সন্দেশখালি, 8 মে : যশের দগদগে ক্ষত এখনও শুকোয়নি সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের । তারই মধ্যে আবারও ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'-র ভ্রুকুটি (Sundarbans are in trouble due to Asani cyclone)। তার জেরে রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের । বিশেষ করে সুন্দরবন ঘেঁষা নদী বাঁধগুলির শোচনীয় অবস্থা দেখে রীতিমতো তটস্থ উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি-সহ একাধিক ব্লকের উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । তাই 'অশনি'-র প্রভাবে কখন কি হয়, তা ভেবেই শঙ্কিত নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা । যদিও 'অশনি'-র সতর্কবার্তায় ইতিমধ্যে আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে । নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও ।
বছর খানেক আগে ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডবলীলার সাক্ষী থেকেছিল সুন্দরবনবাসী । সেই সময় যশের তাণ্ডবে কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকা । বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে নদী তীরবর্তী একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় বানভাসি হতে হয়েছিল সুন্দরবনবাসীকে । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল চাষের জমি এবং বিঘার পর বিঘা মাছের ভেড়িও । সেই স্মৃতি এখনও টাটকা সুন্দরবনবাসীর । তারই মধ্যে বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবারও ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'-র অশনি সংকেত । আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । আতঙ্কে ঘুম উড়ছে রাতের ।
আরও পড়ুন :12 ঘণ্টায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে অশনি, উপকূলের জেলাগুলিতে জারি সতর্কতা
ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে হাওয়া অফিস । হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, দক্ষিণ আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপ রবিবার সকালেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে । বিকেলের মধ্যেই তা আরও শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । রাত থেকেই সেটি ক্রমশ এগোবে স্থলভাগের দিকে । মঙ্গলবার তা আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অন্ধ্র ও ওড়িশার উপকূলে । 'অশনি'-র প্রভাব সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে না পড়লেও এর জেরে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী সব জেলাতেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে । ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'-র মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে । বিশেষ করে নজর রাখা হচ্ছে সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধগুলির ওপর । দুর্বল বাঁধ মেরামতের কাজে ইতিমধ্যে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে । তাতেও আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ।
অশনির ভ্রুকুটিতে তটস্থ সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট মহকুমার বিস্তৃর্ণ অংশে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক নদী । বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল, কালিন্দি-সহ ছোট-বড় বেশকিছু নদীর বাঁধ এখনও দুর্বল । যশের তাণ্ডবের পর ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ মেরামতের আশ্বাস প্রশাসন দিলেও অধিকাংশ জায়গায় তা মেরামত করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । কোথায়ও বালির বস্তা, মাটি, বাঁশ দিয়ে কোনওরকমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে ঠিকই । তবে 'অশনি'-র প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত এবং কোটালের জেরে নদীতে জলোচ্ছ্বাস হলে সেই বাঁধ কতক্ষণ স্থায়ী থাকবে, তা ভেবেই দুশ্চিন্তায় আতঙ্কে প্রহর কাটছে সুন্দরবন ঘেঁষা সন্দেশখালি 1 ও 2, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ ও হাসনাবাদ ব্লকের ন্যাজাট, সেহেরা-রাধানগর, দক্ষিণ কালিনগর, ভান্ডারখালি, সরদারপাড়া, তুষখালি, হেমনগর-সহ নদী তীরবর্তী একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের । তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছড়ে পড়ার আগেই নদী বাঁধ মেরামতে প্রশাসন আরও তৎপর হোক সেটাই চাইছে সুন্দরবনবাসী ।