আমডাঙা, 17 নভেম্বর: পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার মাস পাঁচেক আগেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডলকে। আর যিনি হুমকি দিয়েছিলেন, ঘটনাচক্রে অভিযুক্ত আবু তাহের আলিও শাসকদলের সঙ্গে জড়িত। সেই হুমকির পাঁচ মাসের মাথাতেই খুন হয়ে গেলেন আমডাঙার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল। রীতিমতো ভর সন্ধ্যায় জনবহুল এলাকায় বোমা মেরে তাঁকে খুন করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।স্বভাবতই তৃণমূল নেতা খুন-কাণ্ডের সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে হুমকি দেওয়া সেই তৃণমূল কর্মী আবু তাহের আলির (তোয়েব)-ও। নিহত রূপচাঁদ মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরাও মনে করছেন, পঞ্চায়েত প্রধান খুনের ঘটনার সঙ্গে আবু তাহেরের হাত রয়েছে। তিনিই এই খুনের মাস্টার মাইন্ড।
অন্যদিকে, নিহতের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ধৃত আনোয়ার হোসেনের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ অর্জুন সিং। নিহতের স্ত্রী সুরিফা বিবিকে পাশে নিয়ে তিনি এই বিষয়ে বলেন, "রূপচাঁদ আমার খুব প্রিয় ছিল। সপ্তাহে দু-একদিন রূপচাঁদ আমার সঙ্গে দেখা করত। দেখা না হলে ফোনে কথা হত। ওকে যে এভাবে খুন করা হবে তা কল্পনার বাইরে ছিল। কোনও দিনও ও (রূপচাঁদ) আমাকে হামলার আশঙ্কার কথা বলেনি। তোয়েব-সহ চারজনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যারা মেরেছে, আর যিনি খুন হয়েছেন, সবই আমাদের দলের লোক। দলের সমর্থক হলেও দলীয় নেতাকে খুন করার অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। এর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে হয় না। তবে যেই করুক সে প্রফেশনাল ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত। এটুকু বলতে পারি ৷"
প্রথমে তৃণমূল নেতাকে শাসানি। পরে পরিকল্পনা করে খুন। এই দুটি পরস্পর ঘটনার সঙ্গে কোথাও না কোথাও সংযোগ রয়েছে বলে অনুমান পুলিশেরও। কারণ, আমডাঙা খুন-কাণ্ডে নিহতের পরিবারের তরফে স্থানীয় থানায় যে চারজনের নামে এফআইআর করা হয়েছে তাতে নাম রয়েছে এই আবু তাহের আলি ওরফে তোয়েবের। বাকি তিনজনের মধ্যে তৃণমূল কর্মী আবু তাহেরের দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন এবং সাদ্দাম হোসেনের নাম রয়েছে এফআইআরে। ইতিমধ্যে আনোয়ার হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারলেও বাকিদের এখনও খোঁজ নেই। অর্থাৎ আমডাঙায় তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব জোরালো হচ্ছে। আর তা স্পষ্ট হয়েছে নিহতের বাবা মহম্মদ আলি মণ্ডলের কথাতেই।
আমডাঙার সোনাডাঙায় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "নিহত এবং অভিযুক্তরা সকলেই তৃণমূল পার্টির সঙ্গে জড়িত। রূপচাঁদ জমি কেনাবেচার কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তা নিয়ে তোয়েব আলির সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের আগে একবার গন্ডগোল বেঁধেছিল। গন্ডগোলের মূলে ছিল জমি সংক্রান্ত ভাগ বাটোয়ারা। সেই গন্ডগোলের মীমাংসা করতে দু'পক্ষকে ডাকা হয়েছিল তৃণমূল পার্টি অফিসে। আর তাতেই গোসা হয়ে ছেলে রূপচাঁদ মণ্ডলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তোয়েব আলি। তাই এই খুনের সঙ্গে তিনি ও তাঁর পরিবার যুক্ত। আমরা চাই খুনিদের সকলের শাস্তি হোক ৷" মহম্মদ আলি আরও বলেন, "হুমকি দেওয়ার পর থেকে আবু তাহের পরিকল্পনা করছিল ছেলেকে খুন করার। টার্গেট করেই ওকে খুন করা হয়েছে। খুনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল আগে থেকেই। সেই পরিকল্পনা মতোই ছেলেকে খুন করে নিজেদের কাজ হাসিল করেছে আততায়ীরা ৷"