দেগঙ্গা, 19 জুন:যত কাণ্ড দেগঙ্গার 41 নম্বর আসন ঘিরে। উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট এই আসনে এবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন শাসকদলেরই দুই প্রার্থী। একজন বারাসত 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী পূর্ত ও পরিবহন কর্মাধ্যক্ষ ইছা হক সর্দার। অন্যজন বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম। যাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সংঘাত একেবারে চরমে উঠেছে। ইতিমধ্যে ইছা হককে প্রার্থী চেয়ে তাঁর অনুগত 31 জন দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়াতে মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের জেলা পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ইছার অনুগামীরা। যা দেখে রাজ্যের শাসকদলের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা।
বারাসত 1 নম্বর ব্লকের কোটরা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি করছেন তৃণমূল নেতা ইছা হক সর্দার। এককালে কোটরা পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে দায়িত্বও সামলেছেন বরিষ্ঠ এই নেতা। পরবর্তীকালে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জিতে পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ হন তিনি। সূত্রের খবর, এই তৃণমূল নেতা বারাসাত সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাই, এবার পঞ্চায়েত সমিতির বদলে জেলাপরিষদের 41 নম্বর আসনে ইছা হককে টিকিট দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের।
আরও পড়ুন:পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের জয় হবে, 'পাবলিক পিস রুম'-এর সূচনায় বার্তা রাজ্যপালের
সেই মতো ছোট জাগুলিয়া বিডিও অফিসে এসে মনোনয়নও জমা দেন তিনি। কিন্তু, তারপরই ইছা হকের ঘনিষ্ঠরা জানতে পারেন ওই একই আসন থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম। যা শোনার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। ইছার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত রবিউলের মনোনয়ন দাখিলের পিছনে দলেরই কারও ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন ইছা হকের ঘনিষ্ঠরা। এই ঘটনায় ভোটের মুখে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে। একই আসনে দুই প্রার্থীর মনোনয়ন ঘিরে দলের সংঘাতও সপ্তমে উঠেছে। যা সামনে এসেছে ইতিমধ্যেই।
এদিকে, ইছা হকের প্রার্থীপদ টিকিয়ে রাখতে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে তাঁর অনুগামীরা। এই বিষয়ে কোটরা পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সংসদের প্রার্থী মহম্মদ ওহিদ মোল্লা বলেন, "দলের নির্দেশেই ইছা হক সর্দার জেলা পরিষদের ওই আসনে মনোনয়ন দাখিল করেন। কিন্তু এরপর যা হচ্ছে তা একেবারে অবাঞ্ছিত। ইছা হককে নিয়ে খেলছে দলের উচ্চ নেতৃত্ব। ওনাকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। আমরা চাই, উনি ওই আসন থেকেই ভোটে লড়াই করুক। যদি তা না-হয় তাহলে আমরা 31 জন প্রার্থী একসঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেব। ইছা হকের সঙ্গে অবিচার মানব না আমরা।"
আরও পড়ুন:একাধিক মনোনয়নে শাহাজাদাপুরে তৃণমূলের কাঁটা হবেন কি গোঁজ প্রার্থীরা
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও তৃণমূলের চিকিৎসক সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "রাজনৈতিক দাবি থাকতেই পারে। যারা রাজনীতি করে তাঁদের প্রত্যেকেরই আকাঙ্খা থাকে প্রার্থী হওয়ার। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় সকলকে। আশা করি, ইছা হক ও তাঁর হয়ে আসা লোকজন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। দল যাকে প্রার্থী করবে, তিনিই হবেন।"