গাইঘাটা, 12 মে: দুর্নীতিতে দায়ে তৃণমূলের একাধিক নেতা জেলবন্দি, প্রায় নিত্যদিনই নতুন করে নাম জরাচ্ছে নেতাদের । তৃণমূল মানেই দুর্নীতি, তৃণমূলের সবাই চোর ! বিরোধীদের মিটিং মিছিলে এমন শ্লোগান আকচার শোনা যায় । তবে এখন শাসকদলে এমন লোকও আছে যাদের গায়ে দুর্নীতির কালির রেশমাত্র লাগেনি । এই যেমন উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটার চন্ডিগড় স্থানীয় পাড়ার রঞ্জন হাজরা । তিনবারের পঞ্চায়েত সদস্য । 63 বছর বয়সে ইঞ্জিন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি । দুর্নীতি তাঁকে ছুঁতে পারেনি, বলছেন এলাকার সাধারণ মানুষ । তাঁর প্রশংসা করছেন বিরোধীরাও ।
রঞ্জনবাবু যৌবনে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন । 1998 সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল দল গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে শ্রদ্ধা ভালোবাসা থেকে তৃণমূল করতে শুরু করেন রঞ্জন । বাম আমলে বুথ স্তরে কাজ করেছেন । জলেশ্বর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের 21 নম্বর বুথের মেম্বারও ছিলেন । সয়েছেন অনেক চোখ রাঙানি । তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ওই পঞ্চায়েতের 21 নম্বর বুথের আরও দু'বারের মেম্বার তিনি । জনপ্রতিনিধি হয়ে কোনও পরিবর্তন হয়নি তাঁর জীবনের । প্রথমদিকে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন রঞ্জন বাবু, বর্তমানে তিনি ভ্যান ছেড়ে ইঞ্জিন ভ্যান চালান ৷
প্রতিদিন সকালে গাইঘাটা বাজারের একটি রেশন দোকানে ইঞ্জিন ভ্যানে করে রেশন সামগ্রী টানার কাজ করেন । বস্তার পর বস্তা মাথায় করে রেশন সামগ্রী নিজেই ভ্যানে লোড করেন এবং ভ্যান থেকে নামান । সেখান থেকে বাড়ি গিয়ে নিজের মাঠের জমিতে চাষাবাদ করেন । এভাবেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন । রঞ্জনবাবুর তিন ছেলে । তাদের জন্যও কারও কাছে চাকরি বা কাজের জন্য সহযোগিতা চাননি ।
বড় ছেলেকে বাড়িতে একটি সারের দোকান করে দিয়েছেন । মেজো ছেলে মাঠে চাষবাসের কাজ করেন এবং ছোট ছেলে বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করেন । রঞ্জনবাবু বলেন, "ভ্যান চালিয়ে মাসের গড়ে 10 থেকে 12 হাজার টাকা আয় হয় । আর তাতেই চলে যায় ।" তিনি মনে করেন, "কষ্ট করে আয় করা টাকায় নিজের জন্য কিছু করা ভালো । কারও কাছ থেকে দু-টাকা খেলে তাতে মান-সম্মান যাবে এবং পরবর্তীতে কথা শুনতে হবে ।" তবে তাঁর আক্ষেপ, "দল পুরনো কর্মীদের সেইভাবে সম্মান দেয় না, তিনিও সম্মান পান না । দলের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের জন্য মানুষের মধ্যে মাথা নত করতে হয় তাঁর ।"