বেলঘরিয়া, 2 জুলাই : বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়া... পড়া না পাড়লে ক্লাসরুমের বাইরে নিল ডাউন হবি... এত কম নম্বর, কাল মা-বাবাকে নিয়ে আসবি... শব্দগুলো, কথাগুলো চেনা ৷ কিন্তু, সব যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে ৷ করোনা আবহে স্কুল বন্ধ ৷ সেই চেনা ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলিতে জমছে ধুলো ৷ ছাত্র-ছাত্রী নেই ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বকুনি নেই ৷ গার্জেন কল নেই ৷ করোনার জন্য তো এখন সবটাই অনলাইন ৷ আর অনলাইন অনেক কিছু নষ্ট করে দিয়েছে ৷ বহু ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি করেছে ৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের কেউ কেউ পড়াশোনাই ছেড়ে দিয়েছে ৷ দিনমজুরের কাজ করছে ৷ তাহলে সেই সব ছেলেময়েদের ভবিষ্যৎ? প্রশ্ন উঠলেই একটা উত্তরও যেন ভেসে আসছে...শিক্ষক আছেন তো...
একটা ছাত্রের জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা যে কতটা তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় ৷ তাদের বকুনি, স্কেল বা ডাস্টার ছুড়ে মারা,শাস্তি দেওয়া...সবটার মধ্যে কিন্তু ভাল চাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই ৷ পড়াশোনা না করলে, রেজাল্ট ভাল না হলে তাদেরও যে ব্যর্থতা ৷ শিক্ষক হিসাবে ব্যর্থতা ৷ একজন ভাল শিক্ষক তার ছাত্রের ভাল ছাড়া আর কিছু চায় না ৷ পাশে থাকেন ৷ থাকার চেষ্টা করেন ৷ বেলঘরিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন ৷
আরও পড়ুন,শিশুদের টিকা এলেই খোলা যাবে স্কুল, আশাবাদী এইমস প্রধান
করোনা আবহে অনলাইনে পড়াশোনা হচ্ছে ৷ বেলঘরিয়ার এই স্কুলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের উদ্যোগে 10 এপ্রিল থেকে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ তবে অনলাইনকে মাধ্যম করে কিংবা ইন্টারনেটেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমাবদ্ধ রাখেননি তাঁরা ৷ করোনার মধ্যেও প্রত্যেক ছাত্রের বাড়িতে যাওয়া ৷ তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা...পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া সবটাই করছেন ৷ আর অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা যারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না তাদের মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন ৷ গত বছরের লকডাউনের পর থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাঁরা ৷
সম্প্রতি আরও একটা অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন বেলঘরিয়ার স্কুলের যতীনদাস স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ তাঁদের অর্থ দিয়ে একটি ফান্ড গড়ে তুলেছেন ৷ আর এই ফান্ডের টাকা দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা-সামগ্রী (বই, খাতা, পেন-পেনসিল, রং) কিনে দেওয়া হচ্ছে ৷ শুধু তাই-ই নয় ৷ স্কুল থেকে মিড-ডে মিল দিলেও তারা আলাদাভাবে নিজের টাকায় খাওয়ার জিনিসও পৌঁছে দিচ্ছেন ৷