বারাসত , 12 জুন : পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে উত্তর 24 পরগনায় BJP-র দখলে থাকা সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করার হুঁশিয়ারি দিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । গতকাল বিকেলে বারাসতে জেলা পরিষদের তিতুমির ভবনে সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের BJP-র দুই মহিলা সদস্যা যোগ দেন তৃণমূলে । এছাড়া স্বরূপনগরের বাংলানি পঞ্চায়েতের আরও তিনজন BJP সদস্য যোগ দেন শাসকদলে । এরপরই আত্মবিশ্বাসী জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন , "আগামীদিনে এই জেলায় BJP-র কী অবস্থা হয় দেখুন ! আমরা ধাপে ধাপে পঞ্চায়েত দখল করার কাজ শুরু করেছি । আগামী ছয় মাসের মধ্যে BJP-র দখলে থাকা সমস্ত পঞ্চায়েতে ধস নামাব আমরা । এটা আমি আপনাদের নির্দ্বিধায় জানাচ্ছি। "
BJP-কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন ," BJP যে 11 জন প্লেয়ারকে নিয়ে খেলতে নেমেছে , তাঁদের থেকে আমাদের প্লেয়ার অনেক বেশি শক্তিশালী । ওঁরা তার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারবে না ।"
6 মাসের মধ্যে সমস্ত পঞ্চায়েত দখল করব : জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক - বারাসত সিন্দ্রানি পঞ্চায়েত
পঞ্চায়েত ভোটে 15 টি আসন পেয়ে বাগদার সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল BJP । সেখানে তৃণমূলের আসন ছিল 11 টি । দু'দিন ধরে ওই পঞ্চায়েতের তিনজন BJP সদস্য তৃণমূলে যোগ দেয় । ফলে সংখ্যা গরিষ্ঠতার হিসেবে ওই পঞ্চায়েতের দখল নেওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে সব পঞ্চায়েত দখল করার হুঁশিয়ারি দেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ।
![6 মাসের মধ্যে সমস্ত পঞ্চায়েত দখল করব : জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক Jyotipriya Malick](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/768-512-7580643-1108-7580643-1591933384729.jpg)
আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ইতিমধ্যে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে । কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি ঘেরাও , আবার কোথাও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে স্থানীয় BDO অফিসে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা । এই নিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ,"ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হবে । পদ্ধতি মেনে আবেদন না করলে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাঁদেরই অসুবিধে হবে ।" উদাহরণস্বরূপ তিনি তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ার প্রসঙ্গ টেনে আনেন । বলেন ," ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্রে ছবি-সহ ক্ষতিপূরণের ধরন দিয়ে নাম, ঠিকানা লিখে পূরণ করতে হবে । সমস্ত কিছু ঠিকঠাক থাকলেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া যাবে ।" ইতিমধ্যে পদ্ধতি মেনে অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ।
কোরোনা ও আমফান নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন ,"মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কোরোনা ও আমফান পরবর্তী ক্ষতির মোকাবিলা দ্রুততার সঙ্গে করেছেন , তার প্রশংসা সকলেই করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন । দলগতভাবে আমরাও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়েছি প্রশাসনের হাতে । যাতে ত্রাণ নিয়ে দলবাজি না হয় । "
এদিকে, রাজনৈতিক হিংসার দু'বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও আমডাঙায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করা সম্ভব হয়নি । যার ফলে পরিষেবা কার্যত থমকে রয়েছে সেখানে । এনিয়ে CPI(M)-এর উপর দোষ চাপিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । তিনি বলেন, "CPI(M)-এর করা মামলার জেরেই আমডাঙায় পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না । যেহেতু এনিয়ে আদালতে মামলা চলছে, সেইজন্য বিচারাধীন কোনও বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয় । আদালত আদেশ দিলেই পঞ্চায়েত গঠনের জটিলতা কেটে যাবে ।"
অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হুঁশিয়ারির পালটা জবাব দিয়েছে গেরুয়া শিবির । তাঁকে কটাক্ষ করে BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন ,"প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখল করা খুব সহজ । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের গণতন্ত্রে বিশ্বাস নেই । সেটা আমরা পঞ্চায়েত ভোটের সময়ই দেখেছি । কীভাবে হিংসার আশ্রয় নিয়ে রাজ্যে একের পর এক পঞ্চায়েত দখল করেছে শাসকদল । গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হলে ওঁদের কোনও পঞ্চায়েতই থাকবে না এই জেলায় । সেটা বুঝতে পেরেই ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এখন থেকে পঞ্চায়েত দখলের ছক কষছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো নেতারা । মানুষ এঁদের সঠিক সময়ে উপযুক্ত জবাব দেবে । "
প্রসঙ্গত ,পঞ্চায়েত ভোটে 15 টি আসন পেয়ে বাগদার সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল BJP । সেখানে তৃণমূলের আসন ছিল 11 টি । দিন কয়েক আগে BJP ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন ওই পঞ্চায়েতের এক সদস্য । ফলে তৃণমূলের আসন বেড়ে দাঁড়ায় 12-তে । গতকাল BJP-র আরও দুই সদস্যা তৃণমূলে নাম লেখানোয় সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় 14-তে । সেখানে BJP-র আসন কমে দাঁড়ায় 12-তে । স্বভাবতই , সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয় গেরুয়া শিবিরের ।