পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Duttapukur Blast: হাথরস থেকে দত্তপুকুর ! কেরামত আলির বাজি তৈরিতে যোগী-রাজ্যের বড় যোগ - Duttapukur Explosion Keramat Ali News

দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় মিলল উত্তরপ্রদেশের যোগ ৷ এমনটাই জানা গিয়েছে ৷ সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে কুরিয়ারে বেপরোয়া বাজি তৈরির রাসায়নিক আসত দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে ৷

ETV Bharat
দত্তপুকুর বেআইনি বাজি কারখানা বিস্ফোরণে উত্তরপ্রদেশ যোগ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 1, 2023, 12:00 PM IST

দত্তপুকুর, 1 সেপ্টম্বর: বেআইনি বাজি কারখানা বিস্ফোরণ কাণ্ডে মিলল যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বিশেষ যোগ ! উঠে এল হাথরসের নাম ৷ চাঞ্চল‍্যকরভাবে জানা গিয়েছে, সেখান থেকে দত্তপুকুরে আসত বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক ৷ এর আগে দত্তপুকুরের বেআইনি বাজি কারখানা বিস্ফোরণে মুর্শিদাবাদের যোগ মিলেছিল ৷ এবার মিলল যোগী রাজ‍্যের নাম !

তবে এ নিয়ে বারাসত পুলিশ জেলার এসপি ভাস্কর মুখোপ‍্যাধায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ৷ বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি ৷ তবে দত্তপুকুর থানার নতুন আইসি সুজিত কুমার পাতি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "আপনার কাছ থেকে বিষয়টি প্রথম শুনলাম ৷ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে ৷"

উত্তরপ্রদেশের হাথরস থেকে আসা রাসায়নিক পদার্থের কুরিয়ারের ভাউচার

সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে কুরিয়ারে রাসায়নিক পদার্থ আসত দত্তপুকুরে ৷ একাধিক হাত বদল হয়ে সেই রাসায়নিক পৌঁছে যেত কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের অখ‍্যাত দত্তপুকুরের এই মোচপোল গ্রামে ৷ অর্থাৎ দিনের পর দিন এভাবেই মোচপোল গ্রামের বিভিন্ন গোডাউনে রাসায়নিক মজুত করা হত ৷ আর এর রাসায়নিক আমদানি এবং মজুতের নেপথ্যে রয়েছেন বিস্ফোরণে নিহত কেরামত আলি ৷

কেরামত আলি এবং হাথরস থেকে আসা কুরিয়ার: তিনিই যোগী রাজ‍্য থেকে রাসায়নিক আনার বরাত দিতেন ৷ তবে, এক্ষেত্রে লেনদেন সরাসরি নগদ টাকায় হত না বলেই খবর ৷ ঝুটঝামেলা এড়াতে কারবারিরা বেছে নিতেন অনলাইন মাধ্যম ৷ কখনও কখনও চেকেও লেনদেন হত বলে সূত্রের খবর ৷

আরও খবর: মোচপোল যেন জতুগৃহ! কেরামতের আরও একটি রাসায়নিক ভর্তি গুদামের হদিশ মিলল

আরও খবর, এই রাসায়নিক অথবা বারুদ সরবরাহের মূলে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশেরই দুই কিংপিন ! একজন ভাস্কর পণ্ডিত ৷ অন‍্যজন নীরজ শর্মা ৷ নীরজ, ভাস্করের ব‍্যবসায়িক অংশীদার ৷ তাই এই দু'টি নাম নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে মোচপোল গ্রামের আনাচে-কানাচে ৷ গ্রামবাসীদের অনেকে বলছেন, "বিস্ফোরণে নিহত কেরামত আলি, জিরাত শেখরা কেবল বোরে মাত্র ! আসল খিলাড়ি এরাই । মোচপোল গ্রামে বাজি-বারুদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যোগী রাজ‍্যের এই দুই কারবারি ৷ সেখানে বসেই যাবতীয় কাজকর্ম কন্ট্রোল করছেন তাঁরা ৷" তবে এনিয়ে চর্চা হলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চায়নি ৷

এদিকে, ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির হাতে এসেছে কুরিয়ার সংস্থার একটি ভাউচার ৷ তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, হাথরসের একটি ঠিকানা থেকে রাজ্যের ডানকুনিতে আরেকটি কুরিয়ার সংস্থার অফিসে রাসায়নিক পাঠানো হয়েছে ৷ সেখান থেকে হাত বদল হয়ে রাসায়নিক সরাসরি আসত মোচপোল গ্রামে ৷

