নিউটাউন (উত্তর 24 পরগনা), 9 জানুয়ারি: সোমবার নিউটাউনের কনভেনশন সেন্টারে কলকাতায় জি-20 বৈঠকের (G20 Meeting) সূচনা হয়ে গেল । প্রথম দিনই দেশ এবং বিদেশের আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । বুধবার পর্যন্ত চলবে জি-20 সম্মেলনের (G20 Summit) বৈঠক । বৈঠকে ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ।
এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের বাংলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । প্রথম বক্তব্যেই তাঁর গলায় বসুধৈব কুটুম্বকমের সুর । তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি আপনারা আমাদের পরিবারের সদস্যের মতোই । আমি দেশে দেশে বিভেদে বিশ্বাস করি না । আমি মনে করি গোটা বিশ্ব আমার মাতৃভূমি । যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে এসেছেন আপনাদের খোলা মনে স্বাগত জানাচ্ছি । বাংলার মাটিকে নিজের বলেই ভাবুন ।’’
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী 14 মিনিটের কিছু বেশি সময় বক্তৃতা করেন ৷ সেখানে তিনি বাংলার পরিকাঠামোর কথা তুলে ধরেন । বাংলা যে এই মুহূর্তে গোটা দেশের উন্নয়নের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে, তাও জানান তিনি ।
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে করোনাকালে (Covid Pandemic) কীভাবে তাঁর সরকার অতিমারীর সঙ্গে লড়াই করার পরও রাজ্যের জিডিপির (GDP) বৃদ্ধি অক্ষুন্ন রেখেছে । এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোভিড কালের 2 বছরে সব দেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে । আমাদের রাজ্যও তার থেকে ব্যতিক্রম নয় । কিন্তু আমাদের রাজ্যের জিডিপি বেড়েছে 4 গুণ ।’’ একই সঙ্গে তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়েও রাজ্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন ৷ এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘‘করোনাকালে আমরা 1.2 কোটি চাকরির ব্যবস্থা করতে পেরেছি । কারণ, আমরা কৃষক, মহিলাদের এসময়ে আরও আর্থিক ভাবে শক্তিশালী করতে পেরেছি । ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং কুটির শিল্প সেক্টরে আমরা রয়েছি সারা দেশে এক নম্বরে । এই সেক্টরের জন্যই এই বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ।’’
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন এই মঞ্চ থেকে তাঁর সামাজিক প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরতে ভুল করেননি মুখ্যমন্ত্রী । শুধু তাই নয়, তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলি যে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে, তাও এদিন এই মঞ্চ থেকেই তুলে ধরেছেন মমতা । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের সরকার রাজ্যের সব মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দেয় । রাজ্যের সব মেয়েদের দেওয়া হয় এডুকেশনাল স্কলারশিপ । মেয়েদের এই স্কিমের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্মানও পেয়েছি ।’’
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মঞ্চ থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথাও তুলে ধরেছেন । নারী ক্ষমতায়নকে (Women Empowerment) মাথায় রেখে তিনি তথা তাঁর সরকার যে মহিলাদের ব্যাংক অ্য়াকাউন্টে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রত্যেক মাসে মাসে দিচ্ছে, সে কথাও তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই মঞ্চ থেকেই এদিন 'দুয়ারে সরকার' প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী ।
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি জানান, সরকারি পরিষেবা কে সরাসরি মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই প্রকল্প নিয়েছে তাঁর সরকার । ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে সেরা পুরস্কার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । তিনি আরও জানান, স্কুল পড়ুয়াদের সাইকেল এবং স্মার্টফোন দেওয়া হয় এই রাজ্যে । বলেন, ‘‘জাতি এবং ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই স্কলারশিপ দেওয়া হয় ।’’ এদিন রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পের সাফল্যের কথাও বিশেষ ভাবে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী ।
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গত, জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত এই বৈঠক আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ৷ চলবে বুধবার পর্যন্ত । এই সম্মেলনকে সামনে রেখেই সেজে উঠেছে শহর কলকাতা । বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বাইপাস, সর্বত্রই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে সেজে উঠেছে । কনভেনশন সেন্টার সাজানো হয়েছে এই সম্মেলনে যোগদানকারী 12টি দেশের পতাকায় । কোনও সন্দেহ নেই এই সম্মেলন শুধু রাজ্যের জন্য নয়, দেশের জন্য খুব গর্বের । তাই রাজনৈতিক বৈরিতা থাকলেও আয়োজনে কোনোরকম খামতি রাখছে না রাজ্য সরকার ।
জি-20 সম্মেলন সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সায়েন্স সিটি সংলগ্ন একটি হোটেলে এই কনভেনশনের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা । জি-20 সদস্য দেশগুলি ছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, নাবার্ড, এবং আইএমএফ-এর মতো সংস্থার প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছেন এই বৈঠকে । আজ প্রথম দিনের বৈঠকের পরে, অতিথি-অভ্যাগতদের জন্য গঙ্গাবক্ষে ক্রুজে নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে । মঙ্গলবার নিউটাউনের পালকুটিরে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে । সেখানে ব্যবস্থা থাকছে মনজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও । এছাড়া যতদূর জানা যাচ্ছে বুধবার, বৈঠকে যোগ দেওয়া অতিথিদের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial) ঘুরিয়ে দেখানো হবে । একই সঙ্গে থাকবে স্ট্রিট ফুড উপভোগ করার সুযোগ ।
আরও পড়ুন:জি-20 গোষ্ঠীর সভাপতিত্বে ভারত, স্মরণীয় রাখতে দেশের 100টি সৌধে জ্বলল আলো