বালুরঘাট, 13 জুলাই:তিনি দলের সেনাপতি ৷ ভোটের আগের দিন থেকে গণনা পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন ৷ কিন্তু জেলাবাসীর মনে দাগ কাটতে পারেনি তাঁর দল ৷ উত্তরবঙ্গের মতো এখানেও পঞ্চায়েতে ধরাশায়ী বিজেপি ৷ যদিও 2018 তুলনায় এবার তাঁদের আসন সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
আর ন’মাস পর অনুষ্ঠিত হবে দিল্লির মসনদ দখলের লড়াই ৷ এ রাজ্য থেকে যত বেশি সম্ভব দলীয় প্রতিনিধি দিল্লিতে পাঠানোর দায়িত্ব কার্যত সুকান্ত মজুমদারের কাঁধেই ৷ তাই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির কাছে ছিল অ্যাসিড টেস্টের সমান ৷ সেই পরীক্ষায় নিজের গড়ে যাতে পদ্মের ঝান্ডা ওড়ে, তার জন্য প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলেন তিনি ৷ ভোটের আগে থেকে নিজের জেলায় সংগঠন বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন ৷ কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হল না ৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনাজপুর জেলা পরিষদের 18টি আসনের মধ্যে তৃণমূল প্রতিটি আসনেই জয় পেয়েছিল ৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হল না ৷ এবার জেলা পরিষদের আসন 18 থেকে বেড়ে 21টি হয়েছে ৷ প্রতিটিতেই জিতেছে ঘাসফুল ৷
এবার এলাকা পুনর্বিন্যাসের পর এই জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের এক হাজার 308টি আসন হয়েছে ৷ এর মধ্যে 868টি আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। 333টি আসন পেয়েছে বিজেপি ৷ 42টি আসনে সিপিএম, 23টিতে আরএসপি, 12টিতে কংগ্রেস এবং অন্যান্যদের দখলে গিয়েছে 23টি আসন ৷ পঞ্চায়েত সমিতির 189টি আসনের মধ্যে 164টি তৃণমূলের দখলে গিয়েছে ৷ 24টি আসনে বিজেপি এবং একটি আসনে সিপিএম জয়লাভ করেছে ।
পঞ্চায়েত সমিতির 189টি আসনের মধ্যে তৃণমূল 140টি আসনে জয়লাভ করেছিল গতবার। বিজেপি পেয়েছিল 38টি আসন ৷ সিপিএম ও অন্যান্যরা একটি করে আসন পেয়েছিল ৷ সেবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় 64টি গ্রাম পঞ্চায়েতের 975টি আসনের মধ্যে 943টি আসনে ভোট হয়েছিল। এর মধ্যে তৃণমূল 586টি আসনে জয়লাভ করে। বিজেপি পেয়েছিল 230টি আসন। সিপিআইএম 47টি আসনে জিতেছিল ৷ কংগ্রেস জয় পেয়েছিল 11টি আসনে ৷ বাম শরিক সিপিআইও সেবার একটি আসন পেয়েছিল ৷ অন্যান্যরা জিতেছিল 25টি আসনে ৷
এমনটা হওয়ার কারণ কী? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনীতিতে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার ৷ বিপ্লব-মৃণালের সাপে নেউলে সম্পর্ক নিয়ে চর্চা হয় দলের অন্দরেই ৷ ভোটের আগে মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র এবং দলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকারের অনুগামীরা প্রকাশ্যেই একে অন্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ৷ এমনকী দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে ৷ জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাসকের অন্দরমহলের এই কোন্দলের সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি ৷ সুকান্ত আগে নিজের গড় রক্ষা করার বদলে তৃণমূলের জমি দখলের চেষ্টা করেছিলেন ৷ সেটা যে আসলে ব্যুমেরাং হয়েছিল, তা বোঝা গিয়েছিল যখন তাঁর নিজের দত্তক নেওয়া গ্রামেই তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ অশোক লাহিড়িও ৷
আরও পড়ুন:হিংসা রুখতে কড়া নবান্ন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা থেকে চাওয়া হল রিপোর্ট
দলের রাজ্য সভাপতির নিজের গড়ে দলের এমন ফলের কারণ কী, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপির অন্দরে ৷ কীভাবে নিজের গড় সামলে তৃণমূলের ঘরে হামলা চালাবেন লোকসভা ভোটে, তার কৌশলও নিশ্চয়ই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন সুকান্ত মজুমদাররা ৷ তিনি অবশ্যই জানেন, লোকসভা ভোট তাঁর কাছে কার্যত মরণ-বাঁচন লড়াই ৷ সেই লড়াইয়ে হেরে গেলে তাঁকে কিন্তু আবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে হতে পারে ৷