কী ধরনের রাসায়নিক পাঠানো হচ্ছে, কার নামে আসছে, পরিমাণ, মোট মূল্য ৷ সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লেখা থাকত ভাউচারে ৷ নজর এড়াতে জিএসটি বাবদ টাকাও দিতেন কারবারিরা ৷ সেই তথ্যও লেখা থাকত ভাউচারে ৷

আরও পড়ুন: মাটি ব‍্যবসা থেকে প্রোমোটিং-বাজির কারবার! দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে কিংপিন আব্দুল মোহিত ?

সূত্রের খবর, হুগলির ডানকুনির কুরিয়ার সংস্থাতে রাসায়নিকের পৌঁছনোর পর তা সংগ্রহ করতেন কেরামতের লোকজন ৷ এরপর তা গাড়িতে নিয়ে আসা হত মোচপোল গ্রামে, কেরামত আলির ডেরায় ৷ সপ্তাহে প্রায় 500 কেজি রাসায়নিক সরবরাহ করা হত উত্তরপ্রদেশের হাথরস থেকে ৷ অর্থাৎ টাকার পরিমাণ 6 লক্ষ ৷

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের কারবারিদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ কেরামত আলি, জিরাত শেখ-দের ? সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মোচপোল, বেরুনান পুকুরিয়ার মতো এলাকায় আগে বারুদ, রাসায়নিক সরবরাহের বড় একটা অংশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরবরাহ করতেন ভাস্কর পণ্ডিত এবং তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার নীরজ শর্মা ৷ পরে ব‍্যবসায়িক সূত্রে কেরামত আলি ও জিরাত শেখের সঙ্গে পরিচয় হয় দু'জনের ৷

কেরামত ও জিরাত, দু'জনেই একসময় আলাদা আলাদাভাবে বারুদ এবং রাসায়নিক কিনতেন উত্তরপ্রদেশের ভাস্কর-নীরজের কাছ থেকে ৷ পরে, দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে কেরামতই প্রথমে বোমা-বারুদ কিনতে শুরু করেন ৷ পরে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে দু'জনে মিলে মোচপোল, বেরুনান পুকুরিয়া ও কাঠুরিয়ার মতো গ্রামে নিজেদের কারবারের পরিধি বাড়াতে থাকেন ৷

এই বেরুনান পুকুরিয়াতেই বাজি ব‍্যবসার হাতেখড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল চক্রী নিহত কেরামত আলির ৷ তখন তিনি ফুলঝুরি বাজির ব‍্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ এরপর আলু বাজির কারবারের সঙ্গে যুক্ত হন ৷ সেখানেই পরে আলু বাজির কারখানা তৈরি করেন কেরামত ৷

বছর চারেক আগে বিস্ফোরণে কেরামত আলিরই পরিবারের দু'জনের মৃত্যু হলে প্রশাসনের তরফে‌ বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ 2021 সালের পর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেতেই ফের স্বমহিমায় ফিরে আসেন কেরামত আলি ৷

আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে এগিয়ে বাংলা, দত্তপুকুর কাণ্ডের পর মন্তব্য এনএসজি-র প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর

তবে এবার বেরুনান পুকুরিয়ার বদলে তিনি এই কারবারের প্রসার ঘটাতে বেছে নেন মোচপোল গ্রামের পশ্চিম পাড়া ৷ সেখানেই বছর দেড়েক আগে সামসুল আলির বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হয় বাজির কর্মযজ্ঞ ! কারবারের পরিধি এবং ব‍্যাপকতা বাড়ায় আশপাশের গোডাউনও ভাড়া নিতে শুরু করেন তিনি ৷ এমনকী মুর্শিদাবাদ থেকে শ্রমিকও নিয়ে আসা হয় কেরামতের বাজি সাম্রাজ্যে ৷ বিস্ফোরণ কাণ্ডে যে 9 জনের মৃত্যু হয়েছে, ‍তাঁদের মধ্যে পাঁচজন-ই মুর্শিদাবাদের ৷ বিস্ফোরণের ঘটনায় মুর্শিদাবাদ যোগ স্পষ্ট !এবার রইল উত্তরপ্রদেশ যোগ!

ABOUT THE AUTHOR

...view details