নেশা করে বিবিকে অত্যাচার, মাথা ন্যাড়া করে ব্যক্তিকে গ্রাম ঘোরাল সালিশি সভা
সালিশি সভায় ওই যুবককে প্রথমে মারধর করা হয় । পরে মাথা ন্যাড়া করে গ্রাম ঘোরানোর নিদান দেয় মাতব্বরেরা । সেই মতো গ্রাম ঘোরানোর আগে রাস্তার লাইটপোস্টে হাত ও কোমর দড়ি দিয়ে বেঁধে চলে মাথা ন্যাড়া করা । তারপর ন্যাড়া অবস্থায় গ্রাম ঘোরানো হয় বলে অভিযোগ ।
শাসন, 9 অগাস্ট : রাস্তার ধারে লাইটপোস্টের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে এক যুবককে । শরীরে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট । একজন তাঁর মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছে । এরপর মাথা ন্যাড়া করে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয় তাঁকে । এই ঘটনা দেখার জন্য চারিদিকে মানুষের ভিড় । কিন্তু প্রতিবাদ করার কেউ নেই । উলটে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে সবাই । কেউ কেউ আবার ফোনে ভিডিয়ো করছে । এ এক মধ্যযুগীয় বর্বরতা । অভিযোগ, সালিশি সভার নির্দেশেই তাঁর উপর এই অত্যাচার করা হয় । উত্তর 24 পরগনার শাসনের ঘটনা । ঘটনায় নাম জড়িয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও ।
শাসনের দাদপুর পঞ্চায়েতের পাকদহ গ্রামে বিবিকে নিয়ে থাকেন আবদুল কালাম । অভিযোগ, প্রায়ই নেশা করে বিবির উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন তিনি । এই অভিযোগে গ্রামে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার সালিশি সভাও বসেছিল । সেই সময় নিজের দোষ কবুল করে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে মুচলেকা দিয়েছিলেন তিনি । স্থানীয়দের একাংশ জানিয়েছে, তারপরেও অত্যাচার চলতে থাকে সমানে । শুক্রবারও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই যুবক মারধর করেন বিবিকে । এরপরই আক্রান্ত জ্যোৎস্না বিবি শওহরের বিরুদ্ধে নালিশ করেন গ্রাম কমিটিকে । গ্রাম কমিটির উদ্যোগে শনিবার দুপুরে সালিশি সভা বসে ওই যুবকের বাড়িতে । সেখানে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন শাসকদলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাও ।
এই বিষয়ে আক্রান্ত জ্যোৎস্না বিবি বলেন, "শওহর নেশা করে প্রায়ই অত্যাচার করত আমার উপর । বারবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । তাই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীদের দ্বারস্থ হই ।"
এ দিকে,যার বিরুদ্ধে বিবিকে মারধরের অভিযোগ সেই আবদুল কালাম বলেন, "কারণে-অকারণে মাঝেমধ্যেই বাপের বাড়ি চলে যেতেন বিবি । বাপের বাড়ি যাওয়া আটকাতেই মারধর করা হয়েছে । সেই জন্য় আমাকে পোস্টে বেঁধে-মাথা ন্যাড়া করে গ্রাম ঘোরানোর নিদান দেয় গ্রামের মাতব্বররা । সেই সময় মারধরও করা হয়েছে । ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছি ।"
অন্যদিকে, সালিশি সভায় হাজির থেকে যুবককে শাস্তির নিদান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা শাহজাহান আলি, গ্রাম কমিটির তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ জামালউদ্দিন-সহ শাসক দলের আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে । যদিও সালিশি সভায় হাজির থাকার কথা অস্বীকার করে তৃণমূলের গ্রাম কমিটির সভাপতি মহম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, "ওই যুবক এর আগে বিবিকে অত্যাচারের কথা স্বীকার করে কথা দিয়েছিলেন ফের এই ধরনের ঘটনা ঘটলে মাথা ন্যাড়া করে যেন গ্রাম ঘোরানো হয় । সেই মতো গ্রামবাসীরা আমার অবর্তমানে এই কাণ্ড হয়ত ঘটিয়ে ফেলেছে ।" ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।