বারাসত, 4 ডিসেম্বর : 20 বছরের বিধায়ক । সাড়ে 9 বছর মন্ত্রী । জনসমক্ষে তাঁকে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । তবে সম্প্রতি আচরণ বদলে গিয়েছে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের । সাংবাদিক বৈঠকে বারবার তিনি মেজাজ হারাচ্ছেন । তাই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, হতাশা থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন ।
বাম শাসনের ভরা বাজারেও 2001 সালে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থেকে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । পরের বার আবার । 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে গাইঘাটা কেন্দ্রটি তফশিলি সংরক্ষিত হয়ে যায় । সেবার জ্যোতিপ্রিয় পাশের হাবড়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন । খাদ্য দপ্তরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পান । গত সাড়ে 9 বছর ধরে তিনি হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী । সঙ্গে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি । কাজের বিপুল চাপ থাকলেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জনসমক্ষে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । কিন্তু গত দু'তিন মাসে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ বিপুল বদলে গিয়েছে । ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বিদ্রোহ করেছেন । তালিকায় রয়েছেন আরও কয়েকজন বিধায়ক । রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য দলত্যাগ করে বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছেন । জেলার প্রায় সব ক'টি পৌরসভার বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর জল মাপছেন । তারই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জ্যোতিপ্রিয়র খাসতালুকে ঢুকে বাংলাকে গুজরাত করার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন । সব মিলিয়ে টলমল করছে জ্যোতিপ্রিয়র সংগঠন । জেলা তৃণমূলের নেতারা বিশ্বাসী সাংবাদিককে কাছে পেলে জিজ্ঞাসা করছেন, "ভাই সরকার থাকবে তো?" তাঁর হয়ে দলের অন্তর্ঘাতের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরাও মন্ত্রীকে টু দা পয়েন্ট রিপোর্টিং করছেন । বিচক্ষণ জ্যোতিপ্রিয় সব খবর রাখেন । বিরোধীর বলছে, তাতেই তিনি বিচলিত হয়ে পড়ছেন । জেলার সাংবাদিকরা দল নিয়ে প্রশ্ন করলে জ্যোতিপ্রিয় মেজাজ হারাচ্ছেন । যেমন- 2 নভেম্বর বামনগাছির ছোটো জাগুলিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানের পরে তিনি এক সাংবাদিকের নাম ধরে সরাসরি আক্রমণত্মক কথা বলেন । রবিবার জ্যোতিপ্রিয় হাবড়ার কুমড়া-কাশীপুরে তফশিলি শংসাপত্র বিলির একটি সরকারি শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি হাত দিয়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নামিয়ে দেন । তারপর সাংবাদিকদের তিনি নানা অসংলগ্ন কথা বলেন । মন্ত্রীর আচরণে হতবাক হয়ে যান তাঁর দলের নেতা-কর্মীরাও ।
বুধবার মধ্যমগ্রামেও দল নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে । এই নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে কটাক্ষ করল বিজেপি । জ্যোতিপ্রিয় প্রায়ই সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন । এখন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুঝতে পেরেছেন, 2021 সালে তাঁর ও তাঁর দলের বিপর্যয় অনিবার্য । তাই হতাশা থেকে তিনি বারবার মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। ওনার এখন সত্যিই চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন।"