হিঙ্গলগঞ্জ, 20 মে: এতদিন পড়ুয়াদের সমাজ গড়ার পাঠ দিয়েছেন তিনি । এ বার করোনা অতিমারিতে সচেতনার পাঠ দিতে নিজেই নেমে পড়লেন রাস্তায় । বেছে নিলেন একেবারে সুন্দরবনের মতো প্রত্যন্ত এলাকা । যেখানে এখনও মানুষের নিত্য অভাব অভিযোগ স্পষ্ট । রয়েছে অসচেতনতাও । তাই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে প্রতিদিন নিয়ম করে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি । দিচ্ছেন সচেতনতার পাঠ । বিলি করছেন মাস্ক এবং স্যানিটাইজার । এমনকী অসতর্ক মানুষকে নিজের হাতে মাস্কও পরিয়ে দিচ্ছেন । বসিরহাটের টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক তুষার মণ্ডল । করোনা মোকাবিলায় সচেতনতার মুখ হয়ে ওঠা এই শিক্ষকের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন সকলেই ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধ্বস্ত গোটা দেশ । লাগাতার বেড়ে চলেছে সংক্রমণের হার । মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমশ লম্বা হচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক । চিন্তায় রাখছে উত্তর চব্বিশ পরগনার পরিস্থিতি ৷ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে শহরের থেকে সংক্রমণের হার বেশি গ্রামাঞ্চলে ।
বসিরহাট জেলাতেও গড়ে একশোর বেশি মানুষ দৈনিক সংক্রমিত হচ্ছেন । বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির বেশকিছু এলাকা সুন্দরবন ঘেঁষা । সেখানেও থাবা বসিয়েছে করোনা । তারপরও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত হিঙ্গলগঞ্জের গোবিন্দকাটি, আদিবাসী পাড়া, হেমনগর, কালীতলা, যোগেশগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অসচেতন বলে অভিযোগ । এখনও অনেকেই মাস্ক ছাড়া দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাস্তাঘাটে । যা অত্যন্ত বিপজ্জনক ।
আরও পড়ুন:আজ বিকেলে নির্ধারিত হতে পারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ
এই বিপদের সময়ে বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি টাকি স্কুলের শিক্ষক তুষার মণ্ডল । অটো ভাড়া করে পঞ্চায়েতের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় নিজেই নেমে পড়েছেন সচেতনতার পাঠ দিতে । করোনা অতিমারিতে প্রতিদিন নিয়ম করে তিনি পৌঁছে যাচ্ছেন হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় । মাইকিং করে একদিকে যেমন সচেতনতার পাঠ দিচ্ছেন অন্যদিকে নিজের হাতেই অসতর্ক মানুষকে পরিয়ে দিচ্ছেন মাস্ক । বিলি করছেন মাস্ক, ভিটামিন ট্যাবলেটও । ব্ল্যাক ফাংগাসের ভয়াবহতা নিয়েও সতর্ক করছেন ওই শিক্ষক । যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ।
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, "মাস্টারমশাই যেভাবে সুন্দরবন এলাকার মানুষকে সচেতন করতে রাস্তায় নেমেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য । এতে সাধারণ মানুষের উপকারই হবে ৷"
পরাচ্ছেন মাস্ক, করছেন মাইকিং; সুন্দরবনে করোনা সচেতনতার পাঠ শিক্ষকের তবে যিনি অক্লান্তভাবে এই কাজ করে চলেছেন সেই শিক্ষকের কথায়,"করোনা অতিমারি থেকে বাঁচার একমাত্র অস্ত্রই হল বিধিনিষেধ মেনে চলা । এই বিষয়ে সুন্দরবনের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে । যাঁরা এখনও অসতর্ক, তাঁদের সতর্ক করতেই পথে নেমেছি । প্রতিদিন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় সচেতনতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে । সুন্দরবনের মানুষকে বলব, করোনার কোনও উপসর্গ থাকলেই তাঁরা যেন দেরি না-করে যোগেশগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান । সেখানে করোনার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন "। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে অযথা বাড়ির বাইরে না বেরনোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ৷