বিনা ওষুধে দিন কাটছে আশ্রয়হারা অসুস্থ মহিলার দত্তপুকুর, 31 অগস্ট: পুলিশের বারণ রয়েছে ৷ তাই অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির ভিতর থেকে ওষুধ আনতে পারছেন না । একপ্রকার বিনা ওষুধেই দিন কাটাতে হচ্ছে পরের বাড়িতে । বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এক চিলতে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে এমনই দুর্বিসহ যন্ত্রণার কথা তুলে ধরলেন বছর পয়তাল্লিশের শাকিলা বিবি । মহিলার আক্ষেপ,"বিপদের সময়ে পুলিশ প্রশাসন কোথায় পাশে এসে দাঁড়াবে। তা না উল্টে পুলিশই পরামর্শ দিচ্ছে, বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিতে । আমরা গরিব । কোথায় পাব এত টাকা ৷ আবারও একই ওষুধ দ্বিতীয়বার কেনার সামর্থ্য নেই আমাদের ।" শুধু ওষুধপত্র নয়, পুলিশের নিষেধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ভিতর থেকে চাল-ডালও আনতে পারছেন না মহিলা । ফলে মহা ফ্যাসাদে পড়েছেন তিনি ।
দত্তপুকুরের ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোচপোল গ্রামে বাড়ি শাকিলার । বিস্ফোরণস্থলের পাশেই লাগোয়া বাড়িটি তাঁর । বাড়ি বলতে এডবেস্টার ও ইটের গাঁথনি দেওয়া এক চিলতে একটি ঘর । তাতেই তিনজনের সংসার । স্বামী রহিম আলি দিনমজুর । ছেলে মিজানুর সামান্য কাজ করেন । কোনও রকমে সংসার চলে । তার ওপর নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা ওই পরিবারের গৃহকর্তী শাকিলার শরীরে বেঁধেছে নানা রোগ ।
থাইরয়েড, ইউরিক অ্যাসিড থেকে শুরু করে কোলেস্টেরল । কী নেই তাঁর ! এমনকী উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগেও ভুগছেন ওই মহিলা । ফলে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় শাকিলাকে । কখনও ওষুধ জোটে । আবার কখনও পয়সার অভাবে সেটুকুও জোটে না । তারই মধ্যে গত চারদিন ধরে ওষুধ পড়েনি ওই মহিলার শরীরে । কারণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভিতর ঢুকতে বারণ রয়েছে পুলিশের । ফলে ওষুধ শরীরে না পড়ায় শাকিলার অসুস্থতাও বেড়েছে ।
আরও পড়ুন:15 দিন আগেই হয় গৃহপ্রবেশ, শখের বাড়ি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত
জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে ঘরের ভিতরে সবজি কাটছিলেন ওই মহিলা । বাড়িতে সেসময় একাই ছিলেন তিনি । রান্নার তোড়জোড় সবে শুরু করেছেন এমন সময় বিকট শব্দ ! তীব্র বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড সবকিছু । চারদিকে আর্তনাদ, হাহাকার । অনেকের মতো তিনিও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন । কোনও রকমে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করতে পারলেও ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পায়নি তাঁর টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িটি ।
বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে । ফলে, সবকিছু হারিয়ে কার্যত এখন হাপিত্যেস করে বেড়াচ্ছেন ওই মহিলা ও তাঁর পরিবারের লোকজন । এদিকে, তদন্তের স্বার্থে বিস্ফোরণস্থল ও তার আশপাশে পুলিশ ঘিরে দেওয়ায় এখন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেন না অসুস্থ মহিলা । পাশেরই একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে শাকিলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের । এই পরিস্থিতিতে না পারছেন ঘর থেকে ওষুধ আনতে । আর না পারছেন চাল, ডাল কিংবা অন্য কিছু আনতে । ফলে, চারদিন ধরে বিনা ওষুধেই দিন কাটছে মহিলার । এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন শাকিলা বিবি ।
আরও পড়ুন:মাটি ব্যবসা থেকে প্রোমোটিং-বাজির কারবার! দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে কিংপিন আব্দুল মোহিত ?
অন্যদিকে, ঘটনার চারদিন পর বিস্ফোরণকাণ্ডে পুলিশের সাফল্য বলতে একজনকে গ্রেফতার এবং অভিযান চালিয়ে 70 টনের মতো বাজি ও বারুদ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ । এফআইআরে নাম চারজনের মধ্যে কেরামত আলি, তাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম ও সামসুল আলির মৃত্যু হয়েছে বিস্ফোরণে । একমাত্র অভিযুক্ত রমজান আলি ওরফে কালোর খোঁজ চলছে । তবে বিস্ফোরণ কাণ্ডের কিংপিন আব্দুল মোহিত কিংবা তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত আজিবর রহমান । কারোরই সন্ধান মেলেনি এখনও । ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন দু'জনে । চারদিন পরও তেমন কোনও সাফল্য না আসায় পুলিশ ভূমিকা নিয়ে যথারীতি প্রশ্ন উঠেছে । যেমনটা উঠেছিল বিস্ফোরণের আগেও ।