পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Bengal Football Players: দেশের হয়ে খেলেছে লিগ, পেট চালাতে শ্রমিকের কাজ করে নাবালক দুই ফুটবলার ভাই - Minor Football players of Bagdah

Footballer Brothers: দেশের হয়ে লিগ খেলার পরও পড়াশুনা ও সংসার চালাতে শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে নাবালক দুই ফুটবলার ভাইকে ৷ ঘটনাটি উত্তর 24 পরগনার বাগদার ৷

Footballer brothers
ফুটবল খেলোয়াড়

By

Published : Aug 19, 2023, 2:42 PM IST

বাগদা, 19 অগস্ট: খেলেছে ন্যাশনাল-সহ একাধিক ফুটবল লিগ । তবে এখনও পেট চালাতে বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে নাবালক দুই ফুটবল খেলোয়াড় ভাইকে ৷ তবুও ছেঁড়া কাথায় শুয়েই তারা স্বপ্ন দেখে সুনীল ছেত্রীর মতো দেশের জার্সি গায়ে জাতীয় স্তরে খেলার । কিন্তু বাস্তবটা বড্ড কঠিন ৷ মাঠের থেকেও জীবনের লড়াইটা অনেক বেশি বড় তাদের ৷ তবে হাতে হাত রেখে প্রতিদিন সেই কঠিন লড়াই লড়ে যাচ্ছে 17 ও 15 বছর বয়সি দুই ভাই । তারা উত্তর 24 পরগনার বাগদা ব্লকের মালপোতা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা । এলাকায় ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিতি তাদের । তবে কখনও রাজমিস্ত্রির লেবারের কাজ করে আবার কখনও বা মাছ ধরার জাল টেন পেট চালাতে হয় দুই ভাইকে । তাদের নিজেদের স্বল্প আয়েই চলে পড়াশোনা ও খেলা । শত বাধা কাটিয়ে দেশের হয়ে ফুটবল খেলাই লক্ষ্য মেসি ও রোলান্ড ভক্তদের ।

2023 সালে ইন্দো নেপাল ইনভাইটেশন নটারন্যাসনাল চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (আন্ডার 18) খেলেছে 17 বছরের খোলায়াড়টি ৷ এই বছরই সে নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট লিগেও খেলেছে । 2006 সালে অল ইন্ডিয়া যুব লিগ-সহ একাধিক লিগ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে । পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান । কিছুদিনের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন মা । সেই থেকে দুই ভাই মামার বাড়িতে দিদা সন্ধ্যা রায়ের কাছে বড় হয়েছেন । তিনি লোকের বাড়িতে কাজ করে দুই ভাইকে বড় করেছেন । বর্তমানে সন্ধ্যার বয়স সত্তরের দোরগোড়ায় । ঠিকমতো তিনি কাজ করতে পারেন না । পারেন না দুই নাতিকে সঠিক সময় রান্না করে দিতে ।

আরও পড়ুন:জাগলিংয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডের 3টি খেতাব জয় জাগলার দীপক রায়ের

তিনি জানান, ওদের মা বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছে । দুই ভাই ফুটবল খেলতে ভালোবাসে কিন্তু টাকার অভাবে ভালো খেলার সরঞ্জাম কিনতে পারে না । তাঁকে মা বলে ডাকে দুইভাই । ওদের যত আবদার তাঁর কাছে ৷ কিন্তু লোকের বাড়ি কাজ করে যে টুকু পারেন তিনি করেন । দুই নাতির লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সন্ধ্যা রায় ।

তিনি বলেন, "কোন দিন পান্তা ভাত খেয়ে কোন দিন আবার না খেয়ে 40 মিনিট সাইকেল চালিয়ে ট্রেন ধরে কলকাতার মাঠে প্র্যাকটিস করতে যায় বড় নাতি ।"

তাঁর কথায়, বড়িতে একটা জলের কল ও পায়খানা বাথরুমও নেই । ঘরের অবস্থাও ভালো না । বৃষ্টি হলে জল পরে । সরকার থেকে কোন সুযোগ সুবিধা তাঁরা পায়নি ।

খোলায়াড় দুই ভাই বলে, "মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয় । পাগলের মত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় । চেষ্টা করেও তাঁর চিকিৎসা করাতে পারিনি । কেউ সাহায্যেরও হাত বাড়িয়ে দেয়নি । স্কুলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে নানা কটুক্তি শুনতে হয় । সব চুপকরে শুনি, রাগ হলে সেই রাগ ফুটবলের উপরে দেখাই ।"

দুই ভাই এক সঙ্গে দেশের হয়ে ফুটবল খেলবে এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করবে সেই অদম্য জেদ প্রতিদিন লড়াইয়ের হাতিয়ার । তাদের লড়াইয়ে কথা অজানা নয় এলাকাবাসীর । সুকদেব রায় নামে এক যুবক বলেন, "দুই ভাই জীবনে খুব লড়াই করেছে । এমনও দিন গিয়েছে না খেয়ে থেকেছে দুই ভাই । ওদের ইচ্ছা দেশের হয়ে ফুটবল খেলবে । আমরাও চাই ওরা বড় ফুটবল খেলোয়াড় হোক । দেশের নাম আমাদের গ্রামের নাম উজ্জ্বল করুক ।"

আরও পড়ুন:ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের খেতাব জয় জাগলার সরোজের, এবার লক্ষ্য গিনেস বুকে নাম লেখানো

দুই ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ।

তিনি বলেন, "এদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে । যদি তারা চায় তাহলে তাদের জন্য কলকাতায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে ।" একই সঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, "পঞ্চায়েতে নতুন বোর্ড গঠন হয়ে গেলে তারা যাতে দ্রুত ঘর পায়ে সে বিষয়েও দেখা হবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details