রায়গঞ্জ, 17 জুন : জলে জলেই কেটেছে জীবনের 40টা বছর ৷ ঘুরে ফেলেছেন 50টিরও বেশি দেশ ৷ যেখানে যা ভালো লেগেছে নিয়ে চলে এসেছেন বাড়িতে ৷ এমনই শখ ছিল রায়গঞ্জের বাসিন্দা ও মার্চেন্ট নেভির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বিমলকুমার সাহার ৷ বয়সের সঙ্গে শখে বাড়ি নিয়ে আসা জিনিসের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ তা এতটাই বেশি হয়ে যায় যে, পরে তা সাজিয়ে নিজস্ব একটি সংগ্রহশালায় তৈরি করে ফেলেন বিমলবাবু ৷ একে একে সংগ্রহশালায় জমেছে সাত সমুদ্রের জল ৷ রয়েছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সামগ্রী ৷ তবে, জনসাধারণের জন্য খোলেননি এই সংগ্রহশালা ৷ প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ান বিমলবাবু ৷
বিমল সাহার সংগ্রহশালায় রাখা বিভিন্ন দেশের হরলিক্সের বোতল 1953 সালে নেভিতে যোগ দেন বিমলবাবু ৷ কাজের সূত্রে ঘুরতে শুরু করেন দেশে বিদেশে ৷ নীল আর্মস্ট্রং যখন প্রথম চাঁদে পা রাখেন তখন বিমলবাবু জার্মানিতে ৷ সব জায়গার সংবাদপত্রেই প্রকাশ হয়েছিল সেই ছবি ৷ সেসময় জার্মানির এক পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি সযত্নে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছেন নিজের সংগ্রহশালায় ৷ জার্মানিতে একসময় কেরোসিনের ওভেনে রান্না হত, সেই ওভেনও রয়েছে তাঁর সংগ্রহশালায় ৷ দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট, জার্মানির বিখ্যাত রঙিন ছাতাও তিনি বাড়ি নিয়ে এসেছেন ৷ 1976 সালে এই ছাতা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছিলেন ৷
আর কী কী রয়েছে তাঁর সংগ্রহশালায় ? তাঁর সংগ্রহশালায় রয়েছে, সোনি কম্পানির রেডিও, জার্মানির চশমা, বিভিন্ন দেশের হরলিক্সের বোতল, নিভিয়া কম্পানির প্রসাধনী, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিখ্যাত লেখা ৷ তাঁর কর্মজীবন যেহেতু জলপথে ৷ তাই সাত সমুদ্রের জলও বোতলে করে বাড়ি নিয়ে এসেছেন তিনি ৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দেখা করার ছবিও ফ্রেমবন্দী করে রাখা তাঁর সংগ্রহশালায় ৷
বিভিন্ন সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের জল 84 বছর বয়সি বিমলবাবুকে এই সংগ্রহশালা গড়তে সাহায্য করেছেন তাঁর ছেলে-মেয়েরা ৷ তাঁর মৃত্যুর পরও এভাবেই থাকুক সংগ্রহশালাটি ৷ এটাই ইচ্ছে ৷ বিমলবাবু বলেন, "কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশ বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত ৷ তাই যেখানে যা পছন্দ হত, তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছিলাম ৷ জানতাম না একদিন নিজের সংগ্রহশালা বানিয়ে ফেলব ৷ আমার বাড়িতে যাঁরা আসেন, তাঁরা এই সংগ্রহশালার জিনিস দেখে খুশি হন ৷ এটাই আমার কাছে প্রাপ্য ৷ তবে, আমি সরকারের বা অন্য কারও হাতে এই সংগ্রহশালা তুলে দিতে চাই না ৷ আমি চাই, আমার মৃত্যুর পর ছেলে-মেয়েরাই এটা দেখাশোনা করুক ৷"
জার্মানির ছাতা থেকে সাত সমুদ্রের জল, সবই রয়েছে নিজস্ব সংগ্রহশালায়