গাইঘাটা, 20 জুলাই : 21 জুলাই 1993 । যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযানে রক্তাক্ত কলকাতা । একে একে খোয়া গেছিল 13টি প্রাণ । মৃত্যুমুখে ছিলেন স্বয়ং মমতা । তাঁকে গুলি করে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকর্তা । বড়কর্তার হুকুম মানেননি তৎকালীন পুলিশ কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল । বন্দুক তাক করেছিলেন বড়কর্তার দিকেই । পরিণাম ? মানসিক অত্যাচার শুরু হয় তাঁর উপর । 4 বছরের মধ্যে চাকরিও খোয়াতে হয়েছিল । সেদিনের বিরোধী নেত্রী আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু, সিরাজ়ুল ? চাকরি খুইয়ে আজ দিনমজুরি করেন । রয়ে গেছেন প্রদীপের নিচে, নিকষ অন্ধকারে ।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার ইছাপুর পঞ্চায়েতের ভদ্রডাঙার বাসিন্দা সিরাজুল হক মণ্ডল । দুই ভাই, তিন বোন । মাধ্যমিক পাশ করে মাত্র 21-এই পেয়েছিলেন চাকরি । তখন 1988 । পাঁচ ভাই-বোনের সংসার টানছিলেনও বেশ । আশার আলো দেখেছিলেন বাবা ইজ়রায়েল মণ্ডল, মা রূপভান । পাড়ায় প্রথম সরকারি চাকরি, মহল্লাও খুশি ।
দেখতে দেখতে কাটল পাঁচটা বছর । এল 1993 । 21 জুলাই । তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে মহাকরণ অভিযান । দাবি ছিল, 'নো এপিক, নো ভোট' । অর্থাৎ, নির্বাচনে সচিত্র ভোটারকার্ড চাই । ব্র্যাবোর্ন রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল মিছিল । বাম সরকারের পুলিশ সেই মিছিল বেশি দূর এগোতে দিল না । বাধা টপকে মিছিল এগোতেই পুলিশকর্তার হুকুম, "ফায়ার" । পুলিশের ভারী বুটের শব্দ আর বুক ফুঁড়ে দেওয়া গুলির নিশানায় রক্তাক্ত হল কলকাতার রাজপথ । মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে মমতারও । ওই এলাকাতেই ডিউটি করছিলেন সিরাজুল । ছিলেন SI নির্মল বিশ্বাস ও সার্জেন্ট প্রদীপ সরকার । পুলিশের বড়কর্তা নির্দেশ দিয়েছিলেন, "মমতাকেও মারো । খতম করে দাও ।" একাধিক বন্দুক তাক হয়েছিল তাঁর দিকে । রুখে দাঁড়ান নির্মল । বলে ওঠেন, "একজন নেত্রীকে এভাবে মারা যায় না ।" তাঁকে সঙ্গ দেন প্রদীপও । আর সিরাজুল ? নির্দেশের পরোয়া না করে উলটে বড়কর্তার দিকে বন্দুক তাক করেন । বলে ওঠেন, "মারব না । এই অত্যাচার সহ্য করা যায় না ।" সে যাত্রায় বেঁচেছিলেন মমতা । রক্তাক্ত যুব কংগ্রেস নেত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতাল । তবে, সিরাজুলরা পড়ে গেছিলেন বিষ নজরে । 'ছোটো মুখে বড় কথা' মানতে পারেননি বড়কর্তারা । তুচ্ছ কারণে শুরু হয় হেনস্থা । নির্মল ও সিরাজুল চাকরি খোয়ান । সিরাজুলের চাকরি গেছিল 1997-তে । কারণ ? তিনি নাকি অফিসে দেরি করে এসেছেন !
দেখতে দেখতে কেটেছে 22টা বছর । রোজ চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গোনেন সিরাজুল । অভাবের সংসারে আদালতে বেশিদিন লড়তেও পারেননি । নির্মল বিশ্বাস, আদালতের নির্দেশে চাকরি ফিরে পেয়েছেন । প্রদীপ সরকার প্রোমোশন ছাড়াই অবসর নিয়েছেন । কিন্তু, 22 বছর ধরে নিরন্তর ছোটাছুটি করেও কিছুই করে উঠতে পারেননি সিরাজুল ।