বারাসত, 3 ফেব্রুয়ারি: মুখ্যমন্ত্রী-বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সংঘাতকে 'নাটক ও তামাশা' বলে কটাক্ষ করলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (CPM State Secretary Md Salim) । বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের 19তম রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর 24 পরগনার বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, "জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল থাকার সময়েও রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের কথা বলা হয়েছিল। তোমরা যাকে সংঘাত বলছ, আমি তাঁকে নাটক বলছি। এগুলো সব তামাশা।"
এরপরই বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও মুখ্যমন্ত্রীকে একযোগে আক্রমণ করে তিনি বলেন, "বিদ্যুৎ চক্রবর্তী রাবীন্দ্রিক ভাবনাকে ধ্বংস করে বিশ্বভারতীর গরিমা নষ্ট করছেন, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করছেন। একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের মতো উপাচার্যদের নিয়োগ করে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একই অবস্থা করেছেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও নিজের লোককে উপাচার্য পদে বসিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাহলে এখানে সংঘাত কীসের? এ বলে আমায় দেখ! ও বলে আমায় দেখ!"
সেলিমের মতে, "এই ইস্যুতে এটা বলা যেতে পারে ও (বিদ্যুৎ চক্রবর্তী) এত চুরি করেছে! আমি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এত চুরি করেছি। আমি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এত লোকের চাকরি খেয়েছি। ও (বিদ্যুৎ চক্রবর্তী) এত লোকের চাকরি খেয়েছে। এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতে পারে। তাই বলে এটাকে সংঘাত বলা যায় না।" অন্যদিকে, সংঘাতের আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে শান্তিনিকেতনে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনাও করেছেন। বৈঠকের পর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের পাশে কেউ না থাকলেও তিনি রয়েছেন তাঁদের পাশেই।
এই বিষয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "ওনাকে পাশে থাকতে হবে না। তৃণমূল কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল)-কে দিয়ে একসময় বিশ্বভারতীর ভিতরে দখলদারি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। ওখানে এসএফআই এবং বামপন্থীরা রয়েছে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।অধ্যাপক সমিতি রয়েছে। তাঁরা লড়াই করছে। সেই কারণে অধ্যাপকদের একাংশের ওপর জুলুমবাজি চলছে। শায়েস্তা করতে তাঁদের কাউকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড। আবার কাউকে বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়েছে। এই লড়াই দীর্ঘদিনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বভারতীর গভর্নিং বডিতে ছিলেন, তখনও ছাত্র-শিক্ষক বিরোধী কার্যকলাপ চলেছে সেখানে।
আরও পড়ুন:বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক, বিষয়টি সংসদে উত্থাপনের নির্দেশ মমতার
তাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও আন্দোলনের পক্ষে থাকেন না। আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেন। দু'দিন পর নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হয়ে গেলে দেখবেন, মুখ্যমন্ত্রী-বিশ্বভারতীর উপাচার্য দু'জনেই পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ।" অন্যদিকে, শেয়ার বাজার ধসে কেন্দ্রীয় সরকারের পতন এবং দেউচা পাঁচামি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি সিপিএমের এই নেতা। প্রসঙ্গত, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক ও পড়ুয়া-অধ্যাপকদের একাংশের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নাম না-করে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমতো নিশানা করেন তাঁকে। প্রত্যুত্তরে পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেনজির আক্রমণ করা হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে। যা ঘিরে নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। যদিও একে নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।