বারাসত, 12 নভেম্বর: আইন না-মেনে পুকুরের একাংশ ভরাট (Illegal Construction) করে সরকারি প্রকল্পে কংক্রিটের বসতবাড়ি বানাচ্ছেন খোদ তৃণমূল নেতা ! তাও আবার সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না-করেই । সেই খবর সম্প্রতি তুলে ধরেছিল ইটিভি ভারত । খবরের জেরে শেষমেশ নড়েচড়ে বসল পুলিশ প্রশাসন ।
সূত্রের খবর, বিষয়টি নজরে আসতেই পুলিশকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে । সেই মতো শনিবার স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে অর্থাৎ বারাসতের রামকৃষ্ণপুর এলাকায় গিয়ে সরজমিনে খতিয়ে দেখেন বিষয়টি । কথা বলের অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রদীপ পালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে । সেই সময় তিনি বাড়িতে না থাকলেও বারাসত থানায় তাঁকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে (TMC leader summoned to police station)। অবৈধ এই বাড়ি নির্মাণের তদন্ত পুলিশ শুরু করায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা ।
বারাসতের রামকৃষ্ণপুর এলাকাটি পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত । এখানেই 0.12 একর এলাকাজুড়ে রয়েছে একটি পুকুর । পুকুরের একধার ভরাট করে সেখানে সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পে কংক্রিটের বসতবাড়ি তৈরি করছেন ওয়ার্ডেরই তৃণমূল যুব সভাপতি প্রদীপ পাল । ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় এলাকায় । স্থানীয়রা সরব হন বিষয়টি নিয়ে ।
পুলিশকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে অভিযোগ, সবকিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ তখন নেননি স্থানীয় তৃণমূলের চিকিৎসক কাউন্সিলর সুমিত সাহা । উল্টে সেই সময় কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ ওই তৃণমূল নেতার পাশে দাঁড়ান তিনি । এরপরই সুবিচার চেয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন এলাকাবাসী । জেলাশাসক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলাশাসক(এলআরও), ব্লক ভূমি এবং ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় তারা । অভিযোগ দায়ের করা হয় স্থানীয় থানার পুলিশের কাছেও । সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন । ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
যদিও অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার পরিবারের দাবি, "স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুকুরের অংশের কিছু জমি কিনে সেখানেই তাঁরা কংক্রিটের বসতবাড়ি বানাচ্ছেন আইন মেনে । তার কাগজপত্রও রয়েছে তাঁদের কাছে । সেই কাগজপত্র নিয়েই দেখা করতে বলা হয়েছে থানায় গিয়ে ।" তৃণমূল নেতার পরিবারের দাবি মানতে চাননি এলাকার লোকজন ।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "পুকুরের মধ্যেই অবৈধভাবে এই নির্মাণ তৈরি হয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা, যে বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেটি আবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের । এখানেও দুর্নীতি থাকতে পারে বলে মনে করছি আমরা । কেননা কীভাবে ওই তৃণমূল নেতা এই প্রকল্পে বাড়ি পেলেন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে । তেমনই পৌরসভা এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে । অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে এটা অবশ্যই ভালো দিক । কিন্তু যতক্ষণ না পুলিশ প্রশাসন এই পুকুরকে পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে । প্রয়োজনে উচ্চ আদালত, এমনকী গ্রিন ট্রাইব্যুনালেও কড়া নাড়তে প্রস্তুত আমরা ।"
অবৈধ নির্মাণে তৃণমূল নেতাকে তলব থানায় একই সুর শোনা গিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসক সন্তোষ রায়ের গলাতেও । তাঁর কথায়, এটা কোনও পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা নয় । বারাসতের মতো জেলার প্রাচীন পৌরসভা এলাকাতেই এমন ঘটনা ঘটায় হতবাক আমরা । পুলিশ প্রশাসনের উচিত বিষয়টির তদন্ত করে দ্রুত তার সুরাহা করা ।"
আরও পড়ুন:পার্কিং ফি নেওয়ার অভিযোগ বারাসতের বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে, খতিয়ে দেখার আশ্বাস পৌরসভার
এদিকে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় চিকিৎসক কাউন্সিলর সুমিত সাহা বলেন, "যেহেতু অবৈধ নির্মাণ নিয়ে একটা অভিযোগ এসেছে সেহেতু নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমরা পুলিশ প্রশাসকে খতিয়ে দেখতে বলেছি । কেউ অন্যায় করলে তৃণমূল প্রশয় দেয় না । বরং তদন্ত করার ব্যবস্থা করে । এবার বাকি বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের হাতে ।"