আমডাঙা, 17 নভেম্বর: সম্প্রতি খুন হয়েছেন আমডাঙার তৃণমূল পঞ্চায়েতের প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল ৷ পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী হয়ে জিতে শাসকদলে ভিড়তেই দাপট বাড়তে শুরু করে রূপচাঁদের । তাঁর দাপট এতটাই ছিল যে একসময় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত । এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় এইসব তথ্য ! নিন্দুকেরা অনেকেই বলেন, এলাকায় তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যে দাঁত ফোটাতে পারছিলেন না দলেরই অপর গোষ্ঠীর লোকজন ।
একদিকে, এলাকায় রূপচাঁদের জনপ্রিয়তা । অন্যদিকে, দাপুটে এই তৃণমূল নেতার এলাকা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিনদিন বাড়ায় কার্যত কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন । ফলে, দলীয় নেতা রূপচাঁদ মণ্ডলের প্রভাব প্রতিপত্ত মন থেকে কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তৃণমূলেরই একটা বড় অংশ, সূত্র মারফৎ এমনই জানা গিয়েছে ৷
তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি দলেই ক্রমশ তাঁর শত্রু বাড়ছিল ? সেই কারণেই কি পথের কাঁটা সারাতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানকে একেবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ? নাকি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে এর পিছনে ? এই প্রশ্নের উত্তরই এখন খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে, তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডলের উত্থান এবং আধিপত্য রোমাঞ্চে ভরা !পাঁচ বছর আগেও আমডাঙার সোনাডাঙা-তে এক চিলতে বাড়িতে পরিবার নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাতেন তিনি । সংসারের হাল ধরতে একসময় জমি বেচাকেনার পেশা বেছে নেন। হাতে আসতে থাকে কাঁচা পয়সা । এরপর থেকেই রূপচাঁদের যশ, আধিপত্য বাড়তে শুরু করে এলাকায় । রাতারাতি পাকা বাড়িও বানিয়ে ফেলেন তিনি । তবে,শাসকদলে নাম লেখানোর আগে পর্যন্ত রূপচাঁদ সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না । এলাকার লোকজনের জোরাজুরিতে 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমডাঙার সোনাডাঙার 95 নম্বর বুথ থেকে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি । সেই ভোটে নির্দল প্রার্থী হয়ে জিতেও যান রূপচাঁদ । এর কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূলে ভিড়ে যায় তিনি ।
2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই বুথ থেকেই শাসকদলের প্রতীকে জিতে তিনি নির্বাচিত হন পঞ্চায়েত প্রধান পদে । তবে, সেই পঞ্চায়েত প্রধান পদ নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি । দলের হুইপ অমান্য করে ভোটাভুটি করিয়ে আমডাঙার পঞ্চায়েতের প্রধান পদে বসেন তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডল । তা নিয়ে তৃণমূল নেতার সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছিল আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমানকে ।
সূত্রের খবর, প্রথম দিকে তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডল বিধায়কের ঘনিষ্ঠ হলেও পরে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের কাছের লোক হয়ে ওঠেন । রূপচাঁদ যে তাঁর কতটা বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন তা শোনা গিয়েছে খোদ সাংসদের মুখেই । তাহলে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন হতে হল প্রভাবশালী এই তৃণমূল নেতাকে ? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই । এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের ।
এদিকে,পঞ্চায়েত প্রধান পদ হাতে আসতেই তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডলের দাপট এবং জমি-বাড়ি কারবারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও বাড়তে থাকে সমানতালে । হাতে আসতে থাকে কাঁচা টাকা। সেই টাকার একটা অংশ তিনি জনমানসের সেবায় নিয়োজিত করতেন বলেই সূত্রের খবর । ফলে এলাকার লোকজনের কাছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল ছিলেন ভগবানের মতো । বোমা মেরে সেই পঞ্চায়েত প্রধানকে খুনের জেরে এখন ক্ষোভে ফুসছেন এলাকার লোকজনই ।
দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি খুনিদের কড়া শাস্তির দাবিতেও সরব হয়েছেন তাঁরা । শুক্রবার বিকেলে নিহত তৃণমূল নেতার দেহ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর রেখে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা । এনিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় সোনাডাঙা এলাকায় ।পরে,পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া হয় । অন্যদিকে, আমডাঙা খুনকাণ্ডে ধৃত আনোয়ার হোসেনকে শুক্রবার দুপুরে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ।
আরও পড়ুন
- তৃণমূল প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল খুনে প্রবল হচ্ছে শাসকের গোষ্ঠী কোন্দল, ক্ষুব্ধ অর্জুনও
- পোস্তায় কার পার্কিং অবৈধ, জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ
- জয়নগরের পর আমডাঙা, ফের খুন শাসক নেতা! মুহুর্মুহু বোমাবাজিতে এলাকায় আতঙ্ক