ডার আসতে থাকে । সেই থেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুলে যায় রুমকিদেবীর ।

ছাদটাই আস্ত একটা নার্সারি

বর্তমানে রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের অর্কিড চাষের অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছেন রুমকিদেবী । তবে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হতেই অর্কিডের চারা বিদেশ থেকে আনা বন্ধ হয়ে যায় । ঠিক সেই সময়েই বিভিন্ন এলাকাতে পাওয়া যাওয়া পতঙ্গভুক উদ্ভিদ এর দিকে আকৃষ্ট হন তিনি । এরপর থেকেই বিভিন্ন পতঙ্গভুক উদ্ভিদের চাষ শুরু করেন দম্পতি । সূর্যশিশির, কলসপত্রীর চারা আনা হয় । এরপর একটি চারা থেকে একে একে প্রচুর পরিমাণে চারা তৈরি করেন দম্পতি । শুধুমাত্র পতঙ্গভুক উদ্ভিদই নয় ভ্যানিলা গাছের চাষও করছেন স্বামী-স্ত্রী । সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের পোস্ট দেখে বহু মানুষই আকৃষ্ট হচ্ছেন এই কাজে । বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ । আপাতত টেলিফোনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন দুজনেই । আগামীতে প্রশিক্ষণ শিবির করেও আগ্রহীদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক রুমকিদেবী । তার কথায় যদি কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন, তা অত্যন্ত ভালো একটি পাওনা হবে । আর তাঁর অর্কিড এবং অন্যান্য গাছের ব্যবসার অর্ডার দায়িত্ব নিয়ে দেখেন মৃনালবাবু ।

গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত রুমকি মোদক

এই বিষয়ে রুমকিদেবী বলেন, "আমি 2013 সাল থেকে অর্কিড চাষ করে আসছি । এটা একসময় নেশা থেকে বর্তমানে পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে । একইভাবে লকডাউনের সময় নতুন করে পতঙ্গভুক উদ্ভিদের চাষ করা শুরু করেছি । এই উদ্ভিদের চাহিদা ও দেশে-বিদেশে অত্যন্ত বেশি । আমার থেকে এই চাষের নানান পদ্ধতি জানার জন্য নানান সময়ে অনেকেই ফোন করে থাকেন । তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি টেলিফোনে পদ্ধতি জানিয়েছি । এছাড়াও কেউ যদি আলাদা করে প্রশিক্ষণ নিতে চায়, তাঁকে কখনোই ফেরানো হবে না ।"

বাড়ির ছাদেই রয়েছে গোটা একটা নার্সারি

এই বিষয়ে রুমকিদেবীর স্বামী মৃণালবাবু বলেন, "প্রথম দিকটায় অতটা উৎসাহী আমি ছিলাম না । তবে আমার স্ত্রীর যথেষ্ট উৎসাহ ছিল । তাই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসি । সমস্ত টেকনিক্যাল বিষয়গুলি আমিই দেখি । বর্তমানে আমরা অ্যামাজ়নের মাধ্যমেও অর্কিড এবং অন্যান্য গাছ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে থাকি ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details