পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

অনলাইন ক্লাসে পড়া বুঝতে অসুবিধা ? অর্থের সমস্যা ? শিক্ষকরা আছেন তো... - Teachers of a school in Belgharia help students

করোনা আবহে অনলাইনে পড়াশোনা হচ্ছে ৷ কিন্তু তাতেও সমস্যা ৷ অনেকের পড়া বুঝতে অসুবিধা ৷ রয়েছে আর্থিক সমস্যাও ৷ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই তাদের জন্য অভিনব উদ্যোগ নিলেন বেলঘরিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ নিজেদের পয়সায় ফান্ড তৈরি করে টাকা দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা-সামগ্রী (বই, খাতা, পেন-পেনসিল, রং) কিনে দেওয়া হচ্ছে ৷ খাবারও দেওয়া হচ্ছে ৷

শিক্ষার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিলেন অভিভাবকেরা
শিক্ষার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিলেন অভিভাবকেরা

By

Published : Jul 2, 2021, 7:25 PM IST

Updated : Jul 2, 2021, 7:37 PM IST

বেলঘরিয়া, 2 জুলাই : বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়া... পড়া না পাড়লে ক্লাসরুমের বাইরে নিল ডাউন হবি... এত কম নম্বর, কাল মা-বাবাকে নিয়ে আসবি... শব্দগুলো, কথাগুলো চেনা ৷ কিন্তু, সব যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে ৷ করোনা আবহে স্কুল বন্ধ ৷ সেই চেনা ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলিতে জমছে ধুলো ৷ ছাত্র-ছাত্রী নেই ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বকুনি নেই ৷ গার্জেন কল নেই ৷ করোনার জন্য তো এখন সবটাই অনলাইন ৷ আর অনলাইন অনেক কিছু নষ্ট করে দিয়েছে ৷ বহু ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি করেছে ৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের কেউ কেউ পড়াশোনাই ছেড়ে দিয়েছে ৷ দিনমজুরের কাজ করছে ৷ তাহলে সেই সব ছেলেময়েদের ভবিষ্যৎ? প্রশ্ন উঠলেই একটা উত্তরও যেন ভেসে আসছে...শিক্ষক আছেন তো...

একটা ছাত্রের জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা যে কতটা তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় ৷ তাদের বকুনি, স্কেল বা ডাস্টার ছুড়ে মারা,শাস্তি দেওয়া...সবটার মধ্যে কিন্তু ভাল চাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই ৷ পড়াশোনা না করলে, রেজাল্ট ভাল না হলে তাদেরও যে ব্যর্থতা ৷ শিক্ষক হিসাবে ব্যর্থতা ৷ একজন ভাল শিক্ষক তার ছাত্রের ভাল ছাড়া আর কিছু চায় না ৷ পাশে থাকেন ৷ থাকার চেষ্টা করেন ৷ বেলঘরিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন ৷

আরও পড়ুন,শিশুদের টিকা এলেই খোলা যাবে স্কুল, আশাবাদী এইমস প্রধান

করোনা আবহে অনলাইনে পড়াশোনা হচ্ছে ৷ বেলঘরিয়ার এই স্কুলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের উদ্যোগে 10 এপ্রিল থেকে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ তবে অনলাইনকে মাধ্যম করে কিংবা ইন্টারনেটেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমাবদ্ধ রাখেননি তাঁরা ৷ করোনার মধ্যেও প্রত্যেক ছাত্রের বাড়িতে যাওয়া ৷ তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা...পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া সবটাই করছেন ৷ আর অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা যারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না তাদের মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ৷ গত বছরের লকডাউনের পর থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাঁরা ৷

সম্প্রতি আরও একটা অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন বেলঘরিয়ার স্কুলের যতীনদাস স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ তাঁদের অর্থ দিয়ে একটি ফান্ড গড়ে তুলেছেন ৷ আর এই ফান্ডের টাকা দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা-সামগ্রী (বই, খাতা, পেন-পেনসিল, রং) কিনে দেওয়া হচ্ছে ৷ শুধু তাই-ই নয় ৷ স্কুল থেকে মিড-ডে মিল দিলেও তারা আলাদাভাবে নিজের টাকায় খাওয়ার জিনিসও পৌঁছে দিচ্ছেন ৷

শিক্ষার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিলেন অভিভাবকেরা

আরও পড়ুন,বকেয়া ফি মেটাতে না পারলেও নাম কাটা যাবে না পড়ুয়াদের, নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইনে অনেকেরই পড়া বুঝতে অসুবিধা হয় ৷ তার জন্যও চিন্তা-ভাবনা করেছেন তাঁরা ৷ বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে ছবি এঁকে বিষয়টি ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ৷ তাঁদের এই উদ্যোগের বিষয়ে স্কুলেরই এক শিক্ষক জানান, শুধু ছেলেদের সাহায্য করা না ৷ নিজেদেরও সাহায্য করা হচ্ছে ৷ ছেলেদের সঙ্গে দেখা করা যাচ্ছে ৷ তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলতে পারছি ৷ গত বছরও করেছিলাম ৷ এই বছরও সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগে খুশি অভিভাবকেরা ৷ কার্তিক দেব নামে একজন জানাচ্ছেন, আজ পর্যন্ত কোনও স্কুলে এরকম অভিনব প্রচেষ্টা দেখিনি ৷ এতে অনেক ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে ৷ তাদের মনোবল বাড়বে ৷ শিক্ষাক্ষেত্রে তারা অনেক এগিয়ে যাবে ৷

আরও পড়ুন,বন্ধ ক্লাস, স্কুলে এসে মিড-ডে মিল নিয়ে যাচ্ছে অভিভাবকরা

স্কুলে যাতে ড্রপ আউট না করে, কেউ যাতে পড়াশোনা ছেড়ে না দেয় সেই বিষয়েও তাঁরা লক্ষ্য রাখছেন ৷ ছাত্রছাত্রীদের, তাদের অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন ৷ তারা যাতে শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছেন তাঁরা ৷

Last Updated : Jul 2, 2021, 7:37 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details