বারাসত, 5 মার্চ: ক্লাসরুম থেকে শিক্ষকদের বসার জায়গা । রয়েছে সবকিছুই । নেই শুধু পর্যাপ্ত পড়ুয়া । যার জেরে প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারি মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় 8 হাজার 207টি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে । এরমধ্যে উত্তর 24 পরগনা (North 24 Parganas News) জেলাতেই রয়েছে প্রায় 540টি স্কুল । সংখ্যাটাই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে ! তবে, এতগুলো স্কুল একসঙ্গে বন্ধ হয়ে গেলে পড়ুয়াদের সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মত শিক্ষা মহলের একাংশের (Schools Closed)।
তাই স্কুল বন্ধের তালিকা প্রকাশ হতেই চরম হতাশা ধরা পড়ল অভিভাবক থেকে স্থানীয় মানুষের মধ্যে । তাঁরা চাইছেন, স্কুল বন্ধ না করে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হোক সরকার । যাতে বাঁচানো যায় দীর্ঘদিনের এই স্কুলগুলিকে । এমনিতেই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একচেটিয়া দাপটে ধুঁকছে রাজ্যের বেশিরভাগ বাংলা মাধ্যম স্কুল । তার উপর সরকারের স্কুল বন্ধের মনোভাবে আখেরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেই । এমন আশঙ্কা ঘিরেই এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি শিক্ষক বদলি-সহ একাধিক মামলায় রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, "সবাই যদি গ্রামের স্কুল ছেড়ে বদলি হয়ে শহরের স্কুলে চলে যায়, তাহলে গ্রামের স্কুলগুলি চলবে কী করে ! সেই সঙ্গে তিনি শিক্ষকদের বদলি নীতিরও পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন রাজ্য সরকারকে ।
এরপরই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে বেহাল দশা প্রকট হয়ে ওঠে রাজ্যের অধিকাংশ প্রাইমারি স্কুলগুলির । সূত্রের খবর, সমীক্ষায় দেখা যায় রাজ্যের অন্তত 8 হাজার 207টি প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা 30-এর গণ্ডি পার করতে পারেনি । শুধু তাই নয়, শিক্ষক সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য । কোথাও দু'জন । আবার কোথাও একজন প্যারাটিচার নিয়েই কোনও রকমে চলছে স্কুল ।
এই অবস্থায় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের স্কুল বন্ধের তালিকা চিন্তা বাড়িয়েছে পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও । সেই তালিকায় যে 24টি জেলার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তাতে উত্তর 24 পরগনা জেলা রয়েছে চতুর্থ স্থানে । সবার প্রথমে রয়েছে রাঢ় বঙ্গের জেলা বাঁকুড়া । দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরেক রাঢ় জেলা পুরুলিয়া । এরপরই রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর । জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, উত্তর 24 পরগনা জেলায় যে 540টি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে, তারমধ্যে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা 403 । আপার প্রাইমারি রয়েছে 136টি । বাকি একটি উচ্চ মাধ্যমিক ৷
জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকই কমবেশি রয়েছে এই তালিকায় । বাদ যায়নি জেলার সদর শহর বারাসতও । সেখানেও বেশ কয়েকটি প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে । এমনই কয়েকটি প্রাইমারি স্কুলের খোঁজ পেয়ে সেখানে ঢুঁ মেরেছিলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি । কিন্তু, সেখানে স্কুলের দিদিমণিরা বেহাল দশা লুকানোর মরিয়া চেষ্টা চালানোর কোনও কসুর বাকি রাখলেন না । প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজিই হলেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা ।
এ দিকে, স্কুলছুট কমাতে ও পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে রাজ্য সরকার মিড-ডে মিল-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে ঠিকই, কিন্তু তারপরও প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারি স্কুলগুলিতে দিনদিন যেভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে ৷