বারাসত, 27 অগাস্ট : চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ । ঘটনার জেরে উত্তেজনা বারাসত জেলা হাসপাতালে । মৃতার নাম রত্না দাস (35) । ঘটনার পরই পরিবারের লোকেরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় হাসপাতাল চত্বরে । বিক্ষোভ তুলতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ । যদিও অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে পুলিশের তরফে ৷
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভরতি হন ওই মহিলা । তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা সিজার করে প্রসব করার সিদ্ধান্ত নেন । সেই মতো দুপুরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে । কিন্তু অভিযোগ, অপারেশনের আগে তাঁকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় । তারপরই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর । ফলে আর অপারেশন করার ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকরা । চিকিৎসরা জানাচ্ছেন, ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তর করা হয় ICU-তে । সেখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্টসহ সমস্ত রকমভাবে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় ৷ কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় । রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ মৃত্যু হয় ওই মহিলার ।
এরপরই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরিবারের লোকেরা । দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে হাসপাতাল চত্বর । খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছায় পুলিশ ৷ আসেন বারাসত থানার IC দীপঙ্কর ভট্টাচার্য । প্রথমে রোগীর পরিজনদের কাছে আবেদন জানানো হয় ৷ কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৷ বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, একজনকে লাঠিপেটা করে তোলা হয় পুলিশের জিপে । পরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে ।
এই বিষয়ে মৃতার মা লক্ষ্মী দাস বলেন, "হাসপাতালে ভরতি করার পর মেয়ে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিল । সেই বিষয়ে বলতে গেলে নার্সরা দুর্ব্যবহার করে আমার সঙ্গে । বেরিয়ে যেতে বলে হাসপাতাল থেকে । কিছুক্ষণ পর মেয়ে ফের জামাইকে ফোন করে ৷ যন্ত্রণার কথা বলে । তখন হাসপাতালের ভিতর প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের বাধা দেয় । বলে ভিতর থেকে বললে তবেই অনুমতি মিলবে । অপারেশনের আগে মেয়ে সুস্থই ছিল । এরপরই ইঞ্জেকশন দেওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে । ভুল চিকিৎসা করেই মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে । আমরা চাই দোষী চিকিৎসকদের শাস্তি দেওয়া হোক ৷ "
প্রসূতির মৃত্যুতে বারাসত হাসপাতালে বিক্ষোভ, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পরিবারের মৃতার স্বামী বিশ্বজিৎ দাস বলেন,"বাড়িতে আমার ন'বছরের একটি সন্তান রয়েছে । তাকে কী বলব, কীভাবে তাকে বড় করব বুঝতে পারছি না ৷ চিকিৎসকদের গাফিলতিতে দু'জনকে হারালাম । পুলিশের কাছে আবেদন করেছি ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের সাজা দেওয়া হোক ।"
এদিকে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেছে বারাসত থানার পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে মৃতার পরিবারের লোকেদের কেবলমাত্র হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তিনি বলেন,"ওই প্রসূতির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ছিল । সেগুলোর চিকিৎসা কখনও পরিবারের লোকেরা করাননি । অন্তত তাঁকে দেখে আমাদের সেটাই মনে হয়েছে । তা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা প্রসূতিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন । তাই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ।"