পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

হেমতাবাদে শিশুদের জন্য শিক্ষাশিবির, শিকেয় করোনাবিধি

করোনা আবহে শিশুদের জন্য শিক্ষাশিবির ৷ উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের ঠাকুরবাড়ি এলাকায় শিক্ষাশিবির ৷ সৌজন্যে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির হেমতাবাদ শাখা ৷ বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে শিকেয় উঠল করোনাবিধি ৷

education camp for children in Hemtabad in Covid situation
হেমতাবাদে শিশুদের জন্য শিক্ষাশিবির, শিকেয় করোনাবিধি

By

Published : Jun 29, 2021, 3:52 PM IST

রায়গঞ্জ, 29 জুন : করোনা আবহে বন্ধ স্কুল ৷ শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ পেলেও গ্রাম-গঞ্জের হতদরিদ্র শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত ৷ আর সেই কারণেই এইসব দুঃস্থ শিশুদের জন্য চালু হল শিক্ষাশিবির ৷ সৌজন্যে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ শাখা ৷ তবে যে পরিবেশে বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে, তা স্বাস্থ্যকর নয় মোটেই ৷ শারীরিক দূরত্ব মানারও কোনও বালাই নেই ৷ এমনকী, যাঁরা পড়াচ্ছেন, সেই মাস্টারমশাইদের মুখেও মাস্ক রয়েছে নাম কা ওয়াস্তে ৷ প্রশ্ন উঠছে, এতে হিতে বিপরীত হবে না তো ? পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছাড়াই শিক্ষাশিবির চালু করে শিশুদের বিপদে ফেলা হচ্ছে না তো ?

হেমতাবাদের ঠাকুরবাড়ি এলাকায় একটি চালাঘরেই চলছে পঠনপাঠন ৷ প্রাথমিকভাবে পড়ুয়া সংখ্যা 20 ৷ মঙ্গলবার একেবারে অনাড়ম্বরভাবেই একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিবিরের উদ্বোধন করা হয় ৷ উপস্থিত ছিলেন নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির হেমতাবাদ শাখার সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডল, সংগঠনের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু রায়চৌধুরী-সহ অন্যরা ৷ বাচ্চাদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়াতে নতুন বই, খাতা, পেন, পেনসিলের পাশাপাশি দেওয়া হয় চকোলেটও ৷ তাতে খুশি খুদেরাও ৷

শিবিরের উদ্বোধন

আরও পড়ুন :শিশুদের টিকা এলেই খোলা যাবে স্কুল, আশাবাদী এইমস প্রধান

উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, গ্রামের গরিব মানুষের পক্ষে বাচ্চার জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় ৷ সেই সাধ্য বা সামর্থ বাবা-মায়েদের নেই ৷ স্কুলগুলিতেও পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে ৷ অথচ করোনা আবহে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়নি ৷ গত প্রায় দেড় বছর ধরে কার্যত ঘরে বসেই মাইনে পাচ্ছেন তাঁরা ৷ অথচ পড়ুয়াদের তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না ৷ উপরন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ার অভ্যেসটাই চলে যাচ্ছে অনেকের ৷

একই সুর শোনা গিয়েছে অভিভাবকদের গলাতেও ৷ তাঁদের সাফ কথা, কম্পিটার, ল্য়াপটপ তো দূরের কথা, তাঁদের কাছে স্মার্ট ফোনও নেই ৷ তাই ছেলেমেয়েদের অনলাইন ক্লাস করানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ এই পরিস্থিতিতে মাস্টারমশাইরা যদি শিবির করে বাচ্চাদের পড়ান, তাও বিনে পয়সায়, তবে তো ভালোই হয় ৷ এদিকে, এতদিন ঘরবন্দি থাকার পর স্কুলের ইউনিফর্ম পরে, বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে পড়তে বসার সুযোগ পেয়ে খুশি খুদেরাও ৷

সব মিলিয়ে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উদ্যোগ যে সাধু, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, করোনার ছোঁয়াচ বাঁচানোর কী ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা ? যে একচিলতে টিনের ঘরে বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে, তার দালানে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই বসছে শিশুরা ৷ তাদের কারও মুখে রয়েছে কাপড়ের সাধারণ মাস্ক, যা ভাইরাস প্রতিরোধী নয় মোটেও ৷ কারও আবার সেটুকুও নেই ৷ এমনকী, মাস্টারমশাইরাও অনেকে স্রেফ কাপড়ের ঢিলে-ঢালা মাস্কে মুখ ঢেকেই এতগুলো বাচ্চার কাছে চলে আসছেন ৷ নেই হ্য়ান্ড স্য়ানিটাইজ়ার বা থার্মাল গানে শরীরের উত্তাপ পরীক্ষার ব্যবস্থাও ৷

আরও পড়ুন :ভার্চুয়াল মিটেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাত্রদের

বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, করোনা থেকে বাঁচার সবথেকে বড় উপায় হল স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যবিধির পালন ৷ হেমতাবাদের শিক্ষাশিবিরে কিন্তু তেমনটা দেখা গেল না ৷ উপরন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শিশুদের বিপদ বেড়েছে ৷ সেখানে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে এমন শিক্ষাশিবির কতটা যুক্তিযুক্ত ?

ABOUT THE AUTHOR

...view details