খড়দা, 20 নভেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ৷ তারপরও যেন 'রেফার' রোগ কিছুতেই সারছে না এ রাজ্যে । ফের 'রেফার' রোগের শিকার হলেন খড়দার এক মহিলা । চার চারটি হাসপাতাল ঘুরেও তাঁর ঠাঁই হল না কোনও হাসপাতালে । রবিবার দিনভর হয়রানির শেষে কোথাও ভর্তি করাতে না পেরে তনুশোভা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন পরিবারের লোকেরা । চিকিৎসা না পেয়ে কোনও মতে বাড়িতেই রাত কাটিয়ে দেন স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ওই রোগী । এরপর টনক নড়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতার । তাঁর তৎপরতায় অবশেষে সোমবার বিকেলে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয় খড়দার বলরাম সেবা মন্দির হাসপাতালে । আপাতত এইচডিইউ বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাঁকে । তাঁর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাবতীয় পদক্ষেপ করছে বলে খবর সূত্রের ।
জানা গিয়েছে, খড়দার আজমতলার বাসিন্দা বছর 36-এর তনুশোভা বন্দোপাধ্যায় । রবিবার ভোররাতে আচমকাই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বাড়িতে ।মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা । সঙ্গে ছিল খিচুনি । তরুণীর শরীরে এমন উপসর্গ দেখে চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের সদস্যরা । শেষে তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালে । কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়, ওই মহিলার সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে । যার চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই সেখানে । ফলে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ।
এরপর রোগীকে সেই হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে পরিবারের লোকেরা ছোটেন কামারহাটির সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ।সেখানে পৌঁছে রোগীর পরিবার জানতে পারেন, তনুশোভার সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়নি । স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হওয়ার জেরে তাঁর খিচুনির উপসর্গ দেখা দিচ্ছে । আলট্রাসনোগ্রাফি করে চিকিৎসকদের তরফে এমনটাই জানানো হয় পরিবারের সদস্যদের । সেখানে কিছুক্ষণ রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলা হয় যে, সেখানে স্নায়ুরোগের কোনও চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই । এই বলে রোগীকে কলকাতার কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় সাগরদত্ত হাসপাতাল ৷
এরপর রোগীকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা । কিন্তু, সেখানে পৌঁছনোর পর অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের । বলা হয়, রেফার করার কোনও লিখিত কাগজ নেই । তাঁরা ইচ্ছা করে রোগীকে সেখানে নিয়ে গিয়েছেন । এই অজুহাতে রোগীকে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । তিনটি হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরেও কোনও চিকিৎসা না পেয়ে শেষমেশ বাঙুর ইনষ্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে রোগীকে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা । কিন্তু, সেখানেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের । তিন তিনটি মেডিক্যাল কলেজ এবং একটি সরকারি হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসার কোনও সুরাহা না মেলায় রবিবার রাত দুটো নাগাদ রোগীকে খড়দার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে তাঁর পরিবার ৷