সন্দেশখালি, 17 ডিসেম্বর: ছিল মোটা মাইনের চাকরির হাতছানি! ছিল আরও অনেক লোভনীয় কাজের প্রস্তাব! কিন্তু, সাধারণ মানুষের সেবার আশায় মোটা বেতনের চাকরি ছাড়তে দু'বার ভাবেননি তিনি। কোনও গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে আজও গরিব মানুষের সেবা করে চলেছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তিনি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার এমবিবিএস চিকিৎসক ফারুক হোসেন।
শুধু নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই নয়!গ্রামের অনাথ আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি মিশন স্কুলও খুলেছেন সেখানে। যেখানে গরিব ছেলে-মেয়েরা বিনামূল্যে শিক্ষা পেয়ে আসছে। সমাজের প্রতি চিকিৎসকের এই কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে চর্চায় এসেছে। সাড়া ফেলেছে গোটা সুন্দরবন অঞ্চলেও ।যদিও এসব নিয়ে এতটুক ভাবতে নারাজ ডাক্তার বাবু। বরং তিনি এভাবেই গরিব মানুষের পাশে থেকে আজীবন সেবা করে যেতে চান।
ডাক্তার ফারুক হোসেনের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে এসে হাসনা বানু বিবি বলেন, "সন্দেশখালি-সহ সুন্দরবন অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষই গরিব। এখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথেষ্ট পিছিয়ে। তাই, ডাক্তার ফারুক হোসেন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে সেবা করে চলেছেন। ওনার কাছ থেকে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি। তাই, উনি আমাদের কাছে ভগবানের মতো।"
যদিও, নিজেকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ চিকিৎসক ফারুক ৷ তাঁর কথায়, "মানুষ আমাকে ভগবান হিসেবে মনে করলেও আমি একজন রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং কর্তব্য থেকেই এই পরিষেবা দিয়ে আসছি। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর। ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখানো তো দূরের কথা! তাঁদের ওষুধ কেনার সামর্থ্যটুকুও নেই। তাই, যতদিন বাঁচব ততদিন এভাবেই সেবা দিয়ে যাব ৷"
তবে, চিকিৎসক হওয়ার এই পথ মসৃণ ছিল না ৷ জানা যায়, সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লকের শাঁকদহ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। বাবা ছিলেন পেশায় দিনমজুর। ফলে, পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। তবে সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে 2012 সালে বাঁকুড়া সম্মেলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করে ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত হন ফারুক হোসেন। সেই থেকেই শুরু ৷ প্রথম দিকে তিনি বীরভূমের দুবরাজপুরের একটি সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন কেবলমাত্র সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের কথা ভেবে